The most-visited বাংলা Wikipedia articles, updated daily. Learn more...
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ( পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ই মার্চ ১৯২০–১৫ই আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এসকল কারণে তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી উচ্চারণ )(মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী) বা মহাত্মা গান্ধী (২রা অক্টোবর, ১৮৬৯ - ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮) একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
বাংলাদেশ (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা "দিবস" পালিত হয়। এই সকল বৈশ্বিক দিবস বা বিশ্ব দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবসসমূহের তালিকা এই পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে - কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা ক্ষেত্র বিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা।
রূপান্তরিত লিঙ্গ-এর ব্যক্তিবর্গ (ইংরেজি: Transgender, ট্রান্সজেন্ডার) হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তবে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়। 'এছাড়াও রূপান্তরিত লিঙ্গ একটি শ্রেণিগত পরিভাষা: যাতে এমন ব্যক্তিদেরও যোগ করা হয় যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জন্মগত লিঙ্গচিহ্নএর বিপরীত (রূপান্তরকামী পুরুষ বা রূপান্তরকামী নারী), এছাড়াও এতে এমন শ্রেণীও অন্তর্ভুক্ত হয় যারা স্পষ্টভাবে নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ নয় (জেন্ডারক্যুয়্যার বা বিচিত্রলিঙ্গ, যেমন দ্বৈতলিঙ্গ, সর্বলিঙ্গ, লিঙ্গতরল, বা অলিঙ্গ)। রূপান্তরিত লিঙ্গের অন্যান্য সংজ্ঞার মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গও অন্তর্ভুক্ত থাকে অথবা রূপান্তরিত লিঙ্গকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবে মাঝে মাঝে, বিস্তৃত পরিভাষায় রূপান্তরিত লিঙ্গ বোঝাতে ক্রস-ড্রেসার বা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধানকারীদেরকেও বোঝানো হয়,, তাদের লিঙ্গবোধ যাই হোক না কেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি) ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; যা বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষত্ব হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এর বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া, এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইক এর পক্ষ থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়। এটি এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪তম। এখানে প্রায় ৪৩০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ২০৮০ জন শিক্ষক রয়েছে৷DU stood the 135th among Asian universities in 2019
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা । নারীমুক্তির আন্দোলনেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
১৯১৪ সালের ২৮শে জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। হত্যাকারী ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় নাগরিক, কিন্ত জাতিতে বসনীয় সার্ব। সে সময় বসনিয়া ছিলো সাম্রাজ্যটির অংশ। গাভরিলো প্রিন্সিপ নামের ছাত্রটি ছিলেন 'তরুণ বসনিয়া' দলের সদস্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরী শাসন থেকে মুক্তি যাদের লক্ষ্য। ঘটনাটি ঘটে বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য সার্বিয়াকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায়।
দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি (philosophy) (গ্রিক ভাষা φιλοσοφία, ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে "জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা") হলো অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া প্রভৃতি মৌল বিধানের আলোচনাকেও দর্শন বলা হয়। মানুষের সামাজিক চেতনার বিকাশের একটা পর্যায়েই মাত্র মানুষের পক্ষে বিশ্লেষণী দৃষ্টি নিয়ে জগৎ এবং জীবন সম্পর্কে চিন্তা করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার নিজের উদ্ভব মুহূর্ত থেকেই চিন্তার এরূপ ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম ছিল না। মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। নিজের জীবনকে অধিকতর নিশ্চিত করে রক্ষা করার প্রয়োজনে মানুষ প্রকৃতি জগতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। প্রকৃতি, জগৎ এবং পরবর্তীকালে মানুষের নিজের দেহ এবং চেতনা সম্পর্কেও সে চিন্তা করতে শুরু করে।আদিকালে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুব অধিক ছিল না। দর্শনই আদি জ্ঞানের মূল ভাণ্ডার। জগৎ ও জীবনের প্রত্যেকটি সমস্যা মানুষের কাছে প্রশ্নাকারে উত্থাপিত হয়। যে প্রশ্নই উপস্থিত হোক না কেন, মানুষ তার একটা জবাব দিয়ে প্রকৃতিকে বশ করার চেষ্টা করেছে। তাই আদি দর্শন একদিকে যেমন সমস্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার তেমনি আবার তার মধ্যে সমস্যার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমাধানের বদলে কাল্পনিক সমাধানের সাক্ষাৎ অধিক মেলে। কালক্রমে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন দার্শনিক কল্পনা বাস্তব জীবনে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তার স্থানে অধিকতর সঠিক সমাধান আবিষ্কৃত হতে থাকে। এইভাবে অধিকতর বাস্তব এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা ভিত্তিতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিকশিত হতে থাকে। পূর্বে প্রকৃতি, পদার্থ, সমাজ, চেতনা, যুক্তি, অর্থনীতি, ধর্ম সবই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালক্রমে তাদের প্রত্যেকে এক একটি ভিন্ন বিজ্ঞান বা আলোচনার শাখায় রূপান্তরিত হতে থাকে। এই বিকাশের পরিণামে বর্তমানে দর্শন বলতে কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভরশীল কোনো বিষয় আর অবশিষ্ট নেই। তাই দর্শনের প্রাচীন সংজ্ঞা এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হওয়ার পরেও দর্শনকে অনেকে কল্পনার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রয়াসে দর্শন জীবনের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য হয়ে পড়ে। যেখানে প্রাচীনকালে জীবনের সমস্যাই দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে সেখানে আধুনিককালের এরূপ প্রয়াস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত করেছে। দর্শনের এই সংকটের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন ঊনবিংশ শতকে কার্ল মার্কস। কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন যে, দর্শন হবে জীবন এবং জগৎকে বৈজ্ঞানিক এবং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। দর্শন হবে বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের স্বার্থে জগৎ এবং সমাজকে পরিবর্তিত করার ভাবগত হাতিয়ার। দর্শন অবাস্তব কল্পনা নয়। দর্শন জগৎ ও জীবনের মৌলিক বিধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আর এই ব্যাখ্যারই অপরনাম হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্ব।দর্শন যেমন মানুষের আদি জ্ঞানভাণ্ডার, তেমনি তার ইতিহাস জ্ঞানের যে কোনো শাখার চেয়ে প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিস, ভারত ও চীনে দর্শনের বিস্ময়কর বিকাশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু দর্শনের বিকাশকে দেশ বা জনগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত করার কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। জীবন ও জগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তাই হচ্ছে দর্শন।
আলাউদ্দিন-খিলজি(শাসন কালঃ১২৯৬-১৩১৬)তিনি ছিলেন খিলজি বংশের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক। যিনি দিল্লিতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজি শাসন পরিচালনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারতীয় ইতিহাসেও একজন আলেকজেন্ডারের মতো শক্তিশালী কারো কথা উল্লেখ করা থাকুক। তাই তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার (সিকান্দার-এ-সানি) হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন এবং জুম্মাহের খুতবার আগের বয়ানে নিজের কৃতিত্ব বর্ণনার আদেশ দেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম তাঁর রচিত কাব্য, উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাট্যসাহিত্য, প্রবন্ধ, চিত্রকলা ও সঙ্গীতের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
ভারত (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভূটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘাবয়ব বর্ণনাত্মক কথাসাহিত্য। কবিতা, নাটক ও ছোটগল্পের ন্যায় উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। আধুনিক সাহিত্যে এটি তুলনামূলকভাবে নতুন আঙ্গিক। যিনি উপন্যাস রচনা করেন তিনি ঔপন্যাসিক।উপন্যাস লেখার নির্দিষ্ট নিয়ম বা কাঠামো নেই। তবে সচরাচর এগুলো ছোটগল্পের তুলনায় বৃহদাকার হয়ে থাকে। অধিকন্তু উপন্যাসের আখ্যানভাগ ও চরিত্রের বিস্তার লক্ষিত হয়। হ্রস্ব দৈর্ঘ্যের উপন্যাসকে অনু-উপন্যাস বলা হয়ে থাকে। উপন্যাসে পরিবেশ, বর্ণনা, রূপরেখা, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনের কাহিনীকে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে তার মধ্যে জীবনের কোনো অর্থ বা ভাষ্য প্রকাশ করা হয়। জীবনের এই রূপায়ণ উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের কাছে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। নাটক, রাজাবলি (ধারাবিবরণী), কাব্য ইত্যাদি থেকে উপাদান গ্রহণ করে উপন্যাস রচনারও প্রথা রয়েছে। বস্তুত: উপন্যাসের রূপ অত্যন্ত নমনীয় ও মিশ্র। তাই এর নানা রূপভেদ চোখে পড়ে।
দিল্লী সালতানাত বলতে মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনকালকে বুঝানো হয়। ১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে রাজত্বকারী একাধিক মুসলিম রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি দিল্লী সালতানাত নামে অভিহিত। এই সময় বিভিন্ন তুর্কি ও আফগান রাজবংশ দিল্লি শাসন করে। এই রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি হল: মামলুক সুলতান (১২০৬-৯০), খিলজি রাজবংশ (১২৯০-১৩২০), তুঘলক রাজবংশ (১৩২০-১৪১৩), সৈয়দ রাজবংশ (১৪১৩-৫১) এবং লোদি রাজবংশ (১৪৫১-১৫২৬)। এই সালতানাত মঙ্গোলদের( চাগাতাই খানাত থেকে) আক্রমণকে প্রতিহত করার কয়েকটি শক্তির মধ্যে অন্যতম বলে পরিচিত।মুহাম্মদ ঘুরির প্রাক্তন তুর্কি মামলুক দাস কুতুবুদ্দিন আইবেক দিল্লির প্রথম সুলতান ছিলেন এবং তাঁর মামলুক রাজবংশ উত্তর ভারতের বিশাল অঞ্চল জয় করেন। এর পরে, খিলজি রাজবংশ বেশিরভাগ মধ্য ভারতকেও জয় করতে সক্ষম হয়, তবে উভয়ই পুরো ভারত উপমহাদেশকে জয় করতে ব্যর্থ হয়। সালতানাতটি তুঘলক রাজবংশের সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে এর ভৌগলিক সীমানার দিক থেকে শীর্ষে পৌঁছে। এর পরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং মেওয়ার মতো হিন্দু সাম্রাজ্যের স্বাধীনতা দাবি করার কারণে সালতানাতের পতন ঘটে, এবং শাহী বাংলার মতো নতুন মুসলিম সালতানাতের উদ্ভব ঘটে।দিল্লির সুলতানি আমলে , ভারতীয় সভ্যতার সাথে ইসলামী সভ্যতার মিশ্রণ ঘটেছিল এবং আফ্রো-ইউরেশিয়ার বৃহৎ অংশে বিস্তৃত একটি বিশ্বব্যবস্থা এবং বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কগুলির সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের যোগাযোগ আরও সংহতকরণ ছিল, যার একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সমাজের উপর। তাদের শাসনের সময়টিতে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের প্রাথমিকতম রূপগুলি যান্ত্রিক প্রযুক্তির বৃহত্তর ব্যবহার ভারতের জনসংখ্যা এবং অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হার এবং হিন্দি-উর্দু ভাষার উত্থান ব্যাপক ভাবে লক্ষ্য করা যায়। দিল্লী সুলতানি ১৩ ও ১৪ শতকে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন প্রতিহত জন্য পরিচিত ছিল। ১৫২৬ সালে দিল্লি সালতানাত মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে পরাজিত হয়।
