The most-visited বাংলা Wikipedia articles, updated daily. Learn more...
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে সরকার কর্তৃক জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্রটি জারি করা হয়েছিল। শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে?
২০১৮-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০১৮-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বাতিলকৃত কোটা পুনরায় বহাল করে। যার ফলে পুনরায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জ একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা যার বিবৃত উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন করা এবং জাতিসমূহের কর্মকাণ্ডকে সমন্বয় করার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। জাতিসংঘের সদর দফতর নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। এছাড়া জেনেভা, নাইরোবি, ভিয়েনা ও হেগ শহরে সংস্থাটির অন্যান্য দফতর রয়েছে।
আবু সাঈদ (২০০১ - ১৬ জুলাই ২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী। তিনি এই আন্দোলনের রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালে একজন পুলিশ সদস্যের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কোটা আন্দোলনকারীরা তাকে আন্দোলনের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আরবি: إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) হল কুরআনের একটি আয়াত (বাক্য) বা দোয়া, যার বাংলা অর্থ হলো "আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো"। এটি ইস্তিরজা' (আরবি: اِسْتِرْجَاع, অনুবাদ 'প্রত্যাবর্তন') নামেও পরিচিত। সাধারণত মুসলমানরা তাদের বেদনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে বাক্যটি উচ্চারণ করে, বিশেষ করে যখন একজন মুসলিম ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলাম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে ৩ অক্টোবর তিনি অবসরে যান। তিনি বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছন। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর, পিতার কর্মস্থল সিলেটে মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্ম। তার নাম আগে ছিল বাবুল। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক পরিবেশে জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি তার প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। ১৯৭১ সালের ৫ মে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক নদীর ধারে তার পিতাকে গুলি করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া জাফর ইকবালকে পিতার কবর খুঁড়ে তার মাকে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারটি বিশ্বাস করাতে হয়েছিল। জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে স্নাতক পাশ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অর্জন করতে যান। তার বিষয় ছিল "প্যারিটি ভায়োলেশন ইন হাইড্রোজেন অ্যাটম" (হাইড্রোজেন পরমাণুতে সমতা লঙ্ঘন)। সেখানে ১৯৮২ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। ড. জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে অনার্সে দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান ও ১৯৮২ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পরে, জাফর ইকবাল ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (ক্যালটেক) ডক্টরেটোত্তর গবেষক হিসেবে কাজ করেন (প্রধানত নরম্যান ব্রিজ ল্যাবরেটরি অফ ফিজিক্সে)। এরপর তিনি বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর)-এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন (এটি বেল ল্যাবস থেকে পৃথক একটি কর্পোরেশন, বর্তমানে যা টেলকোরডিয়া টেকনোলজিস নামে পরিচিত)। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটি ত্যাগ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থেকে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। জাফর ইকবাল বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে গণিতকে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা পালন করেন। ২০১১ সালে, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য রোটারি সিড পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এনসিটিবির পাঠ্যবই "সহজ" ও "শিক্ষার্থী বান্ধব" করার উদ্যোগ নেয়। এর আওতায় ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়। এই ১২টির ৬টি বই জাফর ইকবাল এবং মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পরিমার্জন করা হয়। জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। দাবিটিকে মিথ্যে প্রমান করতে তিনি গল্পটির চরিত্রগুলোকে নিয়ে আরও কিছু গল্প রচনা করেন এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম প্রশংসা করেন। আমেরিকাতে বসেই তিনি বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন, প্রতি বইমেলাতে তার নতুন সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয়। তিনি দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ সহ একাধিক পত্রিকায়সাদাসিধে কথা নামে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তার লেখা কলামগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে রাজনীতি এবং দেশের সমসাময়িক ঘটনা। তবে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর নিজের লেখা এক কলামে সাদাসিধে কথা থেকে বিরতি নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ২০২০ কে একটি 'দুঃখের বছর' বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তার অবদান রয়েছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে "নিউরনে অনুরণন" ও "নিউরনে আবারো অনুরণন" বই দুটি উল্লেখযোগ্য। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। তার বোন তিনজন- সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রুখসানা আহমেদ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৪ শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৫ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক, ২০০২ খালেদা চৌধুরি সাহিত্য পদক, বাংলা ১৪১০ শেলটেক সাহিত্য পদক ২০০৩ ইউরো শিশুসাহিত্য পদক ২০০৪ মোহা.
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের (প্রায় ১২৪৩ মাইল) অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলাকে ইসলামীকরণ তথা আরবিকরণের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে আরবি হরফে বাংলা লিখন অথবা সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। আবার, সমগ্র পাকিস্তানের সকল ভাষা লাতিন হরফে লেখার মাধ্যমে বাংলার রোমানীকরণের প্রস্তাবও করা হয়। এসকল ঘটনার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ মাতৃভাষা বাংলার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ই ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ.
আসিফ নজরুল (জন্ম: ১২ জানুয়ারি ১৯৬৬) একজন বাংলাদেশি লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। জীবিকাসূত্রে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। জন্মসূত্রে তার নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। টিভি টকশো ও তার কলামে সাহসী রাজনীতি বিশ্লেষণের জন্য তিনি বিশেষভাবে খ্যাত। তিনি দশের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি প্রথম অ-ইউরোপীয় এবং প্রথম এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা এবং সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাথে প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকাণ্ড সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
টিয়ার গ্যাস বা কাঁদানে গ্যাস (ইংরেজি: Tear gas) এর অন্য নাম(ক্লোরোপিকরিন) কয়েক ধরনের রাসায়নিক যৌগের একীভূত নামকরণ। প্রকৃতপক্ষে এটি কোন গ্যাস নয়। মিহি গুড়ো পাউডার কিংবা তরলের অতি ক্ষুদ্রকণার সমষ্টি নিয়ে এ গ্যাস গঠিত। গুড়োয় ক্ষারজাতীয় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। এর প্রভাবে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণার উপস্থিতি ঘটায়। সাময়িকভাবে টিয়ার গ্যাসের প্রভাবে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চোখ অন্ধত্বের পর্যায়ে উপনীত হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
শরিফুল হক ডালিম (জন্ম: ১৯৪৬ ) মেজর ডালিম নামে পরিচিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। শেখ মুজিব নিহত হবার পর মেজর ডালিম পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) বাংলাদেশে বেতারে নিজেই হত্যার সাথে জড়িত থাকার ঘোষণা দেন। ৭৫'র পরবর্তি বিভিন্ন সরকার তাকে বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে তাকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়।
বাংলাদেশ () দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে প্রায় ১৭ কোটিরও অধিক জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় মেঘের সাথে মিশে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
প্লাটুন একটি মিলিটারি ইউনিট যা সাধারণত দুই বা চারটি সেকশন বা স্কোয়াড্রন নিয়ে গঠিত এবং এতে প্রায় ১৬ থেকে ৫০ জন সৈন্য থাকে। প্লাটুন একটি কম্পানির অংশ, যা তিন, চার বা পাঁচটি প্লাটুন নিয়ে গঠিত। একজন কমিশন্ড অফিসারের নেতৃত্বে এমন সবচেয়ে ছোট মিলিটারি ইউনিট হল প্লাটুন। একটি প্লাটুনে প্লাটুন লিডার বা প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাধারণত একজন লেফটেনেন্ট। তার সহকারী হিসাবে থাকেন একজন প্লাটুন সার্জেন্ট যিনি একজন জ্যেষ্ঠ নন-কমিশন্ড অফিসার।
সেনাপ্রধান (চীফ অব আর্মি স্টাফ বা সংক্ষেপে সিএএস) কিংবা সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগত প্রধান/প্রধান কর্মকর্তা। ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর থেকে সেনাপ্রধান তার কার্যাবলী পরিচালনা করেন। সেনাপ্রধানরা চার তারকা জেনারেল বা পূর্ণ জেনারেল পদমর্যাদার হয়ে থাকেন তবে মঈন উদ্দিন আহমেদের আগে সেনাপ্রধানরা পূর্ণ জেনারেল ছিলেন না, ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল ছিলেন যদিও এম এ জি ওসমানী চার তারকা জেনারেল ছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১; ১২ আশ্বিন ১২২৭ – ১৩ শ্রাবণ ১২৯৭ বঙ্গাব্দ) ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ছিলেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)
এক্স এক্স এক্স এক্স (ইংরেজি: XXXX) কানাডীয় নৃত্য-পাঙ্ক ব্যান্ড ইউ সে পার্টি দলের তৃতীয় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের অ্যালবাম (পূর্বনাম ইউ সে পার্টি!
