The most-visited বাংলা Wikipedia articles, updated daily. Learn more...
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ই মার্চ ১৯২০–১৫ই আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এসকল কারণে তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে অর্থ, সম্পদ, মেধা, বংশ, শিক্ষা, বয়স, পেশা, লিঙ্গ, ক্ষমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজের বিদ্যমান জনসংখ্যাকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা হয়। জন্মসূত্রে সকল মানুষ সমান এমন মানবতাবাদী দর্শন পৃথিবীতে চালু থাকলেও বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে এমন কোন সমাজ পাওয়া যাবেনা যেখানে মানুষে মানুষে পার্থক্য নেই। সামাজিক স্তরবিন্যাস সর্বজনীন। সব যুগে সব কালে সব সমাজই স্তরায়িত।
দিল্লী সালতানাত বলতে মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনকালকে বুঝানো হয়। ১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে রাজত্বকারী একাধিক মুসলিম রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি দিল্লী সালতানাত নামে অভিহিত। এই সময় বিভিন্ন তুর্কি ও আফগান রাজবংশ দিল্লি শাসন করে। এই রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি হল: মামলুক সুলতান (১২০৬-৯০), খিলজি রাজবংশ (১২৯০-১৩২০), তুঘলক রাজবংশ (১৩২০-১৪১৩), সৈয়দ রাজবংশ (১৪১৩-৫১) এবং লোদি রাজবংশ (১৪৫১-১৫২৬)। এই সালতানাত মঙ্গোলদের( চাগাতাই খানাত থেকে) আক্রমণকে প্রতিহত করার কয়েকটি শক্তির মধ্যে অন্যতম বলে পরিচিত।মুহাম্মদ ঘুরির প্রাক্তন তুর্কি মামলুক দাস কুতুবুদ্দিন আইবেক দিল্লির প্রথম সুলতান ছিলেন এবং তাঁর মামলুক রাজবংশ উত্তর ভারতের বিশাল অঞ্চল জয় করেন। এর পরে, খিলজি রাজবংশ বেশিরভাগ মধ্য ভারতকেও জয় করতে সক্ষম হয়, তবে উভয়ই পুরো ভারত উপমহাদেশকে জয় করতে ব্যর্থ হয়। সালতানাতটি তুঘলক রাজবংশের সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে এর ভৌগলিক সীমানার দিক থেকে শীর্ষে পৌঁছে। এর পরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং মেওয়ার মতো হিন্দু সাম্রাজ্যের স্বাধীনতা দাবি করার কারণে সালতানাতের পতন ঘটে, এবং শাহী বাংলার মতো নতুন মুসলিম সালতানাতের উদ্ভব ঘটে।দিল্লির সুলতানি আমলে , ভারতীয় সভ্যতার সাথে ইসলামী সভ্যতার মিশ্রণ ঘটেছিল এবং আফ্রো-ইউরেশিয়ার বৃহৎ অংশে বিস্তৃত একটি বিশ্বব্যবস্থা এবং বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কগুলির সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের যোগাযোগ আরও সংহতকরণ ছিল, যার একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সমাজের উপর। তাদের শাসনের সময়টিতে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের প্রাথমিকতম রূপগুলি যান্ত্রিক প্রযুক্তির বৃহত্তর ব্যবহার ভারতের জনসংখ্যা এবং অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হার এবং হিন্দি-উর্দু ভাষার উত্থান ব্যাপক ভাবে লক্ষ্য করা যায়। দিল্লী সুলতানি ১৩ ও ১৪ শতকে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন প্রতিহত জন্য পরিচিত ছিল। ১৫২৬ সালে দিল্লি সালতানাত মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে পরাজিত হয়।
জিয়াউদ্দিন বারানি (১২৮৫-১৩৫৭) ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ বিন তুঘলক ও ফিরোজ শাহ তুঘলকের সময় দিল্লি সালতানাতের একজন মুসলিম ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তার রচিত তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইর জন্য তিনি অধিক পরিচিত। এটি মধ্যযুগের ভারতের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক কর্ম। এতে গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় থেকে ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনের প্রথম ছয় বছরের উল্লেখ রয়েছে। তার লেখা আরেকটি বই হল ফতোয়াই-জাহানদারি যাতে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের সামাজিক শ্রেণীর ল্লেখ রয়েছে।
বিহারীলাল চক্রবর্তী (২১ মে, ১৮৩৫ - ২৪ মে, ১৮৯৪) বাংলা ভাষার কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে তিনি সুপরিচিত। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার 'ভোরের পাখি' বলে আখ্যায়িত করেন। তার সব কাব্যই বিশুদ্ধ গীতিকাব্য। মনোবীণার নিভৃত ঝংকারে তার কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিহারীলাল তার কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য।
আওরঙ্গজেব (ফার্সি: اورنگزیب), আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর I, বাদশা গাজী, প্রথম আলমগীর নামেও পরিচিত (ফার্সি: محي الدين محمد), (হিন্দি: अबुल मुज़फ़्फ़र मुहिउद्दीन मुहम्मद औरंगज़ेब आलमगीर) (নভেম্বর ৩, ১৬১৮ – মার্চ ৩, ১৭০৭) ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪৯ বছর মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন, তার ফতোয়া-ই-আলমগীরীর শরিয়াহ আইন এবং ইসলামি অর্থনীতির মাধ্যমে। তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহ জাহানের পরে ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট। তিনি সম্রাট শাহজাহানের পুত্র। তিনি ইংরেজদের পরাজিত করেছিলেন ইঙ্গ-মুঘল যুদ্ধে।আওরঙ্গজেব একজন হাফিজ ছিলেন এবং সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাধারণ জীবন যাপন কাটিয়েছেন। তিনি টুপি এবং নিজের হাতের লিখা কুরআন বিক্রি করতেন আর রাজ্যের সম্পদ স্পর্শ করতেন না।মুঘল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের শাসনামল বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সীমানা বহুদূর বিস্তার করেন। তার আমলে দক্ষিণাঞ্চলে ৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি ১৫৮ মিলিয়ন প্রজাকে শাসন করতেন। তার সময় মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক করের পরিমাণ ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। যা তার সমসাময়িক চতুর্দশ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সের বাৎসরিক কর এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল। তার শাসনামলে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যার পরিমাণ ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার, ১৭০০ সালে সমগ্র পৃথিবীর জি ডি পি এর এক চতুর্থাংশ।আওরঙ্গজেব শাসক হিসেবে বিতর্কিত এবং সমালোচিত ছিলেন। তার পূর্বসূরিদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি উপেক্ষা করে তিনি ভারতে জিজিয়া করের প্রবর্তন করেছিলেন। তার আমলে অনেক হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। তিনি মারাঠা রাজ্যের শাসক সম্ভাজি কে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তিনি নবম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর কে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে তার হিন্দু মন্দির ধ্বংসের বিষয়টি অতিরঞ্জিত। শুধু তাই নয় তিনি মন্দির নির্মাণে অর্থ অনুদান ও করেছিলেন। তার আমলে তার পূর্বসূরীদের তুলনায় প্রশাসনে মুঘল প্রশাসনের সর্বোচ্চ সংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি শিয়া মুসলিম এবং হিন্দুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধচারণ করেন।তার মৃত্যুতে পর ভারতের মধ্যযুগীয় যুগ শেষ হয় এবং ইউরোপীয় আক্রমণ শুরু হয়। আওরঙ্গজেবকে প্রায়ই আমিরুল মুমিনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) ডাকা হয় এবং উমর ইবনুল খাত্তাব ও সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুবের মত বিশিষ্ট খলিফাদের সাথে তুলনা করা হয়।
সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা (৩৩০০ – ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ; পূর্ণবর্ধিত কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ অববাহিকা। প্রথম দিকে এই সভ্যতা পাঞ্জাব অঞ্চলের সিন্ধু অববাহিকায় বিকাশ লাভ করে। পরে তা প্রসারিত হয় ঘগ্গর-হকরা নদী উপত্যকা ও গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল পর্যন্ত। বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমদিকের রাজ্যগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান এবং বালোচিস্তান প্রদেশের পূর্ব অংশ এই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল।
মুজিব বর্ষ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদযাপন করার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের কারণে গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু খ্যাত নেতা অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় ঘোষিত বর্ষটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুজিব বর্ষের লোগোর নকশা করেন সব্যসাচী হাজরা।
একান্তই ইন্দ্রিয় সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে মানব শিশুর জন্ম। ইন্দ্রিয় দ্বারা তাড়িত হলেও ধীরে ধীরে সে নানা ভাবে নানা প্রক্রিয়ায় একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পুরোপুরি সামাজিক মানুষ হিসেবে পরিনত হয়। এই প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিস এর সংজ্ঞাটি যথার্থ - ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিনত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে এক জন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।” সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা মানব শিশু ক্রমশ ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। যে সকল মাধ্যমে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সাধিত হয় তার মধ্যে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পরিবার। নিচে পরিবারের ভূমিকার বিবরণ দেওয়া হল:- বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান যোগায়, সংস্কৃতির নকশা অঙ্কন করে এবং পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে। একটি শিশু তার দৈহিক, মানসিক এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন পরিবার থেকেই মেটায়। পরিবারেই শিশুর চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠিত হয়। একটি শিশুর সুকোমল বৃত্তিগুলি এবং সুপ্ত প্রতিভা পরিবারের মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে। শিশু পরিবার থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও গ্রহণ করে, পরিবার থেকেই একটি শিশু আচার-আচরণ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে।সুতরাং একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে পরিবারের তিনটি বিষয়ের উপর। পিতা-মাতার সম্পর্ক পিতা-মাতা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক একই পরিবারের একাধিক শিশুদের মধ্যে পরস্পরের সম্পর্কউল্লিখিত সম্পর্কগুলি যদি ইতিবাচক হয় তবে ঐ শিশুরা সৎ, ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারে। শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা পূণ বিকাশও হয়ে থাকে প্রশ্ন : সামাজিকীকরণ কী? সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো বর্ণনা কর? উত্তর : ভূমিকা : সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ায় জীবন চলতে থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি যখন এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে প্রবেশ করে তখন তাকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে, নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। এ খাপ খাওয়ানো প্রক্রিয়ার ফলে তার আচরণে পরিবর্তন আসে। নতুন নিয়মকানুন, রীতিনীতি এবং নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলার প্রক্রিয়ার নাম সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ : সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, 'সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, 'সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশার সামাজিক মূল্য বজায় রাখে।'সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াকে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলা হয়। সামাজিকীকরণের মাধ্যম : নিম্নে সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো আলোচনা করা হলো। পরিবার : সামাজিকীকরণের কতগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক, পার্থিব ও অপার্থিক যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা যায়, তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে। খেলার সঙ্গী : শিশুর সামাজিকীকরণে তার সঙ্গী বা খেলার সঙ্গীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। শিশু তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি পরিস্ফুট হয়। সে স্বাবলম্বী হতে শেখে। ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। এককথায়, ধর্মীয় আচর-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সভ্যরা যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য প্রত্যেক সমাজ প্রতিটি সভ্যকে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের শিক্ষাদান করে। সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। গণমাধ্যম : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যমগুলো হলো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। তবে এগুলো সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ ভূমিকা পালন করে।মন্তব্য : বিবৃত আলোচনাকে বিচার ও বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে পরিবার, খেলার সঙ্গী, ধর্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর গণমাধ্যমগুলো সামাজিকীকরণে গৌণ ভূমিকা পালন করে।প্রশ্ন : সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা দাও। সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা বর্ণনা কর। উত্তর : সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে।সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, 'সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।'অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, 'সামাজিকীকরণ ছাড়া সমাজে জীবনযাপন একেবারেই সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যক্তি তার গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলামেশায় সামাজিক মূল্য বজায় রাখে।' সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা মানব শিশু ক্রমেই ব্যক্তিত্বপূর্ণ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। অর্থাৎ যে সামাজিক প্রক্রিয়াতে মানুষের সামাজিক প্রগতির উন্মেষ, বিকাশ হয় তাকেই সামাজিকীকরণ বলে। সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা সামাজিকীকরণের কতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান জোগায়, সংস্কৃতি নকশা তৈরি করে এবং পরিবারে পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর সব দৈহিক, মানসিক, বস্তুগত ও অবস্তুগত যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। পরিবারেই শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। মূলত শিশুর চরিত্রের ভিত্তিপ্রস্তর রচিত হয় পরিবারেই। কীভাবে কথা বলতে হয়, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা হয় তা শিশু পরিবার থেকেই শিক্ষা লাভ করে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনের জীবনযুদ্ধে যেন মুখোমুখি হতে পারে তার জন্য আগে থেকেই পরিবার তাকে শিক্ষা দেয়। পরিবার শিশুর অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। শিশুর চলাফেরা, কথাবার্তা, ভাষা শিক্ষা দেওয়া, আচার-আচরণ শিক্ষা দেওয়া, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করার দায়িত্ব একমাত্র পরিবারের। সমাজের একজন যোগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। সুতরাং শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তিনটি সম্পর্কের ওপর। যথা_ ১.
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮০০ সালের ০৯ জুলাই কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে এই কলেজ স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
বিজয়নগর সাম্রাজ্য (কন্নড়: ವಿಜಯನಗರ ಸಾಮ್ರಾಜ್ಯ, Vijayanagara Sāmrājya; তেলুগু: విజయనగర సామ్రాజ్యము, Vijayanagara Sāmrājyamu) ছিল দক্ষিণ ভারতের একটি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য। পর্তুগিজরা এই সাম্রাজ্যকে বিসনাগা রাজ্য নামে অভিহিত করে। ১৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে (প্রথম) হরিহর ও তার ভ্রাতা (প্রথম) বুক্কা রায় এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ ভারতে ইসলামি আক্রমণ প্রতিহত করে এই সাম্রাজ্য নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। ১৬৪৬ সাল পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১৫৬৫ সালে দাক্ষিণাত্য সুলতানির নিকট যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত ঘটে। এই সাম্রাজ্য তার রাজধানী বিজয়নগরের নামে চিহ্নিত। বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পিতে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পেজ, ফার্নাও নানস ও নিকোলো ডি কন্টি প্রমুখের রচনা এবং স্থানীয় সাহিত্য থেকে এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। বিজয়নগরের শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৩ জুলাই, ১৮৯৮- সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১) বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী, ২টি ভ্রমণ কাহিনী, ১টি কাব্যগ্রন্থ এবং ১টি প্রহসন লিখেছেন। । এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার,পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
পাট্টা ও কবুলিয়াত শের শাহের আমলে প্রচলন শুরু হয় । এটি একটি অতি পুরানো ভূমি বন্দোবস্তের চুক্তিপত্র। । পাট্টা ও কবুলিয়তের ভিত্তিতে কৃষকরা জমির মালিকানা ও দখল প্রমাণের সুযোগ পায়। কৃষকগণ তাদের অধিকার ও দায়িত্ব বর্ণনা করে সরকারকে কবুলিয়ত নামে দলিল সম্পাদন করে দিত আর সরকারপক্ষ থেকে জমির উপর জনগনের স্বত্ব স্বীকার করে নিয়ে পাট্টা দেওয়া হত।
ফতেপুর সিকরি ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার একটি শহর। সাল ১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ অবধি সম্রাট আকবর শহরটিকে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন কিন্তু পরে পাঞ্জাবের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করেন। ১৬১০ সালে শহরটি সম্পূর্ণরূপে বর্জিত করা হয়।ফতেপুর সিকরি নামটির উৎপত্তি হয় সিকরি নামের গ্রাম থেকে, যেটি এখানে আগে অবস্থান করত। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৯৯৯-২০০০ সালের খননকার্য থেকে জানা যায়, আকবর এখানে রাজধানী স্থাপন করার আগে থেকে এখানে মানুষের বসবাস ছিল। সম্রাট বাবরও ফতেপুর সিকরি খুব পছন্দ করতেন। তার সৈন্যেরা এখানকার শুকরি ঝিলের জল ব্যবহার করতেন তাই বাবর জায়গাটির নাম দিয়েছিলেন শুকরি। বাবর সিকরিকে বিনোদনের জন্য ব্যবহার করতেন এবং এর সীমান্ত-অঞ্চলে মহারানা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করেছিলেন।
সুলতানা রাজিয়া (১২০৫ - ১২৪০) (ফার্সি / উর্দূ: رضیہ سلطانہ) সুলতান ইলতুতমিশের কন্যা ও ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শাসক। তিনি একাধারে একজন ভাল প্রসাশক ও সেনাপতি ছিলেন; তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈন্য হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। সুলতান ইলতুতমিশের সবথেকে যোগ্য পুত্র সুলতানের জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করলে সুলতান তার কন্যা রাজিয়া কে দিল্লির শাসক হিসেবে মনোনিত করে যান। যখনই ইলতুতমিশের রাজধানী ছাড়তে হত, তিনি তখন তার কন্যা রাজিয়াকে শাসনভার বুঝিয়ে দিয়ে যেতেন। রাজিয়া ছিলেন সুলতানের জ্যেষ্ঠা কন্যা, বুদ্ধিমতী ও যুদ্ধবিদ্যায় পটু।সুলতান ইলতুতমিশের মৃত্যুর পর তার আরেক পুত্র রোকনুদ্দিন ফিরোজ দিল্লির শাসন কেড়ে নেন এবং প্রায় সাত মাসের মত শাসন করেণ। ১২৩৬ সালে দিল্লির জনগনের সাহায্য নিয়ে রাজিয়া সুলতানা তার ভাইকে অপসারণ করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
আলাউদ্দিন-খিলজি(শাসন কালঃ১২৯৬-১৩১৬)তিনি ছিলেন খিলজি বংশের দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক। যিনি দিল্লিতে বসে ভারতীয় উপমহাদেশে খিলজি শাসন পরিচালনা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারতীয় ইতিহাসেও একজন আলেকজেন্ডারের মতো শক্তিশালী কারো কথা উল্লেখ করা থাকুক। তাই তিনি নিজেকে ২য় আলেকজেন্ডার (সিকান্দার-এ-সানি) হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন এবং জুম্মাহের খুতবার আগের বয়ানে নিজের কৃতিত্ব বর্ণনার আদেশ দেন।