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন " হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, পীরসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামি ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
বিশ্বের ইতিহাস বলতে এখানে পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসকারী মানবজাতির ইতিহাস বোঝানো হয়েছে, গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাস নয়। মানুষের ইতিহাস মূলত পুরাপ্রস্তর যুগে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়। আদিম যুগ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ও লিখিত দলিল এর আওতাভুক্ত। লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাচীন প্রামাণ্য ইতিহাসের শুরু হয়। যদিও লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্ববর্তী যুগেও সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে পুরাপ্রস্তর যুগে। সেখান থেকে সভ্যতা প্রবেশ করে নব্যপ্রস্তর যুগে এবং এসময় কৃষি বিপ্লবের (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) সূচনা ঘটে। নব্যপ্রস্তর যুগের বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর গৃহপালন এবং নিয়মানুগ কৃষিপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষ যাযাবর জীবনযাত্রা ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে কৃষকের জীবন গ্রহণ করে। তবে বহু সমাজে যাযাবর জীবনব্যবস্থা রয়ে যায়, বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতে ও যেখানে আবাদযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতির অভাব ছিল। কৃষি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা ও উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ফলে গোষ্ঠীগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
একান্তই ইন্দ্রিয় সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানব শিশুর জন্ম। ইন্দ্রিয় দ্বারা তাড়িত হলেও ধীরে ধীরে সে নানা ভাবে নানা প্রক্রিয়ায় একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরোপুরি সামাজিক মানুষ হিসেবে পরিনত হয়। এই প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিস এর সংজ্ঞাটি যথার্থ - ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিনত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে এক জন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।” সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা মানব শিশু ক্রমশ ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। যে সকল মাধ্যমে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সাধিত হয় তার মধ্যে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পরিবার। নিচে পরিবারের ভূমিকার বিবরণ দেওয়া হল:- বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান যোগায়, সংস্কৃতির নকশা অঙ্কন করে এবং পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে। একটি শিশু তার দৈহিক, মানসিক এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন পরিবার থেকেই মেটায়। পরিবারেই শিশুর চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠিত হয়। একটি শিশুর সুকোমল বৃত্তিগুলি এবং সুপ্ত প্রতিভা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে। শিশু পরিবার থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও গ্রহণ করে, পরিবার থেকেই একটি শিশু আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে।সুতরাং একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে পরিবারের তিনটি বিষয়ের উপর। পিতা-মাতার সম্পর্ক পিতা-মাতা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক একই পরিবারের একাধিক শিশুদের মধ্যে পরস্পরের সম্পর্কউল্লিখিত সম্পর্কগুলি যদি ইতিবাচক হয় তবে ঐ শিশুরা সৎ, ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারে। শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা পূণ বিকাশও হয়ে থাকে প্রশ্ন : সামাজিকীকরণ কী? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো বর্ণনা কর? উত্তর : ভূমিকা : সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ায় জীবন চলতে থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি যখন এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে প্রবেশ করে তখন তাকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে, নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। এ খাপ খাওয়ানো প্রক্রিয়ার ফলে তার আচরণে পরিবর্তন আসে। নতুন নিয়মকানুন, রীতিনীতি এবং নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলার প্রক্রিয়ার নাম সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ : সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, 'সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, 'সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশার সামাজিক মূল্য বজায় রাখে।'সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াকে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলা হয়। সামাজিকীকরণের মাধ্যম : নিম্নে সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো আলোচনা করা হলো। পরিবার : সামাজিকীকরণের কতগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক, পার্থিব ও অপার্থিক যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা যায়, তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে। খেলার সঙ্গী : শিশুর সামাজিকীকরণে তার সঙ্গী বা খেলার সঙ্গীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। শিশু তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি পরিস্ফুট হয়। সে স্বাবলম্বী হতে শেখে। ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। এককথায়, ধর্মীয় আচর-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সভ্যরা যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য প্রত্যেক সমাজ প্রতিটি সভ্যকে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের শিক্ষাদান করে। সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। গণমাধ্যম : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যমগুলো হলো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। তবে এগুলো সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ ভূমিকা পালন করে।মন্তব্য : বিবৃত আলোচনাকে বিচার ও বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে পরিবার, খেলার সঙ্গী, ধর্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর গণমাধ্যমগুলো সামাজিকীকরণে গৌণ ভূমিকা পালন করে।প্রশ্ন : সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা দাও। সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা বর্ণনা কর। উত্তর : সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে।সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, 'সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।'অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, 'সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশায় সামাজিক মূল্য বজায় রাখে।' সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াতে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলে। সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা সামাজিকীকরণের কতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান জোগায়, সংস্কৃতি নকশা তৈরি করে এবং পরিবারে পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর সব দৈহিক, মানসিক, বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। পরিবারেই শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। মূলত শিশুর চরিত্রের ভিত্তিপ্রস্তর রচিত হয় পরিবারেই। কীভাবে কথা বলতে হয়, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা হয় তা শিশু পরিবার থেকেই শিক্ষা লাভ করে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনের জীবনযুদ্ধে যেন মুখোমুখি হতে পারে তার জন্য আগে থেকেই পরিবার তাকে শিক্ষা দেয়। পরিবার শিশুর অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। শিশুর চলাফেরা, কথাবার্তা, ভাষা শিক্ষা দেওয়া, আচার-আচরণ শিক্ষা দেওয়া, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করার দায়িত্ব একমাত্র পরিবারের। সমাজের একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। সুতরাং শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তিনটি সম্পর্কের ওপর। যথা_ ১.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে কারণ ছিল ১৯৩৩ সালে আডলফ হিটলার ও তার নাৎসি পার্টির জার্মানির রাজনৈতিক অধিগ্রহণ এবং এর আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি; এবং ক্ষুদ্র পরিসরে কারণ ছিল ১৯২০-এর দশকের ইতালীয় ফ্যাসিবাদ এবং ১৯৩০-এর দশকে জাপান সাম্রাজ্যের চীন প্রজাতন্ত্রের আক্রমণ। জার্মানি ও জাপানের স্বৈরশাসকেরা এই সামরিক আগ্রাসনমূলক পদক্ষেপ নেবার পর অন্য দেশগুলি যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং/কিংবা সামরিক প্রতিরোধ শুরু করে। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে এবং ১৯৩৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। ভার্সাই চুক্তির ফলে ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরাজয়ের সমাপ্তি ঘটার পর রাজনৈতিক প্রতিশোধের তীব্র রূপ দেখা দিলে ভাইমার জার্মানিতে সমস্যার সূত্রপাত হয়। চুক্তির ধারার অসন্তুষ্টির মধ্যে ছিল রাইনল্যান্ডের সামরিক ঘাটি উৎখাত, অস্ট্রিয়ার সাথে একত্রীকরণ বাতিল এবং কয়েকটি জার্মান ভাষী অঞ্চল, তথা ডানৎসিগ ও ইউপেন-মালমেডি হারানো, যুদ্ধ-অপরাধ অনুচ্ছেদ, এবং জার্মান কর্তৃক অত্যধিক জরিমানা প্রদান, যা মহামন্দা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অসহনীয় হয়ে ওঠে। জার্মানির সবচেয়ে মারাত্মক আন্তঃরাষ্ট্রীয় কারণ ছিল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অস্থিরতা। ১. ভার্সাই সন্ধি জনিত সমস্যা ২. উগ্র জাতীয়তাবাদনীতি গ্রহণ ৩.