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলো ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, পুলিশ ও ইপিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পর অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গণবিদ্রোহ দমনে পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান ও বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অধিকাংশ ইসলামি দলগুলোর সমর্থন লাভ করে। সেনাবাহিনীর অভিযানে সহায়তার জন্য তারা বিভিন্ন দলের লোকজন বিশেষ করে পাকিস্তান সমর্থনকারী ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী— রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু-ভাষী বিহারিরাও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, উচ্ছেদ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং আরও তিন কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়। বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেনারেল এম. এ. জি.
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। পরে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো সামরিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ঘটে। হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের আদর্শিক পটপরিবর্তন বলে বিবেচিত। লরেন্স লিফশুলৎজ এই হত্যাকাণ্ডের সামগ্রিক ঘটনাবলিকে মার্কিন-পাকিস্তানপন্থী ও ভারত-সোভিয়েতপন্থী দুই অক্ষশক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্নায়ুযুদ্ধের সহিংস বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেন। বর্তমানে ১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশের ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
রাজাকার বা রেজাকার হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বাঙালি এবং উর্দুভাষী অবাঙালি অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্যে লড়াইরত মুক্তিবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
সরকারী চাকরীতে কোটার পরিমাণ কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার দাবিতে বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট তিনবার কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল। এখন অবধি এই আন্দোলনের পক্ষে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং বিপক্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাধীন বাংলাদেশ সরকার, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সমমতাবলম্বী সংগঠনসমূহ। সর্বপ্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলন হয় ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আন্দোলনের পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে পরিপত্র ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এই পরিপত্রটি ২০২৪ সালের অবৈধ ঘোষণা করায় পুনরায় আন্দোলন শুরু হয়। প্রত্যেকবার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়।
সরকার বা শাসনব্যবস্থা (ইং: Government) হলো কোনো দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যার মাধ্যমে দেশটির শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সরকারের মৌলিক দায়িত্ব জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা বিধান করা, সমাজের শান্তি বজায় রাখা, মানুষের জান-মাল রক্ষা করা এবং বিবাদের ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনা করা। সরকার তার ওপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ পালনের স্বার্থে রাজস্ব আহরণ করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তা ব্যয় করে থাকে।
স্বামী বিবেকানন্দ (১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২; জন্মনাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব স্বামী বিবেকানন্দের। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাটি হল, "আমেরিকার ভগিনী ও ভ্রাতৃবৃন্দ" ...," ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত চিকাগো বক্তৃতা, যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন। স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব ধর্ম মহা সভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যাণ্ড ওরে ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তার রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল "খণ্ডন-ভব-বন্ধন" (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও "নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি"। এছাড়া "নাচুক তাহাতে শ্যামা", "৪ জুলাইয়ের প্রতি", "সন্ন্যাসীর গীতি" ও "সখার প্রতি" তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। "সখার প্রতি" কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
মুহররম (আরবি: محرم) হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। চারটি পবিত্রতম মাসের মধ্যে এটি একটি। মুহররম শব্দটি আরবি যার অর্থ পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মুহররম মাস পবিত্র হিসাবে গণ্য। মহররমের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন, যাকে আশুরা বলা হয়ে থাকে। বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষি এই মাসটি । মহররম মাসের পরবর্তী মাসের নাম সফর।
আশুরা (আরবি: عَاشُورَاء, ʿĀshūrāʾ, [ʕaːʃuːˈraːʔ]) হলো ইসলাম ধর্মে একটি স্মরণীয় দিবস। এটি প্রতি বছর ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহররমের ১০ তারিখে ঘটে। শিয়া মুসলমানদের মধ্যে আশুরা বৃহত্তর শোকের বিশাল বিক্ষোভের মাধ্যমে পালিত হয় কারণ এটি হোসাইন ইবনে আলীর (মুহাম্মদের নাতি) মৃত্যুকে চিহ্নিত করে যাকে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার যুদ্ধের সময় শিরশ্ছেদ করা হয়েছিলো। সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে আশুরা উদযাপন রোজা রাখার মাধ্যমে পালন করা হয় কেননা এটি মূসা ও ইস্রায়েলীয়দের পরিত্রাণের দিনটিকে চিহ্নিত করে যারা এই দিনে বাইবেলে চিত্রিত মিশর থেকে সফলভাবে পালিয়ে গিয়েছিল (যেখানে তারা ক্রীতদাস হিসেবে নির্যাতিত হতো) ও মূসা লোহিত সাগরকে বিভক্ত করার জন্য আল্লাহর শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন। হোসাইনের মৃত্যুকে সুন্নিদের কাছে একটি বড় বিয়োগান্তক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নির্দিষ্ট বিধানের উপর নির্ভর করে প্রকাশ্যে শোক প্রদর্শনকে নিরুৎসাহিত বা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহ হলো ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালিন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা সংগঠিত বিদ্রোহ। বিদ্রোহের পর সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে বিজিবি করা হয়। বর্তমানে বিজিবি নামে সংস্থাটি পরিচিত। এটি একটি আধা-সামরিক বাহিনী যার প্রধান কাজ বাংলাদেশের সীমানা পাহারা দেয়া। সে হিসেবে এরা সীমান্তরক্ষী বাহিনী নামেও পরিচিত। বিদ্রোহী বিডিআর সৈন্যরা পিলখানায় বিডিআর সদর দফতর দখল করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিককে হত্যা করে। তারা বেসামরিক লোকদের উপর গুলি চালিয়েছিল, তারা অনেক অফিসার এবং তাদের পরিবারকে জিম্মি করেছিল, স্থাপনা ও সম্পদ ভাংচুর করেছিল এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়েছিল। বিদ্রোহের দ্বিতীয় দিনে বিডিআর ক্যাম্প আছে এমন অন্য ১২টি শহরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। সরকারের সাথে একাধিক আলাপ-আলোচনার পরে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়। অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে এ বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
সাপ হাত-পা বিহীন দীর্ঘ শরীরের, মাংসাশী, ধূর্ত এক প্রকার সরীসৃপ। এদের চোখের পাতা এবং বহিকর্ণ না থাকায়, সাপ পা-বিহীন টিকটিকি থেকে আলাদা। বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, প্রাণী জগৎ (প্রাণী) জগতের, কর্ডাটা (কর্ডটা) পর্বের, ভার্টিব্রাটা (মেরুদণ্ডী) উপপর্বের বা শ্রেণীর, রেপটিলিয়া (সরোপ্সিডা) শ্রেণীর , Squamata বর্গের, Serpentes (সার্পেন্টেস) উপবর্গের সদস্যদের সাপ বলে অভিহিত করা হয়। Squamata (স্কোয়ামান্টা) বর্গের সকলের মতোই সাপ এক্টোথার্মিক [from the Greek ἐκτός (ektós) "outside" and θερμός (thermós) "hot") যার অর্থ হল একটি অংশ যাতে অভ্যন্তরীণ তাপ উতপন্নকারী জৈবিক উৎস রয়েছে। এখন পর্যন্ত যতোদূর জানা যায়, সাপের সর্বমোট ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গণ, এবং ২,৯০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। সুদূর উত্তর গোলার্ধের স্কান্ডিনেভিয়া থেকে দক্ষিণে একেবারে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এদের বসবাসের বিস্তৃতি। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সকল মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা যায়, তা হতে পারে সমুদ্রের গভীরতম তলদেশে অথবা পর্বতের সুউচ্চ শানুদেশে প্রায় ষোলো হাজার ফিট (৪,৯০০ মি) ওপরে হিমালয় পর্বতমালাতেও। আবার আশ্চর্যের ব্যাপার এমন কিছু দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ আছে যেখানে সাপের দেখা পাওয়া যায় না। যেমন আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড (যদিও নিউজিল্যান্ড এর জলে পেটের কাছে হলুদ রঙ্ এমন সামুদ্রিক সাপ আর ডোরাকাটা সামুদ্রিক ক্রেইট এর দেখা পাওয়া যায়)। এদের আকার কখনও খুব ছোট, ১০ সে.মি.