বেদবর্ণিত সময়কালকে বৈদিক যুগ ব'লে চিহ্নিত করা হয় ৷যখন ছ'সহস্রাধিক বছর পূর্বকালীন ঋষিরা অগ্নিকেন্দ্রীক নানাবিধ যজ্ঞে শক্তিপ্রকাশক বিভিন্ন সত্ত্বার প্রতি অপৌরুষেয়(জন্মলব্ধ কারো সৃষ্টি নয় যা) দৃষ্টমন্ত্র(যে মন্ত্রসমূহ মনকর্তৃক রচিত নয় বরং সাধনদ্বারা দৃষ্ট বা প্রাপ্ত)স্মরণের মাধ্যমে ব'য়ে চলেছেন অজস্র প্রার্থনা ও উপাসনা মন্ত্র । বেদগুলোকে এখন সেই সব রচনাদির সংকলন হিসেবে পাওয়া যায় যা হিন্দুধর্মের আদি হিন্দুশাস্ত্রাধারও বটে । এটিকে এরকম বলার মূল কারণ হলো, এই সময় সমস্ত বেদ ও উপনিষদ লেখা হয়। যা আগে মুখে মুখে পড়তে ও মনে রাখতে হত।এই প্রক্রিয়াটি শ্রুতি বলে পরিচিত ৷
জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর ( নাস্তালিক: جلال الدین محمد اکبر الاعظم(হিন্দি: 'जलालुद्दीन मोहम्मद अकबर' ) ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। পৃথিবীর ইতিহাস এ মহান শাসকদের অন্যতম মহামতি আকবর নামেও পরিচিত। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।
সঙ্গম সাহিত্য ধ্রুপদী তামিল সাহিত্যের একটি অংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচিত এই সাহিত্যধারা ৪৭৩ জন কবির রচিত ২৩৮১টি কবিতার এক সংকলন। এই কবিদের মধ্যে ১০২ জনের পরিচয় জানা যায় না। এই কবিতাগুলি যে সময়কালে রচিত হয় সেই সময়কালটিকে সাধারণভাবে সঙ্গম যুগ নামে অভিহিত করা হয়। সাহিত্য গবেষকদের মতে সহস্রাধিক বছর বিদ্যমান সঙ্গম কিংবদন্তির নামানুসারে এই সমগ্র সাহিত্যবর্গটি নামাঙ্কিত। সঙ্গম সাহিত্যের বিষয়বস্তু ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। এর উপজীব্য ছিল তামিল জাতির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা বিবরণ।সঙ্গম সাহিত্যকারেরা ছিলেন তামিল কবি। তাদের মধ্যে ছিলেন সমাজের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির পুরুষ ও মহিলারাও। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংকলনে সংকলিত ও সম্পাদিত হয়ে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এই কবিতাগুলি। পরবর্তীকালে জনপ্রিয়তা হারালেও ঊনবিংশ শতাব্দীতে সি ডব্লিউ তামোতারামপিল্লাই ও ইউ ভি স্বামীনাথ আয়ার প্রমুখ পণ্ডিত কর্তৃক পুনরাবিষ্কৃত হয় এগুলি।
বাংলাদেশ (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
চণ্ডীদাস (১৩৭০-১৪৩০),মধ্যযুগের চতুর্দশ শতকের বাঙালি কবি। তিনি চৈতন্য-পূর্ব বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলী রচয়িতা হিসেবে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। চৈতন্যদেবের জন্মের আগে থেকেই চণ্ডীদাসের নামোল্লেখিত বহু গীতিপদ মানুষের মুখে মুখে ফিরত। চৈতন্যদেব নিজে তার পদ আস্বাদন করতেন। শ্রুতি আছে, রজকিনী রামী তার সহজসাধনের সঙ্গিনী ছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন ভারতের ধর্ম, শিক্ষা, চরিত্র গঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিবেকানন্দ ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী। তিনি পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শন প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতেও ধর্মসংস্কারে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দের রচনাবলি পড়ো। তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে সবই ইতিবাচক; নেতিবাচক কিছুই নেই।" বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি মানুষের উপর বেষি জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "আমার উদ্দেশ্য হল মানুষের চরিত্র গঠন"। এইভাবেই তিনি নিজের শিক্ষা বর্ণনা করেন। বিবেকানন্দ তার আদর্শ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, "(তাঁর উদ্দেশ্য) মানবজাতিকে তার অন্তর্নিহিত দেবত্ব শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শেখানো।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।
শিবাজী ভোঁসলে অথবা ছত্রপতি শিবাজী রাজে ভোঁসলে (১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬৩০ - ৩ এপ্রিল, ১৬৮০), (মারাঠি : छत्रपती शिवाजीराजे भोसले) হলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। শিবাজী বিজাপুরের আদিলশাহি সালতানাতের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং হেরে যান। তিনি একটি স্বাধীন মারাঠা সাম্রাজ্যের পত্তন করেন, যার রাজধানী ছিল রায়গড়ে। তিনি ১৬৭৪ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজা 'ছত্রপতি' হিসেবে মুকুট ধারণ করেন।শিবাজী হিন্দাভী স্বরাজ্যের (স্বাধীনতা) মতবাদকে সমর্থন দান করেন। তিনি মুুুঘল ও মুসলমানদের ওপর গুুুপ্ত হামলা করে মারাঠা শাসন পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তিনি তার সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনী এবং সুগঠিত শাসন কাঠামোর মাধ্যমে একটি দক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি একজন কুশলী সামরিক কৌশলবিদ ছিলেন এবং গেরিলা যুদ্ধের ধারণার সূচনা করেন।এরপর হতে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম বিভেদের সূচনা শুরু হয় আর এই সুযোগকে ব্যবহার করে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিস্তার লাভ করে।
সুফিবাদ বা তাসাউফ , (আরবি: الْتَّصَوُّف, ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য: صُوفِيّ, সুফি, مُتَصَوِّف মুতাসাউইফ) যাকে বিভিন্নভাবে ইসলামী আধ্যাত্মবাদ, ইসলামের অন্তর্নিহিত রূপ, ইসলামের অন্তর্গত আধ্যাত্মিকতার অদৃশ্য অনুভূতি হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা হল ইসলামে আধ্যাত্মবাদ, যা নির্দিষ্ট মূল্যবোধ, আচার-প্রথা চর্চা, মূলনীতি দ্বারা বিশেষায়িত, যা ইসলামের ইতিহাসের খুব প্রাথমিক দিকে শুরু হয়েছিল, এবং এটি ইসলামের আধ্যাত্মিক চর্চার "প্রধান অভিব্যক্তি ও কেন্দ্রীয় স্বচ্ছতা"কে তুলে ধরে। সুফিবাদের চর্চাকারীদের "সুফি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে (আরবি বহুবচন: صُوفِيَّة সুফিয়াহ; صُوفِيُّون সুফিয়ুন; مُتَصَوُّفََة মুতাসায়িফাহ; مُتَصَوُّفُون মুতাসায়িফুন)। ইসলামে তাসাউফের আরেকটি সমার্থক ধারণা হল তাজকিয়া (تزكية)।
শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি প্রথমবার তুরস্কে পালিত হয়েছিল সাল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর-এ উদযাপন করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদযাপন করার।
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।
আলাই দরওয়াজা (বাংলা: আলাউদ্দিনের দরজা) হল ভারতের দিল্লির মেহরুলিতে অবস্থিত কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি দরজা। এটি সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩১১ সালে নির্মাণ করেন। স্থাপনাটি লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত। বর্গাকৃতির এই স্থাপনার উপরে একটি গম্বুজ বিদ্যমান। এছাড়াও, এর প্রবেশমুখে খিলান বিদ্যমান।
ভক্তি (সংস্কৃত: भक्ति) হিন্দুধর্মে উপাসনা তথা আরাধনার একটি বিশেষ রীতি । পূজনীয় দেবতা বা ব্যক্তির প্রতি বিশেষ অনুরাগ বা প্রেমকেই ভক্তি বলা হয়। ঈশ্বরের নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের নামই ভক্তি। ভক্তির পথে যিনি ঈশ্বরোপাসনা করেন, তাকে ভক্ত নামে এবং ভক্তিবাদী দর্শনকে ভক্তিমার্গ নামে অভিহিত করা হয়। ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের একাধিক শাখাসম্প্রদায়ের মূলভিত্তি। বিভিন্ন সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভক্তিবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।ভক্তিবাদ ঈশ্বরপ্রেমকে প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, পিতামাতা-সন্তান, ও প্রভু-ভৃত্য ইত্যাদি মানবিক সম্পর্ক ভক্তিবাদের প্রধান স্তম্ভ। ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট রূপ, ঈশ্বরের নিরাকার রূপ, বা গুরুর প্রতি ভক্তি (গুরুভক্তি) ভক্তিবাদের অঙ্গ। হিন্দুধর্মে সম্প্রদায়ভেদে ভক্তিবাদের নির্দিষ্ট রূপ প্রচলিত: শৈবেরা শিব ও শিব-সম্পর্কিত দেবদেবীগণের ভক্ত; বৈষ্ণবেরা বিষ্ণু ও তার অবতারগণের ভক্ত এবং শাক্তেরা মহাশক্তির বিভিন্ন রূপের ভক্ত। তবে কোনো নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি ভক্তি থাকলে অন্য কোনো দেবতাকে পূজা করা যাবে না – এমন কোনো বিধান হিন্দুধর্মে নেই।ভগবদ্গীতা প্রথম ধর্মগ্রন্থ যেখানে "ভক্তি" শব্দটিকে প্রথম ধর্মীয় পথ অর্থে উল্লেখ করা হয়। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় ভাগবত পুরাণে। ভক্তি আন্দোলনের কালে দক্ষিণ ভারত থেকে ভক্তিবাদের উত্থান ঘটে। এই ভক্তিবাদের প্রবক্তারা ছিলেন বৈষ্ণব অলবর (খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী) ও শৈব নায়নার (খ্রিষ্টীয় পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী) সম্প্রদায়ভুক্ত। ভক্তিবাদ ও ভক্তিবাদী সাহিত্য সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে এঁরাই ছিলেন প্রধান অনুপ্রেরণা। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভক্তি আন্দোলন সমগ্র ভারতেই বিস্তার লাভ করেছিল। ভারতে ভক্তিবাদের প্রভাব অন্যান্য ধর্মগুলির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ভক্তিবাদ ভারতীয় সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্মীয় থেকে ধর্মনিরপেক্ষ – অনেক বিষয়েই আজ ভক্তিবাদের ছায়া সুস্পষ্ট।
ঘঘরার যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয় ১৫২৯ সালে। এটি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় একটি অন্যতম যুদ্ধ। এটি ১৫২৬ সালে সঙ্ঘটিত পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ও ১৫২৭ সালে সঙ্ঘটিত খানার যুদ্ধের পরে সঙ্ঘটিত হয়। এই যুদ্ধে সদ্য উত্থিত মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর-এর সৈন্যবাহিনী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সাথে যোগদান করে।
রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর হিন্দু জেনারেল ও আদিল শাহ সুরির প্রধানমন্ত্রী হেমুর বাহিনী এবং মুঘল বাদশাহ আকবরের বাহিনীর মধ্যে। দিল্লীর যুদ্ধে তারদি বেগ পরিচালীত মুঘলদের পরাজিত করে হেমু এক মাস আগেই দিল্লী জয় করেছিলেন এবং নিজেকে রাজা বিক্রমাদিত্য ঘোষণা করেছিলেন। আকবর এবং তার অভিভাবক বৈরাম বেগ শহর পুনরুদ্ধার করার জন্য দ্রুত দিল্লী পৌছেছিলেন। ১৫২৬ সালের প্রথম পানিপথের যুদ্ধের স্থানের অদূরবর্তী পানিপথে দুই সেনাবাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক", "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। বড়দিদি (১৯১৩), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), শ্রীকান্ত (চারখণ্ডে ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), পথের দাবী (১৯২৬), পরিণীতা (১৯১৪), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি শরৎচন্দ্র রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে খ্যাত। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান৷ এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে
মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্য (উর্দু: مغلیہ سلطنت, Mug̱ẖliyah Salṭanat, ফার্সি: گورکانیان, Gūrkāniyān)), ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে সাম্রাজ্য পশ্চিমে সিন্ধু অববাহিকার বাইরের প্রান্ত, উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান এবং উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশের উচ্চভূমি এবং দক্ষিণ ভারতের ডেকান মালভূমির উপভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য মূলতঃ পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার টার্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাগতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৫৫৬ সালে আকবরের ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্রূপদী যুগ শুরু হয়। আকবর ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ভারতে অর্থনৈতিক প্রগতি বহুদূর অগ্রসর হয়। আকবর অনেক হিন্দু রাজপুত রাজ্যের সাথে মিত্রতা করেন। কিছু রাজপুত রাজ্য উত্তর পশ্চিম ভারতে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জারি রাখে কিন্তু আকবর তাদের বশীভূত করতে সক্ষম হন। মুঘল সম্রাটরা মুসলিম ছিলেন তবে জীবনের শেষের দিকে শুধুমাত্র সম্রাট আকবর ও তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর নতুন ধর্ম দীন-ই-ইলাহির অনুসরণ করতেন।মুঘল সাম্রাজ্য কাঠামো, যাইহোক, কখনও কখনও বাবরের নাতি আকবরএর শাসনের তারিখ ১৬০০ থেকে ধরা হয়। এই সাম্রাজ্যিক কাঠামো ১৭২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, শেষ প্রধান সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার রাজত্বকালে সাম্রাজ্যতার সর্বোচ্চ ভৌগোলিক ব্যাপ্তি অর্জন করে। পরবর্তীতে হ্রাস, বিশেষ করে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনামলে, পুরাতন দিল্লি এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে, ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ রাজ দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়।
সার্বভৌমত্ব (বাংলা উচ্চারণ: [সার্বভৌমত্ব] (শুনুন)) বলতে কোন দেশ বা রাষ্ট্রের নিজের অভ্যন্তরীন এবং অন্যান্যরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বোঝায়। সার্বভৌমত্ব কোনো পরিচালনা পরিষদের বাইরের কোনো উৎস বা সংগঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা। রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, সার্বভৌমত্ব কোনো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এটি রাষ্ট্রগঠনের সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক মতবাদের একটি মূলনীতি।
ভারত (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন " হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, পীরসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামি ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা
এটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পর থেকে বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রপতিদের সম্পূর্ণ তালিকা।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
এই নিবন্ধটি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস-সম্পর্কিত। ১৯৪৭-পরবর্তী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস নিবন্ধটি। এছাড়া পাকিস্তান বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন যথাক্রমে পাকিস্তানের ইতিহাস ও বাংলাদেশের ইতিহাস। দক্ষিণ ভারত, অবিভক্ত বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন যথাক্রমে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস ও পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস।ভারতের ইতিহাস বলতে মূলত খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে খ্রিষ্টীয় বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন -মধ্যযুগীয় ও প্রাক-আধুনিক কালের ইতিহাসকেই বোঝানো হয়। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় দশ লক্ষ(?) বছর আগে উক্ত ভূখণ্ডে প্রথম মানববসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে ভারতের জ্ঞাত ইতিহাসের সূচনা হয় ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ ও প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে। পরবর্তী হরপ্পা যুগের সময়কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সূচনায় এই ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতার পতন ঘটে। সূচনা হয় লৌহ-নির্ভর বৈদিক যুগের। এই যুগেই সমগ্র গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে মহাজনপদ নামে পরিচিত ১৬টি প্রধান প্রধান রাজ্য-তথা-জনবসতির উত্থান ঘটে। এই জনপদগুলির অধিকাংশই রাজতান্ত্রিক হলেও এদের মধ্যে "লিচ্ছিবি" ছিল গণতান্ত্রিক। এই জনপদের মধ্যে অন্যতম ছিল মগধ।খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে মগধে জন্মগ্রহণ করেন মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধ; পরবর্তীকালে যাঁরা ভারতের জনসাধারণের মধ্যে শ্রমণ ধর্মদর্শন প্রচার করেন।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ুচণ্ডীদাস নামক জনৈক মধ্যযুগীয় কবি রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যানকাব্য। ১৯০৯ সালে{তারিখ অজানা} বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কাঁকিল্যা (কালিয়া) গ্রামের শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশীয় দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘরের মাচার ওপর থেকে এই কাব্যের একটি পুথি আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে পুথিটি প্রকাশিত হয়; যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’। বৌদ্ধ-সহজীয়া গ্রন্থ চর্যাপদের পর এটিই আদি-মধ্য বাংলা ভাষার প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন।
শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান (আরও ডাকা হয় শাহ জাহান, শাজাহান বলে। ফার্সি: شاه جهان), ( জানুয়ারি ৫, ১৫৯২ – জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬) মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"। তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর, এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (উচ্চারণ: [ʃad̪ʱinot̪a ɟud̪d̪ʱo]; শাধিনতা জুদ্ধো) বা মুক্তিযুদ্ধ (উচ্চারণ: [mukt̪iɟud̪d̪ʱo]; মুক্তিজুদ্ধো) হলো ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গণবিদ্রোহ দমনে পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান ও বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইসলামি দলগুলোর সমর্থন লাভ করে। সেনাবাহিনীর অভিযানে সহায়তার জন্য তারা ইসলামি মৌলবাদীদের নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী— রাজাকার, আল বদর ও আল শামস গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু-ভাষী বিহারিরাও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, উচ্ছেদ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং আরও তিন কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়। বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেনারেল এম. এ.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও স্বাক্ষর করতেন; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
বাবরনামা (চাঘতাই/পার্শি بابر نامہ;´, আক্ষরিক অর্থ 'বাবরের লেখা' বা 'বাবরের বই') হল ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির-উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের (১৪৮৩-১৫৩০) লেখা আত্মজীবনী। চাঘতাই ভাষায় রচিত এই বইটি তুজুক-ই-বাবরি নামেও যথেষ্ট পরিচিত। পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিজরি ৯৯৮ সনে বা ১৫৮৯-৯০ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সভাসদ আব্দুল রহিম বইটি সম্পূর্ণ পারসিক ভাষায় অনুবাদ করেন। বাবরের জীবন ও ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য আহরণের পক্ষে এই গ্রন্থটি একটি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বস্ত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। সাহিত্যমূল্যর দিক থেকেও বইটি উচ্চ প্রশংসিত।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল। ১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য মামলা। তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিত, কারণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তির চার যুগ পর মামলার আসামি ক্যাপ্টেন এ.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি) ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; যা বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষত্ব হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এর বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া, এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইক এর পক্ষ থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়। এটি এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪তম। এখানে প্রায় ৪৩০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ২০৮০ জন শিক্ষক রয়েছে৷DU stood the 135th among Asian universities in 2019
দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি (philosophy) (গ্রিক ভাষা φιλοσοφία, ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে "জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা") হলো অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া প্রভৃতি মৌল বিধানের আলোচনাকেও দর্শন বলা হয়। মানুষের সামাজিক চেতনার বিকাশের একটা পর্যায়েই মাত্র মানুষের পক্ষে বিশ্লেষণী দৃষ্টি নিয়ে জগৎ এবং জীবন সম্পর্কে চিন্তা করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার নিজের উদ্ভব মুহূর্ত থেকেই চিন্তার এরূপ ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম ছিল না। মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। নিজের জীবনকে অধিকতর নিশ্চিত করে রক্ষা করার প্রয়োজনে মানুষ প্রকৃতি জগতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। প্রকৃতি, জগৎ এবং পরবর্তীকালে মানুষের নিজের দেহ এবং চেতনা সম্পর্কেও সে চিন্তা করতে শুরু করে।আদিকালে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুব অধিক ছিল না। দর্শনই আদি জ্ঞানের মূল ভাণ্ডার। জগৎ ও জীবনের প্রত্যেকটি সমস্যা মানুষের কাছে প্রশ্নাকারে উত্থাপিত হয়। যে প্রশ্নই উপস্থিত হোক না কেন, মানুষ তার একটা জবাব দিয়ে প্রকৃতিকে বশ করার চেষ্টা করেছে। তাই আদি দর্শন একদিকে যেমন সমস্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার তেমনি আবার তার মধ্যে সমস্যার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমাধানের বদলে কাল্পনিক সমাধানের সাক্ষাৎ অধিক মেলে। কালক্রমে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন দার্শনিক কল্পনা বাস্তব জীবনে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তার স্থানে অধিকতর সঠিক সমাধান আবিষ্কৃত হতে থাকে। এইভাবে অধিকতর বাস্তব এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা ভিত্তিতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিকশিত হতে থাকে। পূর্বে প্রকৃতি, পদার্থ, সমাজ, চেতনা, যুক্তি, অর্থনীতি, ধর্ম সবই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালক্রমে তাদের প্রত্যেকে এক একটি ভিন্ন বিজ্ঞান বা আলোচনার শাখায় রূপান্তরিত হতে থাকে। এই বিকাশের পরিণামে বর্তমানে দর্শন বলতে কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভরশীল কোনো বিষয় আর অবশিষ্ট নেই। তাই দর্শনের প্রাচীন সংজ্ঞা এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হওয়ার পরেও দর্শনকে অনেকে কল্পনার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রয়াসে দর্শন জীবনের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য হয়ে পড়ে। যেখানে প্রাচীনকালে জীবনের সমস্যাই দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে সেখানে আধুনিককালের এরূপ প্রয়াস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত করেছে। দর্শনের এই সংকটের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন ঊনবিংশ শতকে কার্ল মার্কস। কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন যে, দর্শন হবে জীবন এবং জগৎকে বৈজ্ঞানিক এবং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। দর্শন হবে বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের স্বার্থে জগৎ এবং সমাজকে পরিবর্তিত করার ভাবগত হাতিয়ার। দর্শন অবাস্তব কল্পনা নয়। দর্শন জগৎ ও জীবনের মৌলিক বিধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আর এই ব্যাখ্যারই অপরনাম হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্ব।দর্শন যেমন মানুষের আদি জ্ঞানভাণ্ডার, তেমনি তার ইতিহাস জ্ঞানের যে কোনো শাখার চেয়ে প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিস, ভারত ও চীনে দর্শনের বিস্ময়কর বিকাশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু দর্শনের বিকাশকে দেশ বা জনগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত করার কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। জীবন ও জগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তাই হচ্ছে দর্শন।
পঞ্চদশ শতাব্দীর বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা কর্তৃক বাংলা ভাষায় অনূদিত রামায়ণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা শ্রীরাম পাঁচালী নামে পরিচিত। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি পাঁচালীর আকারে পয়ার ছন্দে রচিত এবং মূল সংস্কৃত রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। উপরন্তু কৃত্তিবাস রামায়ণ-বহির্ভূত অনেক গল্প এই অনুবাদে গ্রহণ করেছিলেন। তদুপরি, তিনি বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রবেশ ঘটিয়ে তিনি বাল্মীকি-রামায়ণ উপাখ্যানের বঙ্গীকরণ করেন, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত বাল্মিকী রামায়ণ অপেক্ষা ভিন্ন। যেমন রামায়ণের মূল রচয়িতা বাল্মিকী তাঁর রচনায় রামচন্দ্রকৃত দুর্গাপূজার কথা উল্লেখ করেন নি, এমনকি রামায়ণের অন্য কোনো অনুবাদেও তা দেখা যায় না। কিন্তু কৃত্তিবাস ওঝা তার রামায়ণে এটি কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণের চরিত্রগুলো তৎকালীন সাধারণ বঙ্গীয় সমাজের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন, যা বাল্মিকী রামায়ণে বর্ণিত একই চরিত্রের সাথে একই রকম নয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা
বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা হচ্ছে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন ব্যাংকসমূহকে একটি তালিকা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহকে মূলত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই সামাজিক ব্যবসার ধারণায় প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক নামক ক্ষুদ্রঋণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যা একটি বিশেষায়িত অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখায় গ্রামীণ ব্যাংক এবং মুহাম্মদ ইউনুস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্পান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
সমাজতত্ত্ব একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ শৃঙ্খলা যা প্রাথমিকভাবে ফরাসি বিপ্লবের পর পরই জ্ঞানদান চিন্তার ফলে সমাজের প্রত্যক্ষবাদী বিজ্ঞান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি বিজ্ঞান এবং জ্ঞানের দর্শনের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ফসল। বৃহত্তর অর্থে দর্শনের সাধারণ ভিত্তি থেকে পূর্ব নির্ধারিত ক্ষেত্র হিসেবে সামাজিক বিশ্লেষণের জন্ম। আধুনিকতা, পুঁজিবাদ, নগরায়ন, যৌক্তিকীকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা, উপনিবেশ স্থাপন এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আধুনিক একাডেমিক সমাজতত্ত্ব আবির্ভূত হয়েছে। ১৯ শতকের শেষ দিকে সমাজবিজ্ঞান তার সামাজিকতার একক এবং নজরদারির নিমিত্তে আধুনিক জাতি রাষ্ট্রসমূহে একটি বিশেষ আগ্রহ সষ্টি করে একে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করে। আলোকায়নের চেয়ে আধুনিকতার ধারণার উপর গুরুত্বারোপ করে, প্রায়ই শাস্ত্রীয় রাজনৈতিক দর্শন থেকে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনাকে আলাদা করা হয়।সরকার, ব্যবসা, সংস্থা এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংখ্যামূলক সামাজিক গবেষণা কৌশল সাধারণ টুলস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সামাজিক গতিবিদ্যার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থেকে বিলুপ্ত হয়ে, এটি সামাজিক গবেষণা কে সমাজতত্ত্বের শৃঙ্খলা থেকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে। একইভাবে, যে সকল প্রতিষ্ঠান মানুষ, মিথস্ক্রিয়া, সমাজ বা সংস্কৃতি অধ্যয়ন করে; তাদের বুঝাতে "সামাজিক বিজ্ঞান" ছাতা টার্ম হিসেবে অধিকার লাভ করে।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বাংলা: বাংলাদেশ গণসংঘ) বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম "আওয়ামী লীগ" করা হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ (বাংলা: [ʃami bibekanɒnɖo] (শুনুন), Shāmi Bibekānondo; ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২) নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত (বাংলা: [nɔrend̪ro nat̪ʰ d̪ɔt̪t̪o]), ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাটি হল, "আমেরিকার ভাই ও বোনেরা ...," ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত চিকাগো বক্তৃতা, যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন। স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তার রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল "খণ্ডন-ভব-বন্ধন" (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও "নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি"। এছাড়া "নাচুক তাহাতে শ্যামা", "৪ জুলাইয়ের প্রতি", "সন্ন্যাসীর গীতি" ও "সখার প্রতি" তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। "সখার প্রতি" কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
বৈদিক যুগের ধর্ম (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ অব্দ) (অথবা বৈদিক ধর্ম, বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্ম বা প্রাচীন হিন্দুধর্ম বা, প্রাচীন ভারতের প্রেক্ষাপটে, ব্রাহ্মণ্যধর্ম) হল আধুনিক হিন্দুধর্মের আদি রূপ। ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম ও আধুনিক হিন্দুধর্মের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়। এটি হল আর্য ধর্মের একটি শাখা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় (১৭১২ – ১৭৬০) অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও মঙ্গলকাব্যের সর্বশেষ শক্তিমান কবি। হাওড়া জেলার পেড়ো-বসন্তপুরে জন্ম হলেও পরবর্তী জীবনে তিনি নদিয়ার কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের আশ্রয় গ্রহণ করেন। নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল কাব্যের স্বীকৃতিতে তাকে ‘রায়গুণাকর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। অন্নদামঙ্গল ও এই কাব্যের দ্বিতীয় অংশ বিদ্যাসুন্দর তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ও হিন্দুস্তানি ভাষার মিশ্রণে আশ্চর্য নতুন এক বাগভঙ্গি ও প্রাচীন সংস্কৃত ছন্দের অনুকরণে বাংলা কবিতায় নিপুণ ছন্দপ্রয়োগ ছিল তার কাব্যের বৈশিষ্ট্য। তার কাব্যের অনেক পঙ্ক্তি আজও বাংলা ভাষায় প্রবচনতুল্য। যথাযথভাবেই রবীন্দ্রনাথ তার কাব্যকে তুলনা করেন “রাজকণ্ঠের মণিমালা”-র সঙ্গে। তার আর একটি বিখ্যাত কাব্য সত্যপীরের পাঁচালী। ভারতচন্দ্র ১৭৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার মৃত্যুর সাথে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সমাপ্তি হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার (যা মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা সম্মিলিতভাবে মহান জাতীয় সংসদে তাদের নীতি-নির্ধারণ ও কর্মপন্থা উপস্থাপন করেন। এ বিষয়গুলো তাদের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যপ্রণালীর সাথেও জড়িত।