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
জাদুঘর বা সংগ্রহালয় বলতে বোঝায় এমন একটি ভবন বা প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে।জাদুঘরে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুসমূহ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করা হয় এবং সেগুলি প্রদর্শ আধার বা ডিসপ্লে কেসের মধ্যে রেখে স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের সমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ বড় জাদুঘরই প্রধান প্রধান শহরগুলিতে অবস্থিত। অবশ্য ছোটো শহর, মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলেও স্থানীয় জাদুঘর গড়ে উঠতে দেখা যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (WWI বা WW1), এছাড়াও বিশ্বযুদ্ধ-১, বা মহাযুুুুদ্ধ হিসাবে পরিচিত, একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ যা ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই ইউরোপে শুরু হয় এবং ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ৬ কোটি ইউরোপীয়সহ আরো ৭ কোটি সামরিক বাহিনীর সদস্য ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই যুদ্ধে একত্রিত হয়। এটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের একটি এবং এর ফলে পরবর্তী সময়ে এর সাথে যুক্ত দেশগুলোর রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন হয়। অনেক দেশে এটি বিপ্লবেরও সূচনা করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ.
আবু আল-হাসান আলী ইবন আল হুসেন ইবনে আলী আল-মাস'উদী (আরবি أبو الحسن علي بن الحسين بن علي المسعودي অনুবাদ: আবু আল-হাসান ʿআলী ইবন আল-হুসেন ইবনে ʿআলী আল-মাসʿউদি) (জন্ম ৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দ, বাগদাদ, মৃত্যু সেপ্টেম্বর ৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দ, কায়রো, মিশর), ছিলেন একজন মুসলিম ইতিহাসবিদ এবং ভূগোলবিদ। তাকে অনেক সময় আরবের হেরোডোটাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পাল সাম্রাজ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের পরবর্তী ধ্রুপদি যুগের একটি সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের উৎসস্থল ছিল বাংলা অঞ্চল। পাল সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয় এই সাম্রাজ্যের শাসক রাজবংশের নামানুসারে। পাল সম্রাটদের নামের শেষে ‘পাল’ অনুসর্গটি যুক্ত ছিল। প্রাচীন প্রাকৃত ভাষায় এই শব্দটির অর্থ ছিল ‘রক্ষাকর্তা’। পাল সম্রাটেরা বৌদ্ধধর্মের মহাযান ও তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিলেন। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সম্রাট পদে গোপালের নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটে। অধুনা বাংলা ও বিহার ভূখণ্ড ছিল পাল সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এই সাম্রাজ্যের প্রধান শহরগুলি ছিল পাটলীপুত্র, বিক্রমপুর, রামাবতী (বরেন্দ্র), মুঙ্গের, তাম্রলিপ্ত ও জগদ্দল।
জীবনানন্দ দাশ () (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪; ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ - ৫ কার্তিক, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্পান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ - ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ফরাসি বিপ্লব (ফরাসি: Révolution française) (১৭৮৯–১৭৯৯) ফরাসি, ইউরোপ এবং পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং একই সাথে দেশের রোমান ক্যাথলিক চার্চ সকল গোঁড়ামী ত্যাগ করে নিজেকে পুনর্গঠন করতে বাধ্য হয়। ফরাসি বিপ্লবকে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি জটিল সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতা নিরঙ্কুশ রাজনীতি এবং অভিজাততন্ত্র থেকে নাগরিকত্বের যুগে পদার্পণ করে। ঐতিহাসিকরা এই বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করেন।ফরাসি বিপ্লবের মূলনীতি ছিল "Liberté, égalité, fraternité, ou la mort!" অর্থাৎ "স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব, অথবা মৃত্যু"। এই শ্লোগানটিই বিপ্লবের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলো যার মাধ্যমে সামরিক এবং অহিংস উভয়বিধ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শ্লোগানটি তখন সকল কর্মীর প্রাণের কথায় পরিণত হয়েছিলো।
ছোটগল্প (বিকল্প বানান ছোট গল্প) বাংলাই না সমগ্র কথাসাহিত্যের একটি বিশেষ রূপবন্ধ যা কাহিনীভিত্তিক এবং দৈর্ঘ্যে হ্রস্ব, তবে ছোটগল্পের আকার কী হবে সে সম্পর্কে কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেই। সব ছোটগল্পই গল্প বটে কিন্তু সব গল্পই ছোটগল্প নয়। একটি কাহিনী বা গল্পকে ছোটগল্পে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কিছু নান্দনিক ও শিল্পশর্ত পূরণ করতে হয়। ছোটগল্পের সংজ্ঞার্থ কী সে নিয়ে সাহিত্যিক বিতর্ক ব্যাপক। এককথায় বলা যায়- যা আকারে ছোট, প্রকারে গল্প তাকে ছোটগল্প বলে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা সংক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের গণহত্যা করা শুরু করলে একটি জনযুদ্ধের আদলে গেরিলাযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় বিপুলসংখ্যক সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগের প্রধান ও পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতার হবার পূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পার্বত্য চট্টগ্ৰামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-প্ৰধান জিয়াউর রহমান ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ.
রামমোহন রায়, অথবা রাজা রাম মোহন রায় লেখা হয় রাজা রামমোহন রায় (মে ২২, ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩) প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।
বৌদ্ধধর্ম (সংস্কৃত: बौद्धधर्मः, পালি: বৌদ্ধধম্ম) হল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম যার অনুসারী সংখ্যা ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি বা বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৭ শতাংশের অধিক এবং তারা বৌদ্ধ হিসেবে পরিচিত। বৌদ্ধধর্ম বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক চর্চাকে ধারণ করে যেগুলো মূলত সিদ্ধার্থ গৌতমের মৌলিক শিক্ষা এবং এর ব্যাখ্যাকৃত দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রাচীন ভারতে একটি শ্রমণ ঐতিহ্য হিসেবে উৎপত্তিলাভ করে এবং এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধধর্মের তিনটি প্রধান বিদ্যমান শাখা সাধারণত পণ্ডিতদের দ্বারা স্বীকৃত: থেরবাদ, মহাযান ও বজ্রযান।
স্বামী বিবেকানন্দ (বাংলা: [ʃami bibekanɒnɖo] (শুনুন), Shāmi Bibekānondo; ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২) নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত (বাংলা: [nɔrend̪ro nat̪ʰ d̪ɔt̪t̪o]), ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাটি হল, "আমেরিকার ভাই ও বোনেরা ...," ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত চিকাগো বক্তৃতা, যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন। স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তার রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল "খণ্ডন-ভব-বন্ধন" (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও "নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি"। এছাড়া "নাচুক তাহাতে শ্যামা", "৪ জুলাইয়ের প্রতি", "সন্ন্যাসীর গীতি" ও "সখার প্রতি" তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। "সখার প্রতি" কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক", "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার (যা মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
মুজিব বর্ষ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বর্ষ উদযাপন করা হবে।(করোনাভাইরাসের কারণে গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়ানো হয়েছে। এ সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।)। বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু খ্যাত নেতা অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় ঘোষিত বর্ষটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুজিব বর্ষের লোগোর ডিজাইন করেন সব্যসাচী হাজরা।
সমাজতন্ত্র বা সমাজবাদ (ইংরেজি: Socialism) হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা এবং অর্থনীতির একটি সমবায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, এছাড়াও একই সাথে এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ ও আন্দোলন যার লক্ষ্য হচ্ছে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ এটি এমন একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদন হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে একটি দেশের কলকারখানা, খনি, জমি ইত্যাদি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।সমাজতন্ত্র হল সাম্যবাদী সমাজের প্রথম পর্যায়। উৎপাদনের উপায়ে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা হলো এর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমাজতন্ত্র ব্যক্তিগত মালিকানার উৎখাত ঘটায় এবং মানুষে মানুষে শোষণ, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বেকারত্বের বিলোপ ঘটায়, উন্মুক্ত করে উৎপাদনী শক্তির পরিকল্পিত বিকাশ ও উৎপাদন সম্পর্কের পূর্ণতর রূপদানের প্রান্তর। সমাজতন্ত্রের আমলে সামাজিক উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল জনগণের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতিটি লোকের সার্বিক বিকাশ সাধন। সমাজতন্ত্রের মুলনীতি হলো 'প্রত্যেকে কাজ করবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রত্যেকে গ্রহণ করবে তার প্রয়োজন অনু্যায়ী।' সমাজতন্ত্র দুই ধরনেরঃ কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিলো ১৯১৭ সালে। সমাজতন্ত্রে বৈরি শ্রেণি নাই, কেননা কলকারখানা, ভূমি, সবই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সমাজতন্ত্রে শ্রেণি শোষণ বিলুপ্ত হয়।শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি।
ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ' বা মেরাজের রাত, যা সচরাচর শবে মেরাজ হিসাবে আখ্যায়িত হয়, হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। আবার অনেক মুসলমান এই রাত উদযাপন করেন না বরং এই রাত উদযাপন করাকে বিদআত বলেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ (সা:)।
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন ভারতের ধর্ম, শিক্ষা, চরিত্র গঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিবেকানন্দ ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী। তিনি পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শন প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতেও ধর্মসংস্কারে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দের রচনাবলি পড়ো। তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে সবই ইতিবাচক; নেতিবাচক কিছুই নেই।" বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি মানুষের উপর বেষি জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "আমার উদ্দেশ্য হল মানুষের চরিত্র গঠন"। এইভাবেই তিনি নিজের শিক্ষা বর্ণনা করেন। বিবেকানন্দ তার আদর্শ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, "(তাঁর উদ্দেশ্য) মানবজাতিকে তার অন্তর্নিহিত দেবত্ব শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শেখানো।"
ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দর্শন ও শিক্ষার সমন্বয়
শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ education। এই education শব্দটি তিনটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে ধরা হয়, যথা এডুকেয়ার যার অর্থ হলো প্রতিপালন করা, educo যার অর্থ হলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এডুকিরি যার অর্থ হলো অঙ্কন করা । অর্থাৎ শিক্ষা হলো সমস্ত প্রক্রিয়ার সমন্বয় যার দ্বারা ব্যক্তি তার সক্ষমতা ,দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সহ সমস্ত রকম চারিত্রিক ও সামাজিক গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে এবং যার ফলস্বরূপ ব্যক্তির সর্বোত্তম আত্ম পরিস্ফুরণ সাধিত হয় । স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় মানবাত্মার অন্তর্নিহিত উৎকর্ষতার সার্বিক পরিস্ফূরণ ই-শিক্ষা। মহান শিক্ষাবিদ পেস্তালোজির মতে মানবাত্মার অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক মধুর ও প্রগতিশীল বিকাশই হল শিক্ষা। কবিগুরুর ভাষায় অন্তরের আলোর সম্পদ শিক্ষা দ্বারা অর্জিত হয় শিক্ষা কে একটি প্রক্রিয়া ধরা হলে শিক্ষা একটি নিরবিচ্ছিন্ন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা দ্বারা মানুষ জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে সার্বিক গুণের অধিকারী হয়। শিক্ষাকে উৎপাদন হিসেবে ধরলে শিক্ষান্তে শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারা শিক্ষার ফল বিচার করা হয় যা শিক্ষাকে পরিমাপ করতে সাহায্য করে অপরপক্ষে দর্শন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ philosophy শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফিলিও ও সোফিয়া এর সমন্বয় তার অর্থ হলো সত্যের প্রতি ভালোবাসা। আসলে দর্শন হলো সত্যের অনন্ত অনুসন্ধান বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে সার্বজনীন জিজ্ঞাসাই দর্শনের লক্ষ্য। মহান দার্শনিক প্লেটোর মতে বহুবিধ বস্তু বা ঘটনার সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কীয় জ্ঞান ই দর্শন। radhakrishnan বলেছেন বাস্তবতার যুক্তিসম্মত অনুসন্ধানই দর্শন। দর্শন মানব জীবনের তিনটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে যথা metaphysics বা আধিভৌতিক epistemology বা জ্ঞানতত্ত্ব axiology বা মূল্যবোধের অনুসন্ধান। অনুসন্ধান যুক্তি নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।সুতরাং উদ্দেশ্যগত ভাবেই দর্শন ও শিক্ষা নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সমস্ত সময়কার মহান দার্শনিকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা এবং চেতনা দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার রীতিনীতি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করে গেছেন ।প্রাচীন গ্রিসের মহান দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এবং এরিস্টোটল শিক্ষাব্যবস্থা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করে গেছেন ।পাশ্চাত্যের মহান দার্শনিক রুশো ,কান্ট ,হেগেল, dewy শিক্ষার প্রকৃতি , শিক্ষার লক্ষ্য এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন ।ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা পদ্ধতি এবং তার সঠিক ইমপ্লিমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে ভারতীয় দার্শনিকগণ যথা বুদ্ধ ,গান্ধী ,টেগর, অরবিন্দ ,রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখের অবদান আছে ।শিক্ষা এবং দর্শন দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় কারণ শিক্ষা ও দর্শন ও উভয়ের লক্ষ্যই হলো জ্ঞান এবং উভয় অর্জনের মাধ্যমই হল ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান। ধারনা নির্মাণ ও তার যথার্থ বাস্তবিক প্রয়োগ দ্বারা শিক্ষা পরিচালিত হয় তাই যথার্থভাবে শিক্ষা প্রয়োগ করতে হলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত অভিলক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই অভি লক্ষ্য নির্মাণের কাজটি করে থাকে দর্শন । দর্শন জীবন ও মূল্যবোধের সাপেক্ষে একটি সুস্থির দিশা তৈরি করে যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও স্থির অভিমুখী করে তোলে । তাই বলা ভালো সুস্থির দর্শন ছাড়া শিক্ষা অন্ধ আর সুস্থির শিক্ষা ছাড়া দর্শন অচল । জন ডুয়ি যথার্থই বলেছেন শিক্ষা হলো দর্শনের পরীক্ষাগার যেখানে সমস্ত দার্শনিক সত্যতার যথার্থতা পরীক্ষিত হয় । তাই দর্শনের কাজ হল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক গুণাবলী নির্দেশনার পথ স্থির করা আর শিক্ষার কাজ হলো সেই পথে চলে জীবনকে উৎকর্ষ থেকে উৎকর্ষতর করে তোলা । একটি মুদ্রার দুই পিঠ হলো শিক্ষা আর দর্শন । দর্শনের পিঠটি হল চিন্তাশীল শিক্ষার পিঠটি হল সক্রিয় ।সুতরাং পরিশেষে বলা চলে যে শিক্ষা এবং দর্শন দুটি পৃথক বিষয় নয় এটি একত্র করে যে শিক্ষাদর্শন ভাবনা করা হয়েছে সেটি যথার্থ। শিক্ষা পদ্ধতি চারটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষক , পাঠক্রম ও শিক্ষার্থী এই চারটি মৌলিক বিষয় নিজেদের মধ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে শিক্ষার লক্ষ্য কে পূর্ণতা দেয় ।আর এই চারটি বিষয়কে একত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত শিক্ষা দর্শনের ।একটি যথার্থ সমাজদর্শন ই পারে শিক্ষার ধারণা শিক্ষা পরিকল্পনাকে সুশৃংখল করে তুলতে দার্শনিক রীতিনীতি এবং দার্শনিকদের মৌলিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ উচ্চশিক্ষা এই রীতি-নীতি গুলিকে আশ্রয় করে অতীতের সমস্ত সম্পদ ও ঐতিহ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যা দার্শনিক চিন্তা ভাবনা দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃংখল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে শিখন ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করা এবং তার উন্নতি সাধন করা শিক্ষা দর্শনের মৌলিক লক্ষ্য । কোন শিক্ষা ভাবনার বা শিক্ষা তত্ত্বের যে দ্বন্দ্ব ও ভ্রান্তি গুলি আছে সেগুলো দূর করা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষা দর্শন মানুষকে সক্ষম করে তোলে যার দ্বারা সে প্রচলিত ব্যবস্থা ও নীতিগুলির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে শেখে। শিক্ষাতত্ত্ব গুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধারণা উপলব্ধিগুলোকে বাস্তবতা দান করে শিক্ষাকে সময় উপযোগী করে তোলা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষাব্যবস্থার চারটি মৌলিক উপাদানকে শিক্ষাদর্শন নিম্নলিখিতভাবে পরিশীলিত ও যথার্থ করে তোলে: প্রথমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো একটি সামাজিক সংস্থা যা শিক্ষার মূলাধার । শিক্ষা দর্শন মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলির পুনস্থাপন করা যা পূর্বপুরুষ দ্বারা অর্জিত ।এগুলির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় যেমন ভাষা, বিজ্ঞান , ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে যা তাদের বোধকে প্রাথমিক স্তর থেকে অন্তিম স্তরের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । আর এই জ্ঞান অর্জন পর্বের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পাঠক্রম যা উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষাদর্শন দ্বারা গঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন । শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি শিশু তার সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্তব্যবোধ নীতিবোধ এবং তার চরিত্র ও মানসিক গঠন পাশাপাশি শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া আবশ্যক বলে বিবেচনা করবে । এ থেকেই তার মনে সাম্যের অধিকার ও সামাজিক ভাবনাগুলি বিকাশ পাবে যা তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বিদ্যালয় এর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী নাহলে এই শিক্ষার লক্ষ্য গুলি কোন রূপেই যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো শিক্ষক । ই-লার্নিং ব্যবস্থায় শিক্ষকের গুণগতমানের ও তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন সাধিত হলেও শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক একাধারে প্রশিক্ষক, নির্দেশক বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শিক্ষাব্যবস্থায় তিনিই নেতা, তার নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ।একজন যথার্থ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে তার উপযুক্ত নেতৃত্ব দান ও কর্ম প্রয়াসের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে এমন কার্যক্রম নির্ধারণ করে যে যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সানন্দে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধ্য হয়। শিক্ষকের সে কারণেই প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সমর্থ করে তোলে যার দ্বারা সে তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের পরিধি, সীমা ,লক্ষ্য ,যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি লাভ করতে পারেন। শিক্ষার্থীর শিক্ষার লক্ষ্য ,শিখন পরামর্শ এবং শিখন কর্মকান্ড শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় ।কিন্তু তিনি কখনোই শিক্ষার্থীকে চাপ বা স্ট্রেস প্রদান করবেন না যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পর্কে ভ্রান্ত ভয়ের শিকার হয়ে সে ব্যবস্থা থেকে ফিরে আসে শিক্ষকের নিজের গুণেই জ্ঞান-বুদ্ধি বিকশিত হবে এবং তার শিক্ষার্থী দ্বারা প্রয়োগে রূপান্তরিত হবে সম্মত সুস্থির পরিকল্পনা শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে উৎসাহিত করবে ।শিক্ষক নিজেকে সর্বজ্ঞ না ভেবে শিক্ষার্থীর সাথে একই আনন্দে শেখার লক্ষ্যে ব্রতী হবে ।পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে উপযোগী শিক্ষা শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় । শিক্ষক ,পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর সুস্থির সমন্বয় দ্বারাই শিক্ষার লক্ষ্য সাধিত হয়, তাই শিক্ষককে শিক্ষা ,শিখন দর্শন অবশ্যই জানা প্রয়োজন এবং তা অনুযায়ী তাকে শ্রেণিকক্ষ পরিচালিত করা একান্ত কর্তব্য বলে মেনে নিতে হবে । একজন শিক্ষক তিনি যদি মনে করেন যে তিনি পারবেন তবে তিনি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন কিন্তু তিনি যদি মনে করেন তিনি পারবেন না তবে শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।তাই শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সামগ্রিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্য করবে। তৃতীয়তঃ পাঠক্রম ,পাঠক্রম শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ।শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাদর্শন সম্মত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তা পাঠক্রমে সুপরিকল্পিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে ।এর ব্যাপ্তি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণীকক্ষের বাইরে উভয় জায়গাতেই সুবিন্যাস্ত থাকে। ক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী উভয়ই পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়বস্তু ও শিক্ষা পদ্ধতি , শিখন পদ্ধতি ও তার মূল্যায়ন পাঠক্রমের দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়। শিক্ষার লক্ষ্য বলতে পাঠক্রম দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী উভয় লক্ষ্যই কার্যকরী করা হয় ।তাই জ্ঞান ও বোধ অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োগ ও দক্ষতার দিকেও পাঠক্রমের যথেষ্ট নজর থাকে ।পাঠক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় পদ্ধতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয় বলা হয় ।পাঠক্রমের মধ্যদিয়েই শিক্ষা দর্শনের উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি শিক্ষাঙ্গনে পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থী এই পাঠক্রম দ্বারা শিক্ষকের সাহায্যে শিক্ষাঙ্গনে যেমন ভবিষ্যতে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে তেমনই উপযুক্ত মানুষ হয়ে ওঠে। চতুর্থত ছাত্রঃ শিক্ষার্থী হল শিক্ষাব্যবস্থার সর্বাধিক সজীব উপাদান ।শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকে ছাত্র তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও বিদ্যালয় এর যাবতীয় কার্যাবলী আবর্তিত হয় ।বৈদিক শিক্ষায় বা প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষার্থী ছিল কেবলমাত্র শ্রোতা , কিন্তু দিনে দিনে শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষম ও সক্রিয় করে তোলার যাবতীয় উপাদান শিক্ষাব্যবস্থায় আমদানি করা হয়েছে ।আর তাই প্রকৃতির মাঝে শিক্ষা, হাতে-কলমে শিক্ষা বা সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষা ক্রমে ক্রমে প্রসার লাভ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি প্রচ্ছদে শিক্ষার্থীর মনে ও চিন্তাই যদি সুস্থির শিক্ষা দর্শনের ছাপ পরিলক্ষিত না হয় তবে শিক্ষার্থীর যে সামাজিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে তা শিক্ষা এবং সমাজ উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। জ্ঞানের প্রতি জিজ্ঞাসা বা জ্ঞানের পিপাসা সত্যানুসন্ধান এ গুলি দর্শনের মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মনে এই লক্ষ্য গুলি স্থাপিত করা একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন তাই একজন শিক্ষার্থীকে যেমন ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মের অনুসন্ধানে সাহায্য করে, তার পাশাপাশি জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে বাস্তব ধারণা তাকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী করে তোলে ।এখানেই শিক্ষা দর্শন এর উপযোগিতা। মূল্যবোধ ,নীতিশিক্ষা, জীবনবোধ ,কর্মক্ষমতার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, অঙ্ক ,ইতিহাস-ভূগোল, অঙ্কন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থী নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। শিক্ষার্থীর ভেতরকার যে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান জিজ্ঞাসা তা বাস্তবে পরিস্ফুটিত হয় তাই শিক্ষাঙ্গনে অসমর্থ শিক্ষার্থী ও একটু পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা ফুটে ওঠে তার পরিস্ফূরণ ঘটে শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হিসাবে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষাব্যবস্থার উপযুক্ত লক্ষ্য ও উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষার যথার্থ বাস্তব প্রয়োগের জন্য শিক্ষাদর্শন অনস্বীকার্য ।তাই দর্শনের অন্যান্য শাখার থেকেও দর্শনের শিক্ষাদর্শন শাখার উপযোগিতা ও ব্যবহার বর্তমানে সর্বাধিক। এই শিক্ষা দর্শনের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ যা শিক্ষার লক্ষ্য তাকেই বাস্তবে সুচিন্তিত মতামতের দ্বারা দিশা স্থাপন করান। ভারতীয় শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি অর্থাৎ বেদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেদ বৈদিক যুগে মূলত আর্যদের দ্বারা বিভিন্ন মনিষীদের অর্জিত জ্ঞান ,উপলব্ধি মূলত দার্শনিক চিন্তা ভাবনার ভিত্তিতে আকরগ্রন্থ বলা যায় । বেদের মূলত চারটি ভাগ ঋক্ ,সাম, যজু ও অথর্ব। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুটি অংশের সমন্বয়ে বেদ গঠিত। মন্ত্রের যে সমন্বয় বা সমষ্টি তাকে সংহিতা নাম দেওয়া হয়েছে ।আর বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনা বা যজ্ঞ, পূজা-পার্বণ প্রভৃতির জন্য যে নিয়ম লেখা আছে তাকে ব্রাহ্মণ নাম দেওয়া হয়েছে । জীবনের শেষ ভাগ শান্তিময় জীবন তার কথা বলা আছে আরন্যকে ।আর আরন্যক তথা বেদের সংশোধন পরিসমাপ্তি সমষ্টি একে উপনিষদ নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা মীমাংসা এবং বেদান্ত বলে দুটি গ্রন্থের কথা পাবো । মীমাংসা সাধারণত ritualistic ধারণাগুলি অর্থাৎ ধর্মীয় উপাচার সম্পর্কে বলা আছে। আর বেদান্ত সেখানে কিছু আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কথা বলা আছে। ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় শিক্ষা দর্শন এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম যে বিষয়গুলির কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে দর্শন যে শব্দটি এটি একটি সংস্কৃত শব্দ ।এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যক্ষভাবে দেখা। দর্শন শব্দের অর্থ থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের থেকে ভারতীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। পাশ্চাত্য দর্শনে বৌদ্ধিক উপলব্ধির কথা জোর দিয়ে বলা হলেও ভারতীয় দর্শনে আত্মার উপলব্ধির উপরে সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। যার মূলগত অর্থ হচ্ছে সত্য এবং বুদ্ধি এই দুটির প্রত্যক্ষ অবলোকন বা দর্শন ।ভারতীয় দর্শন কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি হচ্ছে আস্তিক দর্শন আরেকটি হচ্ছে নাস্তিক দর্শন। আস্তিক দর্শন দু'প্রকার একটি হচ্ছে বেদ নির্ভর দর্শন, আরেকটি হচ্ছে বেদ নিরপেক্ষ দর্শন ,এখানে বেদের পরোক্ষ প্রভাব বর্তমান। নাস্তিক দর্শনে বেদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রভাবই বর্তমান নেই ।বৈদিক দর্শনের মধ্যে মীমাংসা এবং বেদান্ত এই দু'প্রকার দর্শন পরে ।আর বেদ নিরপেক্ষ দর্শনের মধ্যে সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিকা এই দর্শন গুলি পরে ।নাস্তিক দর্শনের মধ্যে চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন পড়ে । পরবর্তীকালে যে সমস্ত দর্শন গুলি এসেছে সেগুলি এসমস্ত দর্শনের সমন্বয়েই গঠিত । ভারতীয় দর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপঃ ১/প্রত্যক্ষ উপলব্ধিঃ বৈদিক যুগে বিভিন্ন ঋষি মনীষীরা তাদের প্রতিদিনকার বাস্তব উপলব্ধি থেকে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করতেন ।জীবনের প্রকৃতি, জন্ম , মৃত্যু এবং বিভিন্ন জাগতিক ও মহাজাগতিক কর্মকান্ডের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য ও তার সত্য অনুসন্ধান করার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোই ছিল একমাত্র পথ। প্রতিটি দর্শনেই গুরুর বাস্তব উপলব্ধি দ্বারা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২/চার্বাক দর্শন ছাড়া প্রতিটি দর্শনেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে ।ঈশ্বরের অস্তিত্ববাদ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বৈদিক দর্শনের পাশাপাশি জৈন ও বৌদ্ধ এই দর্শন গুলিতেও অস্তিত্ব সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে । ৩/ভারতীয় দর্শনের প্রত্যেকটি ধারা একই সাথে এগিয়ে গেলেও এদের মধ্যে সুস্থির পার্থক্য এবং সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান । একে অপরের উত্তরণের পথে কখনো বাধা সৃষ্টি করেনি। আবার ভিন্ন ভিন্ন দর্শন বা মত অবলম্বনকারী মানুষদের মধ্য প্রত্যক্ষ কোন সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ৪/ প্রত্যেক দর্শন মতে যুক্তি নির্ভরতা একটা মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।