শীলা আহমেদ একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী। তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কন্যা। তার অভিনয় জীবন শুরু হয় বহুব্রীহি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি কোথাও কেউ নেই (১৯৯০), প্রিয় পদরেখা (১৯৯২), হিমু (১৯৯৪) ও ওইজা বোর্ড (১৯৯৫) টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৪ সালে আগুনের পরশমণি ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত সর্বাধিক জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটক হল আজ রবিবার।
তুফান হচ্ছে ২০২৪ সালের একটি বাংলা ভাষার অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র। এসভিএফের ইউটিউব চ্যানেলে ট্রেলার ভিডিওর বর্ণনা অনুযায়ী চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের শাহরিয়ার শাকিল, রেদোয়ান রনি এবং ভারতের শ্রীকান্ত মোহতা ও মহেন্দ্র সনি। তবে বাংলাদেশে প্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির ছাড়পত্র এবং আলফা আইয়ের কর্ণধারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশী ওটিটি প্লাটফর্ম চরকি ডিজিটাল পার্টনার ও এসভিএফ আন্তর্জাতিক পরিবেশক হিসেবে কাজ করছে। এটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, মিমি চক্রবর্তী এবং মাসুমা রহমান নাবিলা। ছবিটির গল্প নব্বই দশকের বাংলাদেশের একজন গ্যাংস্টারকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটি ২০২৪ সালের ১৭ জুন বাংলাদেশে, ২৮ জুন পৃথিবীর ১৪টি দেশে এবং ৫ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায়।
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যকার দাপ্তরিক ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া, ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, ওড়িশার মত রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮.০৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং হিন্দির পরেই বাংলা ভারতে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৮.৫ কোটিরও অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও রণসঙ্গীত বাংলাতে রচিত এবং জাতীয় পর্যায়ের সকল কার্যক্রম বাংলাতে পরিচালিত হয়। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভান্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হলো বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলায় প্রায় ৭৫,০০০ পৃথক শব্দ রয়েছে, যার মধ্যে: ৫০,২৫০ (৬৭%) শব্দ "তৎসম" (সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি গৃহীত); ২১,০০০ (২৮%) শব্দ "তদ্ভব" (বাংলা ভাষার শব্দসমূহ যার উৎস পালি এবং প্রাকৃত ভাষা দ্বারা হয়েছে); "বিদেশী" শব্দ প্রায় ৫০০০ টি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ) — চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এই সময় আমি, তুমি ইত্যাদি সর্বনাম এবং -ইলা, -ইবা, ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব ঘটে। মধ্য বাংলা (১৪০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ) — এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। শব্দের শেষে "অ" ধ্বনির বিলোপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফারসি ভাষার প্রভাব এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন। আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে-বর্তমান) — এই সময় ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দ থেকে বাংলায় হিন্দু ব্রাহ্মণগণ সংস্কৃত ভাষার চর্চা করত, কিন্তু স্থানীয় বৌদ্ধরা প্রাকৃত ভাষার কোন কোন রূপে (ভ্যারাইটি) কথা বলত, যাকে ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন মাগধী প্রাকৃতের পূর্ব রূপ বা ভ্যারাইটি হিসেবে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়, বাংলা ছিল হিন্দু যাজক বা পুরোহিতদের জন্য সংস্কৃত সাহিত্যের একটি কেন্দ্র, যা স্থানীয়দের কথ্য ভাষাকে প্রভাবিত করে। প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের একটি অংশ ছিল তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলি বাংলায় প্রভাবশালী ছিল। এই উপভাষাগুলিকে মাগধী প্রাকৃত বলা হয় এবং এটি আধুনিক বিহার, বাংলা ও আসামে কথিত হত। এই ভাষা থেকে অবশেষে অর্ধ-মাগধী প্রাকৃতের বিকাশ ঘটে। প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে অর্ধ-মাগধী থেকে অপভ্রংশের বিকাশ ঘটে। সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়। অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের মতো বাংলাও সংস্কৃত ও মগধী প্রাকৃত থেকে ১০০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দে বিকশিত হয়। সেসময় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় আপভ্রংশ ছিল পূর্ব অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ ("অর্থহীন ধ্বনি"), সেটা থেকেই অবশেষে আঞ্চলিক উপভাষাসমূহের বিকাশ ঘটে, এক্ষেত্রে তিনটি ভাষাদল গঠিত হয় - বাংলা–অসমীয়া ভাষাসমূহ, বিহারি ভাষাসমূহ এবং ওড়িয়া ভাষাসমূহ। অনেকে যুক্তি দেখান যে, এই ভাষাদলগুলোর পৃথকীকরণ অনেক আগেই ঘটেছে, কেউ কেউ ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের কথাও বলেন। অনেকে বলেন, মধ্যযুগে প্রাচীন সাহিত্যসমূহের অনেকগুলোকেই আর পাওয়া যায় না, যার ফলে সেসময়কার অনেক শব্দই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু ভাষা স্থির ছিল না: সেসময় ভাষার বিভিন্ন রূপ বা ভ্যারাইটির সহাবস্থান ছিল, আর সেসময়ে লেখকগণ প্রায়ই একাধিক উপভাষায় লিখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ষষ্ঠ শতাব্দীর আশেপাশে অর্ধ-মাগধী থেকে অবহট্ঠ ভাষার বিকাশ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়, এই অবহট্ঠ ভাষা কিছুসময়ের জন্য বাংলা ভাষার পূর্বপুরুষ প্রোটো-বাংলার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। প্রোটো-বাংলা ছিল পাল সাম্রাজ্য এবং সেন রাজবংশের ভাষা। চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল। সংস্কৃত থেকে যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যোগ করা হয়, তাদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়। বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। ফারসির পাশাপাশি বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিল এবং ব্যাপক হারে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রত্ন বাংলা ছিল পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা। মধ্য স্তরের বাংলা ভাষায় দুইটি সুস্পষ্ট উপস্তর দেখা যায়, আদি-মধ্য আর অন্ত্য-মধ্য। আদি-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল আনুমানিক ১৩৫০ হতে ১৪৫০ সন পর্যন্ত । চতুর্দশ শতাব্দে ও পঞ্চদশ শতাব্দে লেখা বলে নিশ্চিতভাবে নেওয়া যেতে পারে এমন কোনো রচনা মিলে না। সুতরাং ১৩৫০ হতে ১৪৫০ অবধি শতাব্দ কালের কতটা প্রাচীন বাংলার অন্তর্গত ছিল এবং কতটা আদি-মধ্য বাংলার অন্তর্গত ছিল তা নিশ্চয় করে বলবার উপায় নাই। সব প্রাচীন রচনায় অষ্টাদশ শতাব্দীর নকল করা উচিত এ পাওয়া গিয়েছে। তাই পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দের ভাষার পরিপূর্ণ রূপটি এগুলিতে প্রতিফলিত নয়। তবে চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুথি তেমনি পুরানো না হলেও মূলে হস্তক্ষেপ খুব বেশি না পড়ায় আদি-মধ্য বাংলার পরিচয় খানিকটা পাওয়া যায়। অন্ত্য-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল ১৬০১ হতে ১৮০০ সন পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে যে এই কালসীমা অত্যন্ত আনুমানিক। সাধু ভাষার পরিবর্তনের কথা মনে রাখলে অন্ত্য-মধ্য উপস্তরের শেষসীমা ১৭৫০ সন ধরাই সঙ্গত। তবে সেই সঙ্গে সাহিত্যে ব্যবহারের দিকেও লক্ষ রাখলে ১৮০০ সন ধরতে হয়। আ-কারের পরস্থিত ই-কার ও উ-কার ধ্বনির ক্ষীণতা, এবং পাশাপাশি দুই স্বরধ্বনির স্থিতি। যেমন— বড়াই > বড়াই, আউলাইল > আউলাইল। মহাপ্রাণ নাসিক্যের মহাপ্রাণতার লোপ অথবা ক্ষীণতা অর্থাৎ ‘হ্ন (ন্হ) > ন’, এবং ‘হ্ম (ম্হ) > ম’। যেমন— কাহ্ন > কান, আহ্মি > আমি। [রা] বিভক্তির যোগে সর্বনামের কর্তৃকারকের বহুবচন পদ সৃষ্টি। যেমন— আহ্মারা, তোহ্মারা, তারা। [-ইল] -অন্ত অতীতের এবং [-ইব] -অন্ত ভবিষ্যতের কতৃবাচ্যে প্রয়োগ। যেমন— “মো শুনিলোঁ” (=আমি শুনিলাম), “মোই করিবোঁ” (=মুই করিব)। প্রাচীন [-ইঅ-] বিকরণযুক্ত কর্মভাব-বাচ্যের ক্রমশ অপ্রচলন এবং ‘যা’ ও ‘ভূ’ ধাতুর সাহায্যে যৌগিক কর্মভাব-বাচ্যের সামরিক প্রচলন। যেমন— “ততেকে সুঝাল গেল মোর মহাদানে”, “সে কথা কহিল নয়”। অসমাপিকার সহিত ‘আছ্’ ধাতুর যোগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠন। যেমন— লইছে < লই + (আ)ছে, রহিলছে < রহিল + (আ)ছে (=রহিয়াছে)। যথাক্রমে বক্তার প্রাতিমুখ্য ও আভিমুখ্য বুঝাতে ‘গিয়া’ ও ‘সিয়া’ (< এসে) অসমাপিকা ক্রিয়াপদ অনুসর্গরূপে ব্যবহার। যেমন— দেখ গিয়া > দেখ গে, দেখ সিয়া > দেখ সে। ষোড়শ-মাত্রিক পাদাকুলক-পজ্ঝটিকা হতে চতুর্দশাক্ষর পয়ারের বিকাশ। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফারসি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের শব্দ স্থান পেয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ খ্রিষ্টান পুরোহিত ও ধর্মপ্রচারক ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাঁও সর্বপ্রথম ভোকাবোলারিও এম ইডিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিডো এম দুয়াস পার্তেস (পর্তুগিজ: Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes) নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদ আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ (ইংরেজি: A Grammar of the Bengal Language) নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যেখানে ছাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে গ্র্যামার অফ্ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ্ (ইংরেজি: Grammar of the Bengali Language) নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৫১-৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের প্রবল ভাষা সচেতনতার ফলস্বরূপ বাংলা ভাষা আন্দোলন নামক একটি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের নিকট বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দাবি করা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ভারতের আসাম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন। বাংলা ভাষা বঙ্গভূমির অধিবাসীদের মাতৃভাষা, যা বর্তমান স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। মূল অঞ্চলের পাশাপাশি ত্রিপুরা,দক্ষিণ আসাম এবং ভারতীয় সংযুক্ত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত বাঙালীদেরও মাতৃভাষা বাংলা। ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের বাংলা ভাষায় কথা বলা হয় এবং দিল্লি, মুম্বাই, বারাণসী এবং বৃন্দাবন সহ বঙ্গের বাইরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলা ভাষাভাষী রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালি বসবাস করেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা বাংলা। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা। ভারতে ভারতের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা একটি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হল বাংলা। এছাড়াও বাংলা ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান ভাষা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস হতে বাংলা ভাষা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে স্বীকৃত। পাকিস্তানের করাচি শহরের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে বাংলাকে গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমাদ তেজন কাব্বাহ ওই রাষ্ট্রে উপস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ৫,৩০০ বাংলাদেশি সৈনিকের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। নোবেলজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইটি বাংলা কবিতা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। অধিকন্তু, অনেকে মনে করেন যে, শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত (শ্রীলঙ্কা মাতা) মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাংলা কবিতার প্রভাবে লেখা হয়েছিল, আবার অনেকে এমনটাও মনে করেন যে জাতীয় সঙ্গীতটি প্রথমে বাংলায় রচিত হয়েছিল এবং তারপর তা সিংহলিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার দাবী জানান। বাংলার কথ্য ও লেখ্য রূপের মধ্যে বিবিধতা বর্তমান। বিভিন্ন শব্দভাণ্ডার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে বাংলায় দুই ধরনের লিখনপদ্ধতি তৈরি হয়েছে। সাধু ভাষা বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে সংস্কৃত ও পালি ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত তৎসম শব্দভাণ্ডার দ্বারা প্রভাবিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই ধরনের ভাষা বাংলা সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সাহিত্যে এই ভাষারূপের ব্যবহার নেই বললেই চলে। চলিতভাষা, যা ভাষাবিদদের নিকট মান্য চলিত বাংলা নামে পরিচিত, বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে মানুষের কথ্য বাগধারা স্থান পায়। এই লিখনশৈলীতে অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারের ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের শৈলী অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল প্রভৃতি রচনাগুলিতে এই ধরনের শৈলী সাহিত্যে জায়গা করে নেয়। এই শৈলী নদিয়া জেলার শান্তিপুর অঞ্চলে প্রচলিত কথ্য উপভাষা থেকে গঠিত হয়েছে, ফলে একে অনেক সময় শান্তিপুরি বাংলা বা নদিয়া উপভাষা বলা হয়ে থাকে। মান্য চলিত বাংলায় অধিকাংশ বাংলা সাহিত্য রচিত হলেও, কথ্য বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ মধ্যে যথেষ্ট বিবিধতা রয়েছে। কলকাতাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা মান্য চলিত বাংলায় কথা বলে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলগুলির কথ্য ভাষা মান্য চলিত বাংলার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কথ্য ভাষার সঙ্গে মান্য চলিত বাংলার খুব সামান্যই মিল রয়েছে। তবে অধিকাংশ বাঙালি নিজেদের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের সময় মান্য চলিত বাংলা সহ একাধিক উপভাষায় কথা বলতে সক্ষম বলে মনে করা হলেও অনেক ভাষাবিদ তা স্বীকার করেন না। কথ্য বাংলাতে আঞ্চলিক প্রকরণ একটি উপভাষার ধারাবাহিকতা গঠন করে। ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই উপভাষাগুলি চারটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত করেছেন - রাঢ়ী, বঙ্গ, কামরূপী উপভাষা এবং বরেন্দ্র; তবে অনেক বিকল্প শ্রেণীকরণ প্রকল্পও প্রস্তাব করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা উপভাষাগুলি (রাঢ়ী বা নদীয়া উপভাষা) আধুনিক মান্য ভাষাগত বাঙালির ভিত্তি তৈরি করে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপাখ্যানগুলিতে (বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গে শোনা অনেক যতি ও সুস্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনিকে উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হিসাবে উচ্চারণ করা হয়। পাশ্চাত্য তালব্য-মূর্ধন্য ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি চ [tɕɔ], ছ [tɕʰɔ], জ [dʑɔ] যথাক্রমে প্রাচ্যের চ [tsɔ], ছ [tsʰɔ~sɔ], জ [dzɔ~zɔ] এর সাথে সম্পর্কিত। বাংলার কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম এবং চাকমা ভাষার সুর রয়েছে বৈপরীত্য; বক্তার কণ্ঠের উচ্চারণের তীক্ষ্মতা শব্দগুলোকে পৃথক করতে পারে। খারিয়া থাট এবং মাল পাহাড়িয়া ভাষা পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও সাধারণভাবে তাদেরকে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয়। উত্তরাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও হাজং কে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলা ভাষার প্রমিতীকরণের সময় ব্রিটিশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ছিল বঙ্গভূমির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশের সীমানার পাশে অবস্থিত নদিয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বর্তমান প্রমিত রূপটি গৃহীত হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের একজন বক্তা আদর্শ বাংলায় যে শব্দ ব্যবহার করবেন তা বাংলাদেশের একজন বক্তা ব্যবহার নাও করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত নুন শব্দটির পরিবর্তে পশ্চিমপ্রান্তে লবণ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ লেখা প্রমিত বাংলায় (এসসিবি) থাকলেও কথ্য উপভাষাগুলি বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে। কলকাতা সহ দক্ষিণ-পূর্ব পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এসসিবিতে কথা বলে॥ প্রমিত চলিত থেকে কিছুটা স্বল্প পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য উপভাষাগুলি পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিম বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে যেমন মেদিনীপুরের উপভাষায় কিছু নিজস্ব শব্দ রয়েছে। তবে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক উপভাষায় কথা বলেন, এসসিবি থেকে আলাদা কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকেরা প্রমিত চলিতরূপেই লেখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপভাষাটি সাধারণ বাঙালী জনসাধারণের কাছে সহজে বোধগম্য হয় না। এমনকি এসসিবিতেও বক্তার ধর্ম অনুসারে শব্দভাণ্ডার পৃথক হতে পারে: হিন্দুরা সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত শব্দ এবং মুসলমানরা দেশীয় শব্দের পাশাপাশি ফারসি এবং আরবি ভাষার শব্দ ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ: বাংলা ভাষায় প্রচুর স্বরদ্যোতনা রয়েছে; একই অক্ষরে একাধিক স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। এর মধ্যে /oi̯/ এবং /ou̯/ দ্বয় কেবলমাত্র একটি করে স্বরবর্ণ ঐ এবং ঔ দ্বারা লেখা হয়। সর্বমোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ১৭ থেকে ৩১ এর মধ্যে রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন। সরকার (১৯৮৫) কর্তৃক প্রদত্ত একটি লেখ নিচে দেয়া হল: আদর্শ বাংলায় সাধারণত শুরুতে শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। বাংলা শব্দগুলো বিমুর্তভাবে দ্বিপর্ববিশিষ্ট; শব্দের প্রথম অক্ষরে মুখ্য শ্বাসাঘাত পড়ে এবং প্রায়ই বিজোড় অবস্থানের অক্ষরগুলোতে গৌণ শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। ফলে সহযোগিতা শব্দটি উচ্চারিত হয় shô-hô-jo-gi-ta "cooperation", যেখানে মোটাদাগ মুখ্য এবং গৌণ শ্বাসাঘাত নির্দেশ করে। স্থানীয় বাংলা ভাষায় শব্দের শুরুতে যুক্তবর্ণ থাকে না; সর্বোচ্চ ব্য-স্ব-ব্য আকারের অক্ষর হতে পারে(স্বরধনির দুপাশে ব্যঞ্জনধ্বনি)। অনেক বাঙালি এমনকি ইংরেজি কিংবা সংস্কৃত থেকে ধারকৃত শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রেও এই ধারাটি বজায় রাখে যেমন গ্রাম (ব্য-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন গেরাম(ব্য-স্ব.ব্য-স্ব-ব্য), স্কুল(ব্য-ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন ইস্কুল(স্ব-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) হিসেবে। সাধারণভাবে বাংলা লিপির তুলনামূলক বানানতাত্ত্বিক গভীরতা বেশি নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঙালীদের ধ্বনি এবং বর্ণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ-বানান অসঙ্গতি ঘটে। এক ধরনের অসঙ্গতি হল একই শব্দের জন্য লেখায় বেশ কয়েকটি বানানের উপস্থিতি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কিছু পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও, বাংলা বানান পদ্ধতি সংস্কৃত ভাষার জন্য ব্যবহৃত বানানরীতির উপর ভিত্তি করেই রচিত হচ্ছে এবং এভাবে কথ্য ভাষায় কিছু শব্দ সংযোজনের বিষয়টি বিবেচনায় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ,অঘোষ দন্তমূলীয়-তালব্য ব্যঞ্জন [ɕ]-এর জন্য তিনটি বর্ণ (শ , ষ , এবং স রয়েছে যদিও স বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন স্খলন-এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ দন্তমূলীয় উষ্মধ্বনি [s] শব্দ ধরে রাখে; যেমন [skʰɔlɔn] "স্কুল", স্পন্দন [spɔndɔn] ইত্যাদি। ষ বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যেমন কষ্ট-এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ মূর্ধন্য উষ্মধ্বনি [ʂ] শব্দ ধরে রাখে; যেমনঃ কষ্ট [kɔʂʈɔ], গোষ্ঠী [ɡoʂʈʰi] ইত্যাদি। একইভাবে,ঘোষ তালব্য-দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি [dʑ] প্রকাশ করার জন্য দুটি অক্ষর রয়েছে (জ এবং য)। তাছাড়া, আগে উচ্চারিত [ɳ] এবং লিখিত মূর্ধন্য অনুনাসিক ণ কে এখন সাধারণ আলাপচারিতায় দন্তমূলীয় [n] হিসেবে উচ্চারণ করা হয় (যখন উচ্চারণ করা হয় তখন পার্থক্য বোঝা যায়) (যদি না অপর একটি মূর্ধন্যধ্বনির যেমন ট ঠ, ড এবং ঢ-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে), তবে বানানে এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। অর্ধ-সংবৃত সম্মুখ স্বরবর্ণ [æ] বানানতাত্ত্বিকভাবে একাধিক উপায়ে নিরূপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ: এত [ætɔ], এ্যাকাডেমী [ækademi], অ্যামিবা [æmiba], দেখা [dækʰa], ব্যস্ত [bæstɔ], ব্যাকরণ [bækɔrɔn]। অন্য ধরনের অসঙ্গতিটি লেখায় যথেষ্ট ঔচ্চারণিক তথ্যের ঘাটতিসম্পর্কিত। পূর্ববর্তী ধ্বনির স্বরসঙ্গতির উপর নির্ভর করে লেখায় প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে জড়িত অন্তর্নিহিত স্বরবর্ণটি [o] কিংবা [ɔ] হতে পারে; কিন্তু লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ না পাওয়ায় তা পাঠকের জন্য দ্ব্যর্থতা তৈরি করে। তাছাড়া অন্তর্নিহিত স্বরটি প্রায়শই শব্দের শেষে ঊহ্য থাকে (যেমন: কম [kɔm]; তবে তা বানানে প্রতিফলিত না হওয়ায় নতুন পাঠকের পক্ষে এটি কঠিন করে তোলে। অনেক যুক্তব্যঞ্জন তাদের মূল ব্যঞ্জনবর্ণের চেয়ে আলাদা রূপে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ [k] এবং ষ [ʂ] যুক্ত হয়ে ক্ষ গঠন করে এবং তা [kkʰɔ](রুক্ষ উচ্চারিত হয় [rukkʰɔ]) কিংবা [kkʰo] (ক্ষতি - [kkʰot̪i]) অথবা [kkʰɔ] (যেমন ক্ষমতা এর উচ্চারণ [kkʰɔmɔt̪a]) হিসেবে উচ্চারিত হতে পারে যা কোনও শব্দে যুক্তব্যঞ্জনটির অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বাংলা লেখার ব্যবস্থাটি তাই সর্বদা উচ্চারণের সত্যিকারের সহায়ক নয়। বাংলা, অসমীয়া এবং অন্যান্য ভাষার জন্য ব্যবহৃত লিপিটি বাংলা লিপি হিসাবে পরিচিত। বাংলা এবং তার উপভাষায় বাংলা লিপি হিসেবে এবং কিছু ছোটোখাটো পরিবর্তনের সঙ্গে অসমীয়া ভাষায় অসমীয়া বর্ণমালা হিসেবে পরিচিত। নিকটবর্তী অঞ্চলের অন্যান্য সম্পর্কিত ভাষা যেমন ভারতীয় রাজ্য মণিপুরে মৈতৈ মণিপুরী ভাষাও বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে, যেখানে মৈতৈ ভাষা বহু শতাব্দী ধরে বাংলা বর্ণমালায় রচিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মৈতৈ লিপি প্রচার করা হয়েছে। বাংলা লিপি এক ধরনের শব্দীয় বর্ণমালা লিপি, যেখানে ব্যঞ্জনধ্বনির জন্য বর্ণ, স্বরধ্বনির জন্য কারচিহ্ন এবং যদি কোন কার চিহ্ন না থাকে তবে স্বয়ংক্রিয় স্বরবর্ণ হিসেবে অ ধরে নেওয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে (আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা) বাংলা বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়। আনুমানিক ১০০০ অব্দে ( অথবা ১০ম থেকে ১১শ শতাব্দীতে) ব্রাহ্মী লিপির পরিবর্তিত রূপ থেকে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও এটি পাকিস্তানে ব্যবহৃত শাহমুখি লিপির মত আরবি ভিত্তিক বর্ণমালার পরিবর্তে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে। বাংলা ভাষায় বক্রলিপিতে নয়টি স্বরধ্বনি এবং দুটি যৌগিক স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ১১ টি প্রতীক বা চিহ্ন এবং ব্যঞ্জনধ্বনি ও অন্যান্য প্রভাবকের জন্য ৩৯ টি প্রতীক ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বড় হাতের এবং ছোট হাতের বর্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্ণগুলো বাম থেকে ডানে লেখা হয় এবং ফাঁকা স্থান গুলো লিখিত শব্দসমূহ পৃথক করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা লেখায় দুটি বর্ণকে পাশাপাশি যুক্ত করার জন্য একটি সমান্তরাল রেখা টানা হয় যাকে মাত্রা বলা হয়। বাংলা লিপি আবুগিদা হওয়ায় ব্যঞ্জনবর্ণ গুলো সাধারণত উচ্চারণগত ভাষাতত্ত্ব নির্দেশ করে না বরং উহ্যভাবে স্বরধ্বনি ধরে রাখে। ফলে এগুলো প্রকৃতিগতভাবে অক্ষর। উদ্ধৃত্ত স্বরধ্বনি সাধারণত একটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। কোন রূপ স্বরধ্বনি উচ্চারণ ব্যতীত কোন একটি ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জোর প্রদান করতে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে হসন্ত (্) নামক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এই চিহ্নটি সব সময় পাওয়া যায় না; তবে যখন উচ্চারণের বৈপরীত্য দেখা যায় তখন এটি ব্যবহৃত হয়। বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনির চিত্রমূলের আবুগিডা প্রকৃতি সর্বদা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। প্রায়শই ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরসমূহে হসন্ত না থাকলেও কোন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না। সহজাত [ɔ] ব্যতীত কিছু স্বরধ্বনির পরে একটি ব্যঞ্জনাত্মক ধ্বনি উপরের, নিচে, আগে, পরে বা ব্যঞ্জনবর্ণের চিহ্নের চারপাশে বিভিন্ন স্বরবর্ণ ব্যবহার করে সর্বব্যাপী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বর লিখনরূপের নিয়ম গঠন করে শব্দস্বরূপাত্মকভাবে উপলব্ধি করা যায়। ‘কারচিহ্ন’ নামে পরিচিত এই শব্দস্বরূপগুলি স্বররূপ এবং এগুলি স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। বাংলায় স্বরবর্ণগুলো দুটি রূপ নিতে পারে: লিপির মূল তালিকাতে পাওয়া স্বতন্ত্র রূপ এবং নির্ভরশীল, সংক্ষিপ্তরূপ (উপরে বর্ণিত কারচিহ্ন)। কোনও পূর্ববর্তী বা নিম্নলিখিত ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্বরকে উপস্থাপন করতে, স্বরবর্ণের স্বতন্ত্র রূপ ব্যবহার করা হয়। অন্তর্নিহিত-স্বর-দমনকারী হসন্তের পাশাপাশি, আরও তিনটি চিহ্ন সাধারণত বাংলাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি হল উর্ধ্বধাবিত চন্দ্রবিন্দু (ঁ) দ্বারা স্বরবর্ণের অনুনাসিক এর অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয় (যেমন চাঁদ), পশ্চাদ্ধাবিত অনুস্বার ঘোষ পশ্চাত্তালব্য নাসিক্যধ্বনি (ঙ) ইঙ্গিত করে (যেমন বাংলা; "বাঙলা") এবং পশ্চাদ্ধাবিত বিসর্গ (ঃ) অঘোষ কণ্ঠনালীয় উষ্মধ্বনি (হ) (যেমন উঃ! [উঃ]" আউচ! ") বা পরবর্তী ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব (যেমন দুখখ [দুকু]" দুঃখ ") ইঙ্গিত করে। বাংলা যুক্তব্যঞ্জনসমূহ (লিখিত যুক্তব্যঞ্জন) সাধারণত সংযুক্ত হিসাবে লেখা হয়, যেখানে প্রথমে যে ব্যঞ্জনবর্ণ আসে তা পরবর্তীটির উপরে বা বাম দিকে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তিতে মাঝেমাঝে মূল রূপের চেয়ে এতটাই বিকৃত হয় যে তাকে আলাদা করে চেনা যায় না। বাংলা লিপিতে, এমন প্রায় ২৮৫টি যুক্তব্যঞ্জন রয়েছে। তবে যুক্তাক্ষর গঠনের কিছু বাহ্যিক নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছোটবেলা থেকে রপ্ত করতে হয়। সম্প্রতি, তরুণ শিক্ষার্থীদের উপর এই বোঝা হ্রাস করার লক্ষ্যে, দুটি মূল বাংলা-ভাষা অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ) এর বহু যুক্তাক্ষরের "অস্পস্ট" আকৃতির সমাধানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চেষ্টা করেছে এবং ফলস্বরূপ, আধুনিক বাংলা পাঠ্যপুস্তকে যুক্তবর্ণগুলোর আরও বেশি "স্বচ্ছ" রূপ ধারণ করা শুরু হয়েছে, যেখানে একটি যুক্তাক্ষরের ব্যঞ্জনবর্ণগুলি বাহ্যিক রূপ সহজেই প্রকাশ পায়। তবে, যেহেতু এই পরিবর্তনটি তত বিস্তৃত নয় এবং বাকী বাংলা মুদ্রিত সাহিত্যের মতো একইভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না, তাই আজকের বাংলা-শিক্ষিত বাচ্চাদের সম্ভবত নতুন "স্বচ্ছ" এবং পুরাতন "অস্বচ্ছ" উভয় রূপই চিনতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত শেখার বোঝা পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। বাংলা বিরামচিহ্ন, "।" (দাড়ি) - একটি ফুলস্টপ এর বাংলা সমতুল্য - যা পশ্চিমা লিপি থেকে গৃহীত হয়েছে এবং ব্যবহারও তাদের অনুরূপ। নিম্নলিখিত বাংলা ভাষাতে মানবাধিকার সনদের প্রথম ধারার নমুনা পাঠ্য: বাংলা লিপিতে বাংলা ভাষা ধারা ১: সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত। বাংলার রোমানীকরণ Dhara êk: Sômôstô manush sbadhinbhabe sôman môrzada ebông ôdhikar niye jônmôgrôhôn kôre.
হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ১৯ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বাংলা অর্থ:বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষক) বাংলাদেশের একটি আধাসামরিক বাহিনী। এর কাজ হল মূলত বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করা। এর সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এর নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে এর নাম হয় 'বাংলাদেশ রাইফেলস' (বিডিআর)। ২০১১ সালে পুনরায় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ' (বিজিবি)। ২০১৬ সালে এই বাহিনীতে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক যুক্ত হয়।
সোহিনী সরকার হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ভাষার টেলিভিশন ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১১-২০১২ সালে সম্প্রচারিত বাংলা ধারাবাহিক অদ্বিতীয়তে তিনি অভিনয় করেন। এর পূর্বে তিনি ওগো বধূ সুন্দরী ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র হল রূপকথা নয়। এর পর তিনি ফড়িং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ও সকলের কাছে পরিচিত্র হয়ে ওঠেন। তিনি ওপেন টি বায়োস্কোপ, রাজকাহিনী, সিনেমাওয়ালা, ব্যোমকেশ পর্ব, বিবাহ ডায়েরিজ, দুর্গা সহায় প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
গায়েবানা জানাজা হলো মৃত মুসলিমদের জন্য এক ধরনের শেষকৃত্যের প্রার্থনা, যা এমন মৃত মুসলিমের জন্য পালন করা হয়ে থাকে যে কিনা এমন এক জায়গায় মারা গেছে যেখানে তার জানাজার নামাজ পড়ানোর মত কোন মুসলিম ছিলো না, অথবা তাকে জানাজার নামাজ ছাড়াই কবর দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলিমরা দূর থেকে মৃত ব্যক্তির লাশের অনুপস্থিতে তার জন্য প্রার্থনা করে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে: পাবলিক (সরকারি মালিকানাধীন), বেসরকারি (বেসরকারি মালিকানাধীন) এবং আন্তর্জাতিক (আন্তর্জাতিক সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত) বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৪ টি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধিভুক্ত; যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি আদেশ (১৯৭৩ সালের পি.ও.
ভারত (), যার সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে, জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অবস্থিত। এছাড়া, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া হল ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হল একটি ভারতীয় বহুজাতিক সম্মিলিত কোম্পানি যার সদর দপ্তর মুম্বাইতে অবস্থিত। এর ব্যবসার মধ্যে রয়েছে শক্তি, পেট্রোরাসায়নিক, প্রাকৃতিক গ্যাস, খুচরা, বিনোদন, টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম এবং টেক্সটাইল। রিলায়েন্স হল বাজার মূলধন এবং আয়ের দিক থেকে ভারতের বৃহত্তম পাবলিক কোম্পানি, এবং বিশ্বব্যাপী ১০০তম বৃহত্তম কোম্পানি। এটি ভারতের বৃহত্তম ব্যক্তিগত করদাতা এবং বৃহত্তম রপ্তানিকারক, ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির ৭% এর জন্য দায়ী। কোম্পানির তুলনামূলকভাবে কম বিনামূল্যে নগদ প্রবাহ এবং উচ্চ কর্পোরেট ঋণ আছে।
বিদ্রোহী কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতাসমূহের মধ্যে একটি। ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি, বিজলী পত্রিকায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর কবিতাটি মাসিক প্রবাসী পত্রিকার মাঘ ১৩২৮ সংখ্যায়, মাসিক সাধনা বৈশাখ ১৩২৯ সংখ্যায় ও ধূমকেতুতে (২২ আগস্ট ১৯২২) ছাপা হয়। প্রকাশিত হওয়া মাত্রই এটি ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করে। দৃপ্ত বিদ্রোহী মানসিকতা এবং অসাধারণ শব্দবিন্যাস ও ছন্দের জন্য আজও বাঙালি মানসে কবিতাটি "চির উন্নত শির" বিরাজমান।
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য (প্রথম-উত্তর প্রদেশ, দ্বিতীয়- মহারাষ্ট্র, তৃতীয়-বিহার )। এই রাজ্যের আয়তন প্রায় ৮৮,৭৫২ বর্গ কি.
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন
নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সূচনা হয় ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ যখন তৎকালীন সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন । সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিএনপি মনোনীত ও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই সামরিক আইন জারি করেন । সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করে ছাত্ররা ।
বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫ ১৯৪৫), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)।
ওয়াকার-উজ-জামান (জন্ম: ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ও বর্তমান সেনাপ্রধান। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮তম সেনাপ্রধান হিসেবে ২৩ জুন ২০২৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতিপূর্বে তিনি লেফট্যানেন্ট জেনারেল হিসেবে চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ১৫তম প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ছিলেন এবং এর পূর্বে তিনি সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিব ছিলেন।
বাগধারা শব্দের আভিধানিক অর্থ কথার বচন ভঙ্গি বা ভাব বা কথার ঢং। বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা। বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে। বলা যায় বাক্যার্থ ছাপিয়ে এখানে ব্যাঙ্গার্থই প্রধান।
সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (১ মে ১৯৩৪ - ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (যা শিবির নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এটি ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। এটি বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম সংগঠন। এবং ইসলামি ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান। এই দলটির পূর্ব নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ। মুসলিম ছাত্র ব্যতীত কেউ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হতে পারেনা। তবে যে কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী শুধুমাত্র ছাত্ররা এই সংগঠনের সমর্থক হতে পারে। তাদের শপথ সঙ্গীত হল “পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি / শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজীর রাস্তা ধরেছি”।
শেখ মোহাম্মদ শফিউদ্দিন আহমেদ (জন্ম: ১ ডিসেম্বর ১৯৬৩) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে ২৪ জুন ২০২১ থেকে ২৩ জুন ২০২৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের সামরিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মহাপরিচালক, সামরিক প্রশিক্ষণ পরিচালক (ডিএমটি) ছাড়াও একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (জোজা উচ্চারণ: [xoˈliːɬaɬa manˈdeːla]; ১৮ জুলাই ১৯১৮ - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির প্রথম কৃষাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের ধারক ম্যান্ডেলা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ম্যান্ডেলা ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপ, পলসমুর কারাগার ও ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চপের মুখে এবং বর্ণবাদী গৃহযুদ্ধের আতঙ্কে রাষ্ট্রপতি এফ. ডব্লিউ.
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র-ডান থেকে ডানপন্থী রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালে ৩০ এপ্রিল জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন। জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন আব্দুস সাত্তার।
রাবারের গুলি (যাকে রাবার ব্যাটন রাউন্ডও বলা হয়) হল এক ধরনের ব্যাটন রাউন্ড। নাম থাকা সত্ত্বেও, রাবারের গুলিতে সাধারণত রাবারের আবরণ সহ একটি ধাতব শাঁস থাকে, বা রাবার একটি সংখ্যালঘু উপাদানের সাথে মিশ্রিত থাকে। যদিও একে ধাতব প্রক্ষিপ্ত কম প্রাণঘাতী বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়, রাবারের গুলি কখনও মারাত্মক আঘাতের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুতর আঘাত যেমন অন্ধত্ব এবং স্থায়ী অক্ষমতার কারণ হতে পারে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে, সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ
ভারত হলো ২৮টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্যসংঘ। এই দেশের প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগের সংখ্যা ৩৬। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি আবার জেলা ও ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত।
মুকেশ ধীরুভাই আম্বানি (জন্ম ১৯ এপ্রিল ১৯৫৭) হলেন একজন ভারতীয় শতকোটিপতি ব্যবসায়ী। তিনি ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ফোর্বস এ দেখা গেছে তিনি প্রায় ১১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক, এছাড়াও তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের নবম তম ধনী ব্যক্তি।
অপারেশন সিকিউর শাপলা বা শাপলা চত্বর অভিযান হল ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ ই মে বাংলাদেশের ঢাকায় সংঘটিত ঘটনাসমূহ, যার মাধ্যমে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের তৎকালীন সদ্যপ্রসূত ইসলামী অরাজনৈতিক জোট হেফাজতে ইসলামের গনসমাবেশ, আন্দোলন এবং তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য সরকার কর্তৃক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বিত বাহিনীর ব্যবহারকে বোঝানো হয়। এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্যকারী "নাস্তিক ব্লগার"দের ফাসি কার্যকর করার জন্য একটি ব্লাসফেমি আইন প্রনয়ন এবং জনসম্মুখে "নারী পুরুষের মেলামেশা" নিষিদ্ধকরণ।
শিল্প বিপ্লব (ইংরেজি:Industrial Revolution) ( প্রথম শিল্প বিপ্লব নামেও পরিচিত) ছিল এমন এক সময়কাল যখন অধিক দক্ষ এবং স্থিতিশীল উৎপাদন প্রক্রিয়ার দিকে মানব অর্থনীতির বৈশ্বিক রূপান্তর ঘটেছিল। এটি কৃষি বিপ্লবের পর গ্রেট ব্রিটেন, ইউরোপ মহাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৭৬০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে ঘটেছিল। এই রূপান্তরের মধ্যে হাতের মাধ্যমে উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তে মেশিনের ব্যবহার; নতুন রাসায়নিক শিল্প এবং লৌহ উৎপাদন প্রক্রিয়া; জল শক্তি এবং বাষ্প শক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার; মেশিন টুলস উন্নয়ন এবং যান্ত্রিক কারখানা ব্যবস্থার উত্থান উল্লেখযোগ্য। এসময় উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় যার ফলে জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উভয়ই বৃদ্ধি পায় । বস্ত্র শিল্পে সর্বপ্রথম আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছাত্রদলের প্রধান শ্লোগান হচ্ছে - শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি। এই সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার নয়া পল্টনে অবস্থিত। বর্তমানে যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত, তাদের মধ্যে অনেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে যুক্ত ছিলেন।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সমর্থনে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় সংবিধান লঙ্ঘন, শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তার খেতাব বাতিল করা হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন। ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা পরিচালিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ২০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির মধ্যে জিয়াউর রহমানের নাম ১৯ নম্বরে উঠে আসে।
১৪৪ ধারা হল বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর একটি ধারা। ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার সাথে এক ও অভিন্ন। এই আইনের ক্ষমতাবলে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোন এলাকায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সভা-সমাবেশ করা, আগ্নেয়াস্ত্র বহনসহ যেকোন কাজ নিষিদ্ধ করতে পারেন। জরুরি অবস্থা বা সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আইনের প্রয়োগ করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের পর শুধু মহানগরী এলাকার জন্য এই বিধান রহিত করে নতুন বিধান চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা
এই নিবন্ধটি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীবৃন্দের তালিকা সম্পর্কিত।
স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট (১৩৫৪ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ, শুক্রবার) ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫ আগস্ট তারিখটিকে ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেককে দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে । দেশ মাতৃকার শৃংখল-মোচনের জন্য অনেক বিপ্লবী হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। অনেক বিপ্লবীকে আজীবন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম ঘটে। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হন। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র (আইএএসটি: Mahāmṛtyuñjaya Mantra, অনু. মহান মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র) একটি সর্বরোগ হরণকারী মন্ত্র। এই মন্ত্রটি ভগবান মহাদেবকে স্মরণ করে রচিত। এই মন্ত্রটি ঋগ্বেদেও দৃষ্ট হয় আবার এই মন্ত্রটি মার্কণ্ডেয় পুরাণেও দৃষ্ট হয়। এই মন্ত্রটি জপ করলে মানুষ সব অশান্তি, রোগপীড়া ও ব্যাধি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। নিরাকার মহাদেবই মৃত্যুমুখী প্রাণকে বলপূর্বক জীবদেহে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং অপার শান্তিদান করেন। এই মন্ত্রটির সাথে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। একসময় মহর্ষি মৃকন্ডু এবং তাঁর পত্নী মরুদবতী পুত্রহীন ছিলেন। তাঁরা তপস্যা করে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন এবং এক পুত্র লাভ করেন যার নাম হলো মার্কণ্ডেয়। কিন্তু মার্কণ্ডেয়ের বাল্যকালেই মৃত্যুযোগ ছিল। অভিজ্ঞ ঋষিদের কথায় বালক মার্কণ্ডেয় শিবলিঙ্গের সামনে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। যথা সময়ে যমরাজ এলেন। কিন্তু মহাদেবের শরণে আসা প্রাণকে কেই বা হরণ করতে পারে!
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী যা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আধা সামরিক বাহিনীগুলো সাধারণ সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। তবে, যুদ্ধকালীন সময়ে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়।
মুহাম্মাদ (আরবি: مُحَمَّد, প্রতিবর্ণীকৃত: মুহাম্মাদ; আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ – ৮ জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ), পূর্ণ সম্মানসূচক নাম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ﷺ), আরবের একজন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন। ইসলামি মতবাদ অনুযায়ী, তিনি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একজন নবী যিনি আদম, ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীদের একত্ববাদী শিক্ষাকে প্রচার ও দৃঢ় করতে এসেছিলেন। মুসলিমগণ বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মাদ ছিলেন আল্লাহ প্রেরিত শেষ নবী ও রাসুল এবং কুরআন ও মুহাম্মাদের জীবনাদর্শ (সুন্নাহ) হলো ইসলাম ধর্মের মূলভিত্তি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ – ২৯ জুন ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা।হিন্দু কলেজে অধ্যয়নের সময়ে মধুসূদন প্রথম কাব্য চর্চা শুরু করেন তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তিনি বাংলা সনেটের জনক।
ওবায়দুল কাদের (জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫২) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন। শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২১তম সম্মেলনেও তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ২২তম সম্মেলনেও তিনি টানা তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
২০১৩-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০১৩-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল দেশের সরকারি খাতে চাকরি সংক্রান্ত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন। প্রথমে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূল প্রতিবাদ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং একই ধরনের দাবি নিয়ে তাদের নিজস্ব মিছিল বের করে। এটি ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগের বিক্ষোভের সামসময়িক একটি আন্দোলন, যেটি প্রায় একই সময়ে একই স্থানে হয়েছিলো। ২০১৩ সালের কোটা আন্দোলন সফলতার মুখ না দেখলেও এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পুনরায় কোটা নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হয়।