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হলো একটি অবস্তুগত বৈধ সত্ত্বা, যা একটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত এবং যার একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি স্থায়ী জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সীমানা, সরকার এবং অপর কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা থাকলে তাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র অন্য কোন শক্তি বা রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল বা অন্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত নয়।রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বা বিলোপ একটি আইনগত প্রত্যয়। রাষ্ট্রসত্তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়াও একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্ত্বিত্ব থাকতে পারে। তবে অস্বীকৃত রাষ্ট্রসমূহ কখনও কখনও অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অপারগ হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রূপ অনুসরণীয় হবে।১০ই এপ্রিল ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনী সহ বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধীত হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে পঞ্চম সংশোধনী , সপ্তম সংশোধনী , ত্রয়োদশ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের আদেশে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায় এরূপ কোনো সংশোধনী এতে আনা যাবে না; আনা হলে তা হবে এখতিয়ার বহির্ভূত।বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়;- সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা বিধৃত আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা -কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা "দিবস" পালিত হয়। এই সকল বৈশ্বিক দিবস বা বিশ্ব দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবসসমূহের তালিকা এই পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে - কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা ক্ষেত্র বিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা।
সংস্কৃতি (বা কৃষ্টি) হলো সেই জটিল সামগ্রিকতা যাতে অন্তর্গত আছে জ্ঞান, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, আচার এবং সমাজের একজন সদস্য হিসেবে মানুষের দ্বারা অর্জিত অন্য যেকোনো সম্ভাব্য সামর্থ্য বা অভ্যাস।ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপিকা হেলেন স্পেনসার-ওটেইয়ের মতে, সংস্কৃতি হলো কিছু বুনিয়াদি অনুমান, মূল্যবোধ ও জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির, বিশ্বাস, নীতিমালা, প্রক্রিয়া এবং আচরণিক প্রথার অস্পষ্ট সমষ্টি–যা এক দল মানুষ ভাগ করে নেয় এবং সেই সমষ্টি দলের প্রত্যেক সদস্যের আচরণকে এবং তার নিকট অন্য সদস্যের আচরণের 'অর্থ' বা সংজ্ঞায়নকে প্রভাবিত করে (কিন্তু নির্ধারিত করে না)।
সাকিব আল হাসান (জন্ম: ২৪ মার্চ ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। তিনি ২৮ অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি২০ আন্তর্জাতিক সংস্করণে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত সাকিবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার বলে গণ্য করা হয়। ১০ বছর ধরে শীর্ষ অল-রাউন্ডারের রেকর্ডের অধিকারী সাকিব এখনো একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ফরম্যাটে সর্বোচ্চ র্যাংকিং ধরে রেখেছেন।২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার অভিষেক হয়। সাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সাকিব ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইসিসির খেলোয়াড়দের র্যাংকিং অনুসারে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০ প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক নম্বর অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ করার গৌরব অর্জন করেন এবং ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান (২১৭) সংগ্রাহক হন। তিনি টি২০তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান পূর্ণ করেন ৷ এছাড়া দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি২০তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন। ২০১৯ সালের জুনে তিনি দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে মাত্র ১৯৯ ম্যাচে ৫,০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી উচ্চারণ )(মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী) বা মহাত্মা গান্ধী (২রা অক্টোবর, ১৮৬৯ - ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮) একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
গিরিশচন্দ্র ঘোষ (২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ - ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তারই অবদান।১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। গিরিশচন্দ্র প্রায় চল্লিশটি নাটক রচনা করেছেন এবং ততোধিক সংখ্যক নাটক পরিচালনা করেছেন। জীবনের পরবর্তী ভাগে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের এক বিশিষ্ট শিষ্য হয়েছিলেন।
জসীম উদ্দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৪ মার্চ ১৯৭৬) একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। 'পল্লীকবি' উপাধিতে ভূষিত, জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্দীনের। তার নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য পল্লিগীতি এখোনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। যথা:- আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, কাজল ভ্রমরা রে ইত্যাদি।
তাজমহল (হিন্দি: ताज महल, উর্দু: تاج محل) ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। তাজমহলকে (কখনও শুধু তাজ নামে ডাকা হয়) মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। তখন একে বলা হয়েছিল 'বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠকর্ম।'
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আরবি: إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) হল কুরআনের একটি আয়াত (বাক্য) বা দোয়া, যার বাংলা অর্থ হল "আমরা তো আল্লাহরই এবং আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী"। কথাটা সাধারণত মুসলমানরা তাদের বেদনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে উচ্চারণ করে, বিশেষ করে যখন একজন মুসলমান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে।
মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০ - ৮ জুন ৬৩২; আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ), পূর্ণ নাম : মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم) হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী, (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু), তথা "বার্তাবাহক" (আরবি : الرسول আর-রাসুল), যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষ) মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন শিশু বয়সে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন। তিন বছর পর ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন, এবং ঘোষণা দেন "আল্লাহ্ এক" ও তার নিকট নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত, এবং ইসলামের অন্যান্য নবীদের মত তিনিও আল্লাহর প্রেরিত দূত।মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে "আল্লাহর বাণী" বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামী আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।
ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দর্শন ও শিক্ষার সমন্বয়
শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ education। এই education শব্দটি তিনটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে ধরা হয়, যথা এডুকেয়ার যার অর্থ হলো প্রতিপালন করা, educo যার অর্থ হলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এডুকিরি যার অর্থ হলো অঙ্কন করা । অর্থাৎ শিক্ষা হলো সমস্ত প্রক্রিয়ার সমন্বয় যার দ্বারা ব্যক্তি তার সক্ষমতা ,দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সহ সমস্ত রকম চারিত্রিক ও সামাজিক গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে এবং যার ফলস্বরূপ ব্যক্তির সর্বোত্তম আত্ম পরিস্ফুরণ সাধিত হয় । স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় মানবাত্মার অন্তর্নিহিত উৎকর্ষতার সার্বিক পরিস্ফূরণ ই-শিক্ষা। মহান শিক্ষাবিদ পেস্তালোজির মতে মানবাত্মার অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক মধুর ও প্রগতিশীল বিকাশই হল শিক্ষা। কবিগুরুর ভাষায় অন্তরের আলোর সম্পদ শিক্ষা দ্বারা অর্জিত হয় শিক্ষা কে একটি প্রক্রিয়া ধরা হলে শিক্ষা একটি নিরবিচ্ছিন্ন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা দ্বারা মানুষ জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে সার্বিক গুণের অধিকারী হয়। শিক্ষাকে উৎপাদন হিসেবে ধরলে শিক্ষান্তে শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারা শিক্ষার ফল বিচার করা হয় যা শিক্ষাকে পরিমাপ করতে সাহায্য করে অপরপক্ষে দর্শন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ philosophy শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফিলিও ও সোফিয়া এর সমন্বয় তার অর্থ হলো সত্যের প্রতি ভালোবাসা। আসলে দর্শন হলো সত্যের অনন্ত অনুসন্ধান বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে সার্বজনীন জিজ্ঞাসাই দর্শনের লক্ষ্য। মহান দার্শনিক প্লেটোর মতে বহুবিধ বস্তু বা ঘটনার সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কীয় জ্ঞান ই দর্শন। radhakrishnan বলেছেন বাস্তবতার যুক্তিসম্মত অনুসন্ধানই দর্শন। দর্শন মানব জীবনের তিনটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে যথা metaphysics বা আধিভৌতিক epistemology বা জ্ঞানতত্ত্ব axiology বা মূল্যবোধের অনুসন্ধান। অনুসন্ধান যুক্তি নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।সুতরাং উদ্দেশ্যগত ভাবেই দর্শন ও শিক্ষা নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সমস্ত সময়কার মহান দার্শনিকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা এবং চেতনা দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার রীতিনীতি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করে গেছেন ।প্রাচীন গ্রিসের মহান দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এবং এরিস্টোটল শিক্ষাব্যবস্থা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করে গেছেন ।