যুক্তির দ্বারা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যা ও জীবনবোধকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যম হিসেবে দর্শনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ৫/ভারতীয় দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব বরাবরই বিদ্যমান । এখানে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য আত্মাকে একটি চরম পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে জীবনের লক্ষ্য অর্জিত হয় । ৬/ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দর্শন ছাড়া সব ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে মানুষের অজ্ঞতাই হলো মানুষের দুঃখের কারণ। এই দুঃখ তিন রকম হতে পারেঃ একটি আধ্যাত্মিক, একটি আধিভৌতিক, আরেকটি আধিদৈবিক ।মানুষের উপলব্ধি শ্রবণ ,মনন ও নিদ্বিধায়াসন দ্বারা। জাগতিক চাওয়া-পাওয়া বা বন্ধন থেকে মুক্তির ঘটনাকে মোক্ষলাভ বলা হয়েছে। ৭/ভারতীয় দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভারতীয় দর্শন উদার মানসিকতার ধারক ও বাহক । ৮/একটি দর্শনই self-realization আত্ম-উপলব্ধিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। ৯/ দর্শন মতে কার্যকারণ সম্পর্ক পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মুখ্য কারণ ।যদি কোন ঘটনা ঘটে জানতে হবে তার একটি কারণ আছে ।তবে ফলের আশা করে কর্ম করা ঠিক নয়। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি প্রধান উপাদান হলো নীতিবোধ ও মূল্যবোধের উপর এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ৯/ভারতীয় দর্শন মতে অজ্ঞতা বা কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি না থাকলে মানুষ দুঃখ কষ্টের শিকার হয় ।এবং এই দুঃখ-কষ্টের থেকে তাকে বের হতে গেলে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে তাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ১০/ ভারতীয় দর্শন পুনর্জন্ম মতে বিশ্বাসী অর্থাৎ মানুষ এজনমে যেমন কাজ করে যাবে পরজন্মে সেই কাজের ফলস্বরূপ তার জন্ম নিতে হবে । ১১/ভারতীয় দর্শনের গভীরতা সুনিবিড় ।মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ থেকে তার আত্মার চরম মুক্তি বা অজানা সমস্ত তথ্যের সত্য উদঘাটন এসবের মধ্যেই নিহিত আছে ভারতীয় দর্শনের মূল্যবোধ। ১২/ভারতীয় দর্শন মতে মানুষের যে গুনগুলি বা চাওয়া-পাওয়া গুলি থাকে সেগুলি হচ্ছে অর্থ ,কাম ,ধর্ম এবং মোক্ষ ।ধর্ম ও মোক্ষের আত্মিক মূল্য বর্তমান ,আর বাস্তবিক মূল্য অর্থ ও কামের বর্তমান । আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন যার নেতৃত্বে ছিলেন ডেলর 1996 সালে শিক্ষা সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি পেশ করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে শিক্ষার মূলত চারটি স্তম্ভ আছে প্রথমত learning to know দ্বিতীয়তঃ learning টুডু তৃতীয়তঃ learning to লিভটুগেদার চতুর্থত learning to be ।ভারতীয় দর্শনে এই বিষয়গুলি কেই মূলত উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ,সহযোগ ও আত্মানমরিদ্ধি । ভারতীয় দর্শনের মুল বক্তব্যগুলিকে অান্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বসহ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দু'রকমের প্রমা ও অপ্রমা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলা হয় যা অনুভব ও স্মৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।আর অপ্রমা ~ সমস্যা ,ভ্রম ও যুক্তি দ্বারা গঠিত হয় । ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞানের ধারণা নির্মাণ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে ন্যায় তত্ত্বের কথা আলোচনা করব । ন্যায় তত্বের উদ্ভাবক ঋষি গৌতম ।বাস্তব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক চিন্তা এই দুটি এই তত্ত্বের ভিত্তি। বাস্তবতার নিরিখে ক্ষেত্রে বহুবস্তু বাদী বাস্তবতাকে স্বীকার করে ।বাস্তবতার আধার হিসেবে যে বস্তুগুলোকে এখানে ধরা হয়েছে তা হলো পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু ,আকাশ, কাল, দিক ,আত্মা, মন। এই তত্ত্ব মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল উপলব্ধি ,অনুমান ,তুলনা ও পরীক্ষণ ।আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি দ্বারা তাৎক্ষণিক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি বলে ।উপলব্ধি দুই প্রকার একটি লৌকিক অপরটি অলৌকিক ।বাক্য ও মানস বা মন দ্বারা যে উপলব্ধি অর্জিত হয় তাকে লৌকিক উপলব্ধি বলে ।নির্বিকল্প ,সবিকল্প এবং প্রত্যয় অভিজ্ঞতা দ্বারা লৌকিক উপলব্ধি অর্জিত হয়। প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া নির্বিকল্প এবং প্রত্যক্ষ সংযোগ দ্বারা সবিকল্প অর্জিত হয় ।কোন বিষয়ের ভাষাগত অর্থ উদ্ধারকে প্রত্যয়াভিজ্ঞা বলে ।আর সাধারণভাবে অপ্রচলিত মাধ্যম দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে অলৌকিক উপলব্ধি বলে। সামান্য লক্ষণ ,জন লক্ষণ ও যোগজা দ্বারা এটি অর্জিত হয় ।জ্ঞান অর্জনের পর যে বিশেষ বোধ অর্জিত হয় তাকে অনুমান বলে। কারণ অনু শব্দের অর্থ হচ্ছে আগে এবং মান শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। গৌতম এর মতে অনুমান তিন রকমের পুরাভাত, শেষাভাত, সময়তদ্রষ্টা । তুলনা বা সামান্যীকরণ পদ্ধতিতে পুরাভাত, বাতিলকরণ প্রক্রিয়ায় শেষাভাত, অন্তরের সমর্থনে সময়তদ্রষ্টা অর্জিত হয় ।এই দর্শন মতে নিজের উপলব্ধিকে স্বার্থ এবং অপরের উপলব্ধিকে পরার্থ বলা হয়। তুলনা পর্বের শেষে সাক্ষ্য বা শব্দ যেটা আসলে verbal knowledge তা অর্জিত হয়। এটি দু'রকমের দ্রষ্টা ও অদ্রষ্টা ।এই দর্শন মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো ~ অনুমান ,যুক্তি তর্ক প্রভৃতি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন, সৃজনশীল চিন্তন, সঠিক বোধের দ্বারা মূল্যবোধ অর্জন করা ,বাস্তব বস্তুর সঙ্গে জ্ঞানকে একত্রিত করা, যথার্থ জ্ঞান ও বাস্তবোচিত জ্ঞানকে একত্রিত করা। ন্যায় তত্ত্বমতে পাঠক্রম সব সময় জীবনের মূল্যবোধ এবং বাস্তব ধারণা নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বস্তু ও ইন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি দ্বারাই পৃথিবীকে জানা সম্ভব। এই দর্শন মতে শিক্ষক যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করবেন তা মূলত বক্তৃতা পদ্ধতি ,আলোচনামূলক পদ্ধতি এবং সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি অনন্য ধারা হলো সাংখ্য দর্শন। এই দর্শনের উদ্ভাবক মহাঋষি কপিল। তার মতে ইহজগৎ পুরুষ ও প্রকৃতি এই দ্বৈত সত্ত্বা দ্বারা গঠিত। পুরুষ ও প্রকৃতির সমন্বয়ে মহৎ বা বুদ্ধি বা অহংকারের সৃষ্টি হয়। অহংকার তিন ধরনেরঃ সত্য, রজঃ এবং তমঃ। মন , বোধ ও শারীরবৃত্তীয় অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয় । ইহজগতের সচেতন সত্তাকে পুরুষ এবং অসচেতন সত্ত্বাকে প্রকৃতি বলা হয় ।তারা মহৎ বা বুদ্ধি দ্বারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। পঞ্চভূত কে তমঃ এবং গুণ গুলিকে রজঃ বলা হয়। ইহজাগতিক ঘটনাসমূহের কারণ হলো পুরুষ এবং তার বাস্তব বা প্রত্যক্ষ ফল হলো প্রকৃতি। এই প্রকৃতি দ্বারাই বহুবিধ ও গুণাবলী বাস্তবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের উৎস হল উপলব্ধি ,অনুমান ও আক্ষরিক পরীক্ষণীয় বস্তু সামগ্রী ।যথার্থ জ্ঞান উদ্দেশ্য বা প্রমতা , বিধেয় বা প্রমেয়া ও জ্ঞানের উৎস অর্থাৎ প্রমাণ এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উপলব্ধি দু'রকমের আলোচনা এবং বিবেচনা। বিশ্লেষণ সংশ্লেষ বা কোন তথ্যকে মনে মনে অনুধাবন করে বিবেচনা বা বস্তুর প্রত্যক্ষ ধারণা করা হয় ।আর বস্তুর সরাসরি অনুধাবন কে আলোচনা বলা হয় ।অনুমান দু'রকমের বিতঃও অবিতঃ। চিরন্তন হ্যা বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা বিত কে সনাক্ত করা হয়। চিরন্তন না-বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা অবিতঃ কে সনাক্ত করা হয়। পূর্ব পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে বিত লাভ হয় তাকে পুরাভাত বলে ।বর্তমান বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা যে বিত অর্জিত হয় তাকে সময়তদ্রষ্টা বলে ।অবিতা কে কখনো কখনো শেষাভাত বলা হয়। এই দর্শন মতে প্রমাণ বা শব্দ হিসাবে লৌকিক ও বৈদিক সমস্ত শ্রুতি ও বেদ নির্ভর লেখাগুলিকে ধরা হয়ে থাকে। আত্ম অনুভূতি এই দর্শন মতে জ্ঞান অর্জনের প্রধান উৎস। বৌধিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সংবেদন অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বৃদ্ধি এই দর্শন মতে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। পরিশেষে বলা যায় এই দর্শন মতে quality of life অর্থাৎ জীবনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার লক্ষ্য। পরবর্তী ভারতীয় দার্শনিক মতবাদটি হল যোগ। ঋষি পতঞ্জলি এর প্রবক্তা। সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে এর বহুবিধ মিল আছে। বলা ভাল সাংখ্যদর্শনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হল যোগ। এই দর্শন মতে উপলব্ধি দু'রকমের নির্বিকল্প ও সবিকল্প ।কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা কে নির্বিকল্প বলে ,এরপর যে মানসিক বিশ্লেষণ চলে তাকে সবিকল্প বলে। 25টি উপাদান দ্বারা মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয় এই দর্শন মতে তা ধরা হয়। এই 25 টি বিষয়ের মধ্যে প্রকৃতি, মহৎ ,অহংকার, মন ,ইন্দ্রিয়, পাঁচটি তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদান এবং পাঁচটি gross এলিমেন্ট বা মূল উপাদান এবং পুরুষ আছে। পুরুষ ,প্রকৃতি এবং ঈশ্বর মিলে মহৎ বা বুদ্ধি তৈরি হয় ।ইন্দ্রিয় ,অঙ্গ ও মন দ্বারা অহংকার বা জ্ঞান অর্জিত হয়। এই অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটে। এই দর্শন মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল মন, ইন্দ্রিয় ,চালন অঙ্গ। মানসিক বিশ্লেষণ দ্বারা নিজেকে মডিফাই বা উৎকর্ষতা বিধান করাই হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য। এভাবেই অর্জিত হয় সঠিক জ্ঞান বা প্রমা ।তৎপরতা বা প্রয়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দর্শনের মূল নীতি। দৈহিক উন্নতি ও মানসিক প্রগতি যোগ দর্শন এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ।আত্ম-উপলব্ধি শিক্ষার শেষ লক্ষ্য। নীতি প্রশিক্ষণ মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হয় । activities বা সক্রিয়তা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠদান এক্ষেত্রে শিক্ষাদানের প্রধান পন্থা। ভারতীয় দর্শনের একটি ভিন্নতর ধারা হলো চার্বাক দর্শন। চার্বাক দর্শন বেদ নির্ভর দর্শন নয়। এই দর্শনের স্রষ্টা বৃহস্পতি। এই দর্শনে জ্ঞানতত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব বা প্রত্যক্ষ উপলব্ধি এই দর্শন মতে জ্ঞানের একমাত্র উৎস । জ্ঞান অর্জনে অনুমান, কথ্য প্রবচন, তুলনা প্রভৃতির কোনো ভূমিকা নেই। ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব উপলব্ধি একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানের উৎস । অন্য উৎসগুলি সুপরিকল্পিতভাবে যুক্তি দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া বাধ্যতামূলক। দর্শন মতে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যায় পার্থিব বস্তু, বাস্তব যুক্তির অবতারণা করা হয়। কোন কাল্পনিক বা অবাস্তব সত্তা যেমন ঈশ্বর ,কর্মফল, পুনর্জন্ম ইত্যাদির অস্তিত্ব এই দর্শন বিশ্বাস করে না। এই দর্শনের মূল বৈচিত্র হলো এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না কারণ ঈশ্বরকে বাস্তবে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। চার্বাকপন্থীদের যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ভগবানের উৎস যদি না থাকে তবে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কে ?বা এই মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা কে?
মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদিও অধিকার বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝানো হয় তা এখন পর্যন্ত একটি দর্শনগত বিতর্কের বিষয়। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে, যখন আমরা দেখছি যে, মানুষের অধিকারসমূহ আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানির কারণে বার বার লংঘিত হচ্ছে। প্রথমত একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধিনস্তদের অধিকার রক্ষা করবে। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র এবং তৃতীয়ত আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর, ১৯৫০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।
বিজয়নগর সাম্রাজ্য (কন্নড়: ವಿಜಯನಗರ ಸಾಮ್ರಾಜ್ಯ, Vijayanagara Sāmrājya; তেলুগু: విజయనగర సామ్రాజ్యము, Vijayanagara Sāmrājyamu) ছিল দক্ষিণ ভারতের একটি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য। পর্তুগিজরা এই সাম্রাজ্যকে বিসনাগা রাজ্য নামে অভিহিত করে। ১৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে (প্রথম) হরিহর ও তার ভ্রাতা (প্রথম) বুক্কা রায় এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ ভারতে ইসলামি আক্রমণ প্রতিহত করে এই সাম্রাজ্য নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। ১৬৪৬ সাল পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১৫৬৫ সালে দাক্ষিণাত্য সুলতানির নিকট যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত ঘটে। এই সাম্রাজ্য তার রাজধানী বিজয়নগরের নামে চিহ্নিত। বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পিতে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পেজ, ফার্নাও নানস ও নিকোলো ডি কন্টি প্রমুখের রচনা এবং স্থানীয় সাহিত্য থেকে এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। বিজয়নগরের শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রূপ অনুসরণীয় হবে।১০ই এপ্রিল ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনী সহ বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধীত হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে পঞ্চম সংশোধনী , সপ্তম সংশোধনী , ত্রয়োদশ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের আদেশে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায় এরূপ কোনো সংশোধনী এতে আনা যাবে না; আনা হলে তা হবে এখতিয়ার বহির্ভূত।বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়;- সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা বিধৃত আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা -কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
গুপ্ত সাম্রাজ্য (সংস্কৃত: गुप्त राजवंश, Gupta Rājavaṃśa) ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্য। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় ৩২০ থেকে ৫৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে এই সাম্রাজ্য প্রসারিত ছিল। মহারাজ শ্রীগুপ্ত ধ্রুপদি সভ্যতা-র আদর্শে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। গুপ্ত শাসকদের সময়/শাসনামলে ভারতে যে শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপিত হয়েছিল, তার ফলশ্রুতিতে দেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করতে সক্ষম হয়। গুপ্তযুগকে বলা হয় ভারতের স্বর্ণযুগ। এই যুগ ছিল আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাস্তুবিদ্যা, শিল্প, ন্যায়শাস্ত্র, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্ম ও দর্শনের বিশেষ উৎকর্ষের যুগ; বর্তমান হিন্দু সংস্কৃতি মূলত এই যুগেরই ফসল। গুপ্ত যুুগের আমলে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি যেমন কালিদাস, আর্যভট্ট, বরাহমিহির, বিষ্ণু শর্মা -এর অবির্ভাব হয়েছিলো।
কোণার্ক সূর্য মন্দির (ওড়িয়া: କୋଣାର୍କ ସୂର୍ଯ୍ୟ ମନ୍ଦିର) ১৩শ-শতাব্দীতে নির্মিত ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার কোণার্ক শহরে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয় যে, মন্দিরটি ১২৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব গঙ্গ রাজবংশের প্রথম নরসিংহদেব এটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দির কমপ্লেক্সটি একটি বিশাল রথের আকৃতিতে (সূক্ষ্ম কারুকার্যময় পাথরের চাকা, স্তম্ভ ও দেওয়াল সহ) তৈরি করা হয়েছে। কাঠামোর একটি প্রধান অংশ এখন ধ্বংসাবশেষ। মন্দিরটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং ভারতে সাতটি বিস্ময়ের বিভিন্ন তালিকাতেও রয়েছে। মন্দিরটি পু্রী থেকে ৩৫ কিমি এবং ভুবনেশ্বর থেকে ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত।
নারী (বাংলা উচ্চারণ: [নারী] (শুনুন)) বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়। এর বিপরীত পুরুষ, নর প্রভৃতি। সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)। ‘নারী’ শব্দটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ‘মেয়ে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় স্ত্রী-শিশু বা কিশোরীর ক্ষেত্রে। তাছাড়া বয়সের বাধা ডিঙিয়েও নারী শব্দটি সমগ্র স্ত্রী-জাতিকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন: নারী অধিকার দ্বারা সমগ্র স্ত্রী জাতির প্রাপ্য অধিকারকে বোঝানো হয়।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন সরকারে থাকার সময় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইংরেজি: United States of America; উচ্চারণ: ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা) উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য, একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা ও পাঁচটি স্বশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটি "আমেরিকা" নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আটচল্লিশটি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত; এই অঞ্চলের উত্তরে কানাডা ও দক্ষিণে মেক্সিকো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত; আলাস্কার পূর্ব সীমান্তে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রাশিয়া অবস্থিত। হাওয়াই অঙ্গরাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে পাাঁচটি অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীন।
সত্যাগ্রহ (সংস্কৃত: सत्याग्रह) মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (যিনি মহাত্মা গান্ধী নামেও পরিচিত) প্রতিষ্ঠিত একটি দর্শন এবং অহিংস প্রতিরোধের অনুশীলন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী সত্যাগ্রহের চর্চা করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। তার এই তত্ত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার আপার্টহাইট এবং গণঅধিকার আন্দোলনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্টিন লুথার কিং ও জেমস বেভেলের কর্মসূচি সহ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। যারা সত্যাগ্রহের চর্চা করেন তাদের সত্যাগ্রহী বলা হয়।
জাতিসংঘ (অপর নাম: রাষ্ট্রসংঘ) বিশ্বের জাতিসমূহের একটি সংগঠন, যার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে লুপ্ত লীগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়।
যৌনসঙ্গম (যৌনমিলন, সঙ্গম, মৈথুন, রতিক্রিয়া, রতিমিলন; যৌন সংসর্গ, যৌন সহবাস, সহবাস ইত্যাদি) হচ্ছে একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা মূলত যৌনআনন্দ বা প্রজনন বা উভয় ক্রিয়ার জন্য একজন পুরুষের উত্থিত শিশ্ন একজন নারীর যোনিপথে অনুপ্রবেশ করানো ও সঞ্চালনা করাকে বোঝায়। অন্যান্য অন্তর্ভেদী যৌনসঙ্গমের মধ্যে রয়েছে পায়ুসঙ্গম (লিঙ্গ দ্বারা মলদ্বার অনুপ্রবেশ), মুখমৈথুন, অঙ্গুলিসঞ্চালন (আঙ্গুল দ্বারা যৌন অনুপ্রবেশ), যৌনখেলনা ব্যবহার দ্বারা অনুপ্রবেশ (বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন)। এই সকল কার্যক্রম মূলত মানবজাতি কর্তৃক দুই বা ততোধিকের মধ্যেকার শারীরিক ও মানসিক অন্তরঙ্গতা জনিত পরিতোষ লাভের জন্য এবং সাধারণত মানব বন্ধনে ভূমিকা রাখতে সম্পাদিত হয়ে থাকে।যৌনসঙ্গম বা অপরাপর যৌনকর্ম কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, যা যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর উপর প্রভাব রাখতে পারে। যদিও যৌনসঙ্গম, নির্দিষ্টভাবে মৈথুন বলতে সাধারণত শিশ্ন-জরায়ুজ অনুপ্রবেশ ও সন্তান উৎপাদনের সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করা হয়, এর দ্বারা সাধারণভাবে অন্তর্ভেদী মুখমৈথুন ও বিশেষত শিশ্ন-পায়ুজ সঙ্গমকেও নির্দেশ করা হয়। এটি সাধারণত যৌন অনুপ্রবেশকে নির্দেশ করে, যেখানে অননুপ্রবেশকারী যৌনতাকে "বহির্সঙ্গম" নামে নামকরণ করা হয়, কিন্তু অনুপ্রবেশকারী যৌনকর্মকে যৌনসঙ্গম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যৌনতা বা ইংরেজি ভাষায় সেক্স, প্রায়শই যৌনসঙ্গমের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যবহৃত রূপ, যা দ্বারা যে কোন প্রকারের যৌনক্রিয়াকে বোঝানো হতে পারে। যেহেতু এসকল যৌনকর্মের সময়ে মানুষ যৌনবাহিত সংক্রমণের সংস্পর্শের ঝুঁকিতে থাকতে পারে, নিরাপদ যৌনচর্চার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, যদিও অনাভেদী যৌনতায় সংক্রমণ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়ে থাকে।বিভিন্ন আইনি বিধিমালা যৌনসঙ্গমমের সামাজিক অনুমতিপ্রদানের জন্য বিভিন্ন আইন ও রীতিনীতির মাধ্যমে বৈবাহিক রীতির প্রবর্তন, প্রচলন ও সমর্থন করেছে এবং বেশ কিছু যৌনকর্মের বিপরীতে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনকে স্থান দিয়েছে, যেমন বিবাহপূর্ব ব্যভিচার ও বিবাহপরবর্তী পরকীয়া, পায়ুকাম, পশুকাম, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে যৌনচর্চা ও অজাচার। ধর্মীয় বিশ্বাসও যৌনসঙ্গমসহ অন্যান্য যৌনাচার বিষয়ক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যেমন কুমারীত্ব বিষয়ক সিদ্ধান্ত, অথবা আইনি বা সরকারী নীতিমালা সম্পর্কিত বিষয়াবলি। বিভিন্ন ধর্মভেদে ও একই ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীভেদে যৌনতা সম্পর্কিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও কিছু বিষয়ে অভিন্নতা রয়েছে, যেমন ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা।
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বৃটেন একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে।
আবু রায়হান আল বিরুনি বা আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি (ফার্সি: ابوریحان محمد بن احمد بیرونی) (৯৭৩- ১০৪৮), ছিলেন মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। তার পূর্ণ নাম "আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি"। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি আল-বেরুনি নামে পরিচিত। রুশীয় তুর্কিস্তানের খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি আল-বিরুনি শহর নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন গণিত, জ্যোতিঃপদার্থবিদ, রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক, পঞ্জিকাবিদ, দার্শনিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনির কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, "আল-বেরুনি শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন।” "
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (চীনা: 中国 চুংকুও) পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ১৪৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র। চীনের সাম্যবাদী দল দেশটি শাসন করে। বেইজিং শহর দেশটির রাজধানী। গণচীনের শাসনের আওতায় পড়েছে ২২টি প্রদেশ, পাঁচটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল, চারটি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা (বেইজিং, থিয়েনচিন, সাংহাই এবং ছুংছিং), এবং দুইটি প্রায়-স্বায়ত্বশাসিত বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল (হংকং এবং মাকাউ)। এছাড়াও চীন তাইওয়ানের ওপরে সার্বভৌমত্ব দাবী করে আসছে। দেশটির প্রধান প্রধান নগর অঞ্চলের মধ্যে সাংহাই, কুয়াংচৌ, বেইজিং, ছোংছিং, শেনচেন, থিয়েনচিন ও হংকং উল্লেখযোগ্য। চীন বিশ্বের একটি বৃহৎ শক্তি এবং এশিয়ার মহাদেশের একটি প্রধান আঞ্চলিক শক্তি।চীনের আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। স্থলভূমির আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ৩য়/৪র্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র (বিতর্কিত)।। সামগ্রিক আয়তনের বিচারে ও পরিমাপের পদ্ধতিভেদে এটি বিশ্বের তৃতীয় বা চতুর্থ বৃহত্তম এলাকা। চীনের ভূমিরূপ বিশাল ও বৈচিত্র্যময়। দেশটির অনুর্বর উত্তরাংশে অরণ্য স্টেপ তৃণভূমি এবং গোবি ও তাকলা মাকান মরুভূমি যেমন আছে, তেমনি এর আর্দ্র দক্ষিণাংশে আছে উপক্রান্তীয় অরণ্যসমূহ। হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালা, পামির মালভূমি ও থিয়েন শান পর্বতমালা চীনকে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়া থেকে ভৌগলিকভাবে আলাদা করেছে। ইয়াংসিকিয়াং নদী (বিশ্বের ৩য় দীর্ঘতম) ও পীত নদী (বিশ্বের ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম) তিব্বতের মালভূমি থেকে উত্সারিত হয়ে পূর্বের জনবহুল অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪,৫০০ কিলোমিটার (৯,০০০ মা)। বোহাই উপসাগর, পীতসাগর, পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর এর সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ করেছে। চীনের উত্তরে রয়েছে মঙ্গোলিয়া; উত্তর পূর্বে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া; পূর্বে চীন সাগর; দক্ষিণে ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, ভারত, ভূটান, নেপাল; দক্ষিণ পশ্চিমে পাকিস্তান; পশ্চিমে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কির্গিজিস্তান ও কাজাকিস্তান। এই ১৪টি দেশ বাদে চীনের পূর্বে পীত সাগরের পাশে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান; দক্ষিণ চীন সাগরের উল্টো দিকে আছে ফিলিপাইন।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হিন্দি पंचायत থেকে। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে যে স্বশাসিত স্বনির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয় এক সমষ্টিগত চেতনা। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির লোকপ্রচলিত অর্থ হয়ে দাঁড়ায় ‘পাঁচ জনের জন্য’। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় স্তরের সরকার। বর্তমানে গ্রামবাংলাকে কেন্দ্র করে যে প্রশাসনিক, জনকল্যাণমূলক, বিচারবিভাগীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত, তাকেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নামে অভিহিত করা হয়। ১৮৭০ সালে প্রথম বঙ্গীয় গ্রাম চৌকিদারি আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক ভারতে এই ব্যবস্থা তৃণমূলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন পাস হয় ও সংবিধান সংশোধন করা হয়। ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৫৭ ও ১৯৬৩ সালের আইন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে নতুন আইনের মাধ্যমে চালু হয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনী অনুসারে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত আইনটিকেও পুনরায় সংশোধিত করা হয়।
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র (ইংরেজি: Universal Declaration of Human Rights (UDHR)) একটি ঘোষণাপত্র। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই ঘোষণা প্রদান করা হয়। প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সনদ ঘোষিত হয়।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (সাধারণত বেগম রোকেয়া নামে অধিক পরিচিত; ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) হলেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলার 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি' জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও শ্লেষাত্মক রচনায় রোকেয়ার স্টাইল ছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। উদ্ভাবনা, যুক্তিবাদিতা এবং কৌতুকপ্রিয়তা তার রচনার সহজাত বৈশিষ্ট্য। তার প্রবন্ধের বিষয় ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। বিজ্ঞান সম্পর্কেও তার অনুসন্ধিৎসার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রচনায়। মতিচূর (১৯০৪) প্রবন্ধগ্রন্থে রোকেয়া নারী-পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিক্ষার অভাবকে নারীপশ্চাৎপদতার কারণ বলেছেন। তার সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) নারীবাদী ইউটোপিয়ান সাহিত্যের ক্লাসিক নিদর্শন বলে বিবেচিত। পদ্মরাগ (১৯২৪) তার রচিত উপন্যাস। অবরোধ-বাসিনীতে (১৯৩১) তিনি অবরোধপ্রথাকে বিদ্রূপবাণে জর্জরিত করেছেন।রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শ উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর ৯ই ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস উদযাপন করে এবং বিশিষ্ট নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করে।
মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০ - ৮ জুন ৬৩২; আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ), পূর্ণ নাম : মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم) হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী, (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু), তথা "বার্তাবাহক" (আরবি : الرسول আর-রাসুল), যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষ) মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন শিশু বয়সে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন। তিন বছর পর ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন, এবং ঘোষণা দেন "আল্লাহ্ এক" ও তার নিকট নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত, এবং ইসলামের অন্যান্য নবীদের মত তিনিও আল্লাহর প্রেরিত দূত।মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে "আল্লাহর বাণী" বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামী আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।