পাশ্চাত্যের মহান দার্শনিক রুশো ,কান্ট ,হেগেল, dewy শিক্ষার প্রকৃতি , শিক্ষার লক্ষ্য এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন ।ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা পদ্ধতি এবং তার সঠিক ইমপ্লিমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে ভারতীয় দার্শনিকগণ যথা বুদ্ধ ,গান্ধী ,টেগর, অরবিন্দ ,রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখের অবদান আছে ।শিক্ষা এবং দর্শন দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় কারণ শিক্ষা ও দর্শন ও উভয়ের লক্ষ্যই হলো জ্ঞান এবং উভয় অর্জনের মাধ্যমই হল ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান। ধারণা নির্মাণ ও তার যথার্থ বাস্তবিক প্রয়োগ দ্বারা শিক্ষা পরিচালিত হয় তাই যথার্থভাবে শিক্ষা প্রয়োগ করতে হলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত অভিলক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই অভি লক্ষ্য নির্মাণের কাজটি করে থাকে দর্শন । দর্শন জীবন ও মূল্যবোধের সাপেক্ষে একটি সুস্থির দিশা তৈরি করে যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও স্থির অভিমুখী করে তোলে । তাই বলা ভালো সুস্থির দর্শন ছাড়া শিক্ষা অন্ধ আর সুস্থির শিক্ষা ছাড়া দর্শন অচল । জন ডুয়ি যথার্থই বলেছেন শিক্ষা হলো দর্শনের পরীক্ষাগার যেখানে সমস্ত দার্শনিক সত্যতার যথার্থতা পরীক্ষিত হয় । তাই দর্শনের কাজ হল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক গুণাবলী নির্দেশনার পথ স্থির করা আর শিক্ষার কাজ হলো সেই পথে চলে জীবনকে উৎকর্ষ থেকে উৎকর্ষতর করে তোলা । একটি মুদ্রার দুই পিঠ হলো শিক্ষা আর দর্শন । দর্শনের পিঠটি হল চিন্তাশীল শিক্ষার পিঠটি হল সক্রিয় ।সুতরাং পরিশেষে বলা চলে যে শিক্ষা এবং দর্শন দুটি পৃথক বিষয় নয় এটি একত্র করে যে শিক্ষাদর্শন ভাবনা করা হয়েছে সেটি যথার্থ। শিক্ষা পদ্ধতি চারটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষক , পাঠক্রম ও শিক্ষার্থী এই চারটি মৌলিক বিষয় নিজেদের মধ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে শিক্ষার লক্ষ্য কে পূর্ণতা দেয় ।আর এই চারটি বিষয়কে একত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত শিক্ষা দর্শনের ।একটি যথার্থ সমাজদর্শন ই পারে শিক্ষার ধারণা শিক্ষা পরিকল্পনাকে সুশৃংখল করে তুলতে দার্শনিক রীতিনীতি এবং দার্শনিকদের মৌলিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ উচ্চশিক্ষা এই রীতি-নীতি গুলিকে আশ্রয় করে অতীতের সমস্ত সম্পদ ও ঐতিহ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যা দার্শনিক চিন্তা ভাবনা দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃংখল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে শিখন ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করা এবং তার উন্নতি সাধন করা শিক্ষা দর্শনের মৌলিক লক্ষ্য । কোন শিক্ষা ভাবনার বা শিক্ষা তত্ত্বের যে দ্বন্দ্ব ও ভ্রান্তি গুলি আছে সেগুলো দূর করা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষা দর্শন মানুষকে সক্ষম করে তোলে যার দ্বারা সে প্রচলিত ব্যবস্থা ও নীতিগুলির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে শেখে। শিক্ষাতত্ত্ব গুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধারণা উপলব্ধিগুলোকে বাস্তবতা দান করে শিক্ষাকে সময় উপযোগী করে তোলা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষাব্যবস্থার চারটি মৌলিক উপাদানকে শিক্ষাদর্শন নিম্নলিখিতভাবে পরিশীলিত ও যথার্থ করে তোলে: প্রথমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো একটি সামাজিক সংস্থা যা শিক্ষার মূলাধার । শিক্ষা দর্শন মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলির পুনস্থাপন করা যা পূর্বপুরুষ দ্বারা অর্জিত ।এগুলির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় যেমন ভাষা, বিজ্ঞান , ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে যা তাদের বোধকে প্রাথমিক স্তর থেকে অন্তিম স্তরের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । আর এই জ্ঞান অর্জন পর্বের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পাঠক্রম যা উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষাদর্শন দ্বারা গঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন । শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি শিশু তার সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্তব্যবোধ নীতিবোধ এবং তার চরিত্র ও মানসিক গঠন পাশাপাশি শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া আবশ্যক বলে বিবেচনা করবে । এ থেকেই তার মনে সাম্যের অধিকার ও সামাজিক ভাবনাগুলি বিকাশ পাবে যা তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বিদ্যালয় এর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী নাহলে এই শিক্ষার লক্ষ্য গুলি কোন রূপেই যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো শিক্ষক । ই-লার্নিং ব্যবস্থায় শিক্ষকের গুণগতমানের ও তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন সাধিত হলেও শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক একাধারে প্রশিক্ষক, নির্দেশক বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শিক্ষাব্যবস্থায় তিনিই নেতা, তার নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ।একজন যথার্থ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে তার উপযুক্ত নেতৃত্ব দান ও কর্ম প্রয়াসের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে এমন কার্যক্রম নির্ধারণ করে যে যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সানন্দে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধ্য হয়। শিক্ষকের সে কারণেই প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সমর্থ করে তোলে যার দ্বারা সে তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের পরিধি, সীমা ,লক্ষ্য ,যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি লাভ করতে পারেন। শিক্ষার্থীর শিক্ষার লক্ষ্য ,শিখন পরামর্শ এবং শিখন কর্মকান্ড শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় ।কিন্তু তিনি কখনোই শিক্ষার্থীকে চাপ বা স্ট্রেস প্রদান করবেন না যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পর্কে ভ্রান্ত ভয়ের শিকার হয়ে সে ব্যবস্থা থেকে ফিরে আসে শিক্ষকের নিজের গুণেই জ্ঞান-বুদ্ধি বিকশিত হবে এবং তার শিক্ষার্থী দ্বারা প্রয়োগে রূপান্তরিত হবে সম্মত সুস্থির পরিকল্পনা শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে উৎসাহিত করবে ।শিক্ষক নিজেকে সর্বজ্ঞ না ভেবে শিক্ষার্থীর সাথে একই আনন্দে শেখার লক্ষ্যে ব্রতী হবে ।পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে উপযোগী শিক্ষা শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় । শিক্ষক ,পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর সুস্থির সমন্বয় দ্বারাই শিক্ষার লক্ষ্য সাধিত হয়, তাই শিক্ষককে শিক্ষা ,শিখন দর্শন অবশ্যই জানা প্রয়োজন এবং তা অনুযায়ী তাকে শ্রেণিকক্ষ পরিচালিত করা একান্ত কর্তব্য বলে মেনে নিতে হবে । একজন শিক্ষক তিনি যদি মনে করেন যে তিনি পারবেন তবে তিনি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন কিন্তু তিনি যদি মনে করেন তিনি পারবেন না তবে শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।তাই শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সামগ্রিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্য করবে। তৃতীয়তঃ পাঠক্রম ,পাঠক্রম শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ।শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাদর্শন সম্মত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তা পাঠক্রমে সুপরিকল্পিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে ।এর ব্যাপ্তি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণীকক্ষের বাইরে উভয় জায়গাতেই সুবিন্যাস্ত থাকে। ক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী উভয়ই পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়বস্তু ও শিক্ষা পদ্ধতি , শিখন পদ্ধতি ও তার মূল্যায়ন পাঠক্রমের দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়। শিক্ষার লক্ষ্য বলতে পাঠক্রম দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী উভয় লক্ষ্যই কার্যকরী করা হয় ।তাই জ্ঞান ও বোধ অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োগ ও দক্ষতার দিকেও পাঠক্রমের যথেষ্ট নজর থাকে ।পাঠক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় পদ্ধতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয় বলা হয় ।পাঠক্রমের মধ্যদিয়েই শিক্ষা দর্শনের উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি শিক্ষাঙ্গনে পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থী এই পাঠক্রম দ্বারা শিক্ষকের সাহায্যে শিক্ষাঙ্গনে যেমন ভবিষ্যতে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে তেমনই উপযুক্ত মানুষ হয়ে ওঠে। চতুর্থত ছাত্রঃ শিক্ষার্থী হল শিক্ষাব্যবস্থার সর্বাধিক সজীব উপাদান ।শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকে ছাত্র তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও বিদ্যালয় এর যাবতীয় কার্যাবলী আবর্তিত হয় ।বৈদিক শিক্ষায় বা প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষার্থী ছিল কেবলমাত্র শ্রোতা , কিন্তু দিনে দিনে শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষম ও সক্রিয় করে তোলার যাবতীয় উপাদান শিক্ষাব্যবস্থায় আমদানি করা হয়েছে ।আর তাই প্রকৃতির মাঝে শিক্ষা, হাতে-কলমে শিক্ষা বা সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষা ক্রমে ক্রমে প্রসার লাভ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি প্রচ্ছদে শিক্ষার্থীর মনে ও চিন্তাই যদি সুস্থির শিক্ষা দর্শনের ছাপ পরিলক্ষিত না হয় তবে শিক্ষার্থীর যে সামাজিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে তা শিক্ষা এবং সমাজ উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। জ্ঞানের প্রতি জিজ্ঞাসা বা জ্ঞানের পিপাসা সত্যানুসন্ধান এ গুলি দর্শনের মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মনে এই লক্ষ্য গুলি স্থাপিত করা একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন তাই একজন শিক্ষার্থীকে যেমন ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মের অনুসন্ধানে সাহায্য করে, তার পাশাপাশি জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে বাস্তব ধারণা তাকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী করে তোলে ।এখানেই শিক্ষা দর্শন এর উপযোগিতা। মূল্যবোধ ,নীতিশিক্ষা, জীবনবোধ ,কর্মক্ষমতার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, অঙ্ক ,ইতিহাস-ভূগোল, অঙ্কন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থী নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। শিক্ষার্থীর ভেতরকার যে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান জিজ্ঞাসা তা বাস্তবে পরিস্ফুটিত হয় তাই শিক্ষাঙ্গনে অসমর্থ শিক্ষার্থী ও একটু পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা ফুটে ওঠে তার পরিস্ফূরণ ঘটে শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হিসাবে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষাব্যবস্থার উপযুক্ত লক্ষ্য ও উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষার যথার্থ বাস্তব প্রয়োগের জন্য শিক্ষাদর্শন অনস্বীকার্য ।তাই দর্শনের অন্যান্য শাখার থেকেও দর্শনের শিক্ষাদর্শন শাখার উপযোগিতা ও ব্যবহার বর্তমানে সর্বাধিক। এই শিক্ষা দর্শনের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ যা শিক্ষার লক্ষ্য তাকেই বাস্তবে সুচিন্তিত মতামতের দ্বারা দিশা স্থাপন করান। ভারতীয় শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি অর্থাৎ বেদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেদ বৈদিক যুগে মূলত আর্যদের দ্বারা বিভিন্ন মনিষীদের অর্জিত জ্ঞান ,উপলব্ধি মূলত দার্শনিক চিন্তা ভাবনার ভিত্তিতে আকরগ্রন্থ বলা যায় । বেদের মূলত চারটি ভাগ ঋক্ ,সাম, যজু ও অথর্ব। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুটি অংশের সমন্বয়ে বেদ গঠিত। মন্ত্রের যে সমন্বয় বা সমষ্টি তাকে সংহিতা নাম দেওয়া হয়েছে ।আর বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনা বা যজ্ঞ, পূজা-পার্বণ প্রভৃতির জন্য যে নিয়ম লেখা আছে তাকে ব্রাহ্মণ নাম দেওয়া হয়েছে । জীবনের শেষ ভাগ শান্তিময় জীবন তার কথা বলা আছে আরন্যকে ।আর আরন্যক তথা বেদের সংশোধন পরিসমাপ্তি সমষ্টি একে উপনিষদ নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা মীমাংসা এবং বেদান্ত বলে দুটি গ্রন্থের কথা পাবো । মীমাংসা সাধারণত ritualistic ধারণাগুলি অর্থাৎ ধর্মীয় উপাচার সম্পর্কে বলা আছে। আর বেদান্ত সেখানে কিছু আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কথা বলা আছে। ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় শিক্ষা দর্শন এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম যে বিষয়গুলির কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে দর্শন যে শব্দটি এটি একটি সংস্কৃত শব্দ ।এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যক্ষভাবে দেখা। দর্শন শব্দের অর্থ থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের থেকে ভারতীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। পাশ্চাত্য দর্শনে বৌদ্ধিক উপলব্ধির কথা জোর দিয়ে বলা হলেও ভারতীয় দর্শনে আত্মার উপলব্ধির উপরে সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। যার মূলগত অর্থ হচ্ছে সত্য এবং বুদ্ধি এই দুটির প্রত্যক্ষ অবলোকন বা দর্শন ।ভারতীয় দর্শন কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি হচ্ছে আস্তিক দর্শন আরেকটি হচ্ছে নাস্তিক দর্শন। আস্তিক দর্শন দু'প্রকার একটি হচ্ছে বেদ নির্ভর দর্শন, আরেকটি হচ্ছে বেদ নিরপেক্ষ দর্শন ,এখানে বেদের পরোক্ষ প্রভাব বর্তমান। নাস্তিক দর্শনে বেদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রভাবই বর্তমান নেই ।বৈদিক দর্শনের মধ্যে মীমাংসা এবং বেদান্ত এই দু'প্রকার দর্শন পরে ।আর বেদ নিরপেক্ষ দর্শনের মধ্যে সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিকা এই দর্শন গুলি পরে ।নাস্তিক দর্শনের মধ্যে চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন পড়ে । পরবর্তীকালে যে সমস্ত দর্শন গুলি এসেছে সেগুলি এসমস্ত দর্শনের সমন্বয়েই গঠিত । ভারতীয় দর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপঃ ১/প্রত্যক্ষ উপলব্ধিঃ বৈদিক যুগে বিভিন্ন ঋষি মনীষীরা তাদের প্রতিদিনকার বাস্তব উপলব্ধি থেকে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করতেন ।জীবনের প্রকৃতি, জন্ম , মৃত্যু এবং বিভিন্ন জাগতিক ও মহাজাগতিক কর্মকান্ডের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য ও তার সত্য অনুসন্ধান করার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোই ছিল একমাত্র পথ। প্রতিটি দর্শনেই গুরুর বাস্তব উপলব্ধি দ্বারা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২/চার্বাক দর্শন ছাড়া প্রতিটি দর্শনেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে ।ঈশ্বরের অস্তিত্ববাদ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বৈদিক দর্শনের পাশাপাশি জৈন ও বৌদ্ধ এই দর্শন গুলিতেও অস্তিত্ব সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে । ৩/ভারতীয় দর্শনের প্রত্যেকটি ধারা একই সাথে এগিয়ে গেলেও এদের মধ্যে সুস্থির পার্থক্য এবং সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান । একে অপরের উত্তরণের পথে কখনো বাধা সৃষ্টি করেনি। আবার ভিন্ন ভিন্ন দর্শন বা মত অবলম্বনকারী মানুষদের মধ্য প্রত্যক্ষ কোন সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ৪/ প্রত্যেক দর্শন মতে যুক্তি নির্ভরতা একটা মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।যুক্তির দ্বারা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যা ও জীবনবোধকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যম হিসেবে দর্শনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ৫/ভারতীয় দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব বরাবরই বিদ্যমান । এখানে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য আত্মাকে একটি চরম পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে জীবনের লক্ষ্য অর্জিত হয় । ৬/ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দর্শন ছাড়া সব ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে মানুষের অজ্ঞতাই হলো মানুষের দুঃখের কারণ। এই দুঃখ তিন রকম হতে পারেঃ একটি আধ্যাত্মিক, একটি আধিভৌতিক, আরেকটি আধিদৈবিক ।মানুষের উপলব্ধি শ্রবণ ,মনন ও নিদ্বিধায়াসন দ্বারা। জাগতিক চাওয়া-পাওয়া বা বন্ধন থেকে মুক্তির ঘটনাকে মোক্ষলাভ বলা হয়েছে। ৭/ভারতীয় দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভারতীয় দর্শন উদার মানসিকতার ধারক ও বাহক । ৮/একটি দর্শনই self-realization আত্ম-উপলব্ধিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। ৯/ দর্শন মতে কার্যকারণ সম্পর্ক পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মুখ্য কারণ ।যদি কোন ঘটনা ঘটে জানতে হবে তার একটি কারণ আছে ।তবে ফলের আশা করে কর্ম করা ঠিক নয়। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি প্রধান উপাদান হলো নীতিবোধ ও মূল্যবোধের উপর এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ৯/ভারতীয় দর্শন মতে অজ্ঞতা বা কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি না থাকলে মানুষ দুঃখ কষ্টের শিকার হয় ।এবং এই দুঃখ-কষ্টের থেকে তাকে বের হতে গেলে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে তাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ১০/ ভারতীয় দর্শন পুনর্জন্ম মতে বিশ্বাসী অর্থাৎ মানুষ এজনমে যেমন কাজ করে যাবে পরজন্মে সেই কাজের ফলস্বরূপ তার জন্ম নিতে হবে । ১১/ভারতীয় দর্শনের গভীরতা সুনিবিড় ।মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ থেকে তার আত্মার চরম মুক্তি বা অজানা সমস্ত তথ্যের সত্য উদঘাটন এসবের মধ্যেই নিহিত আছে ভারতীয় দর্শনের মূল্যবোধ। ১২/ভারতীয় দর্শন মতে মানুষের যে গুনগুলি বা চাওয়া-পাওয়া গুলি থাকে সেগুলি হচ্ছে অর্থ ,কাম ,ধর্ম এবং মোক্ষ ।ধর্ম ও মোক্ষের আত্মিক মূল্য বর্তমান ,আর বাস্তবিক মূল্য অর্থ ও কামের বর্তমান । আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন যার নেতৃত্বে ছিলেন ডেলর 1996 সালে শিক্ষা সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি পেশ করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে শিক্ষার মূলত চারটি স্তম্ভ আছে প্রথমত learning to know দ্বিতীয়তঃ learning টুডু তৃতীয়তঃ learning to লিভটুগেদার চতুর্থত learning to be ।ভারতীয় দর্শনে এই বিষয়গুলি কেই মূলত উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ,সহযোগ ও আত্মানমরিদ্ধি । ভারতীয় দর্শনের মুল বক্তব্যগুলিকে অান্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বসহ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দু'রকমের প্রমা ও অপ্রমা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলা হয় যা অনুভব ও স্মৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।আর অপ্রমা ~ সমস্যা ,ভ্রম ও যুক্তি দ্বারা গঠিত হয় । ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞানের ধারণা নির্মাণ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে ন্যায় তত্ত্বের কথা আলোচনা করব । ন্যায় তত্বের উদ্ভাবক ঋষি গৌতম ।বাস্তব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক চিন্তা এই দুটি এই তত্ত্বের ভিত্তি। বাস্তবতার নিরিখে ক্ষেত্রে বহুবস্তু বাদী বাস্তবতাকে স্বীকার করে ।বাস্তবতার আধার হিসেবে যে বস্তুগুলোকে এখানে ধরা হয়েছে তা হলো পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু ,আকাশ, কাল, দিক ,আত্মা, মন। এই তত্ত্ব মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল উপলব্ধি ,অনুমান ,তুলনা ও পরীক্ষণ ।আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি দ্বারা তাৎক্ষণিক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি বলে ।উপলব্ধি দুই প্রকার একটি লৌকিক অপরটি অলৌকিক ।বাক্য ও মানস বা মন দ্বারা যে উপলব্ধি অর্জিত হয় তাকে লৌকিক উপলব্ধি বলে ।নির্বিকল্প ,সবিকল্প এবং প্রত্যয় অভিজ্ঞতা দ্বারা লৌকিক উপলব্ধি অর্জিত হয়। প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া নির্বিকল্প এবং প্রত্যক্ষ সংযোগ দ্বারা সবিকল্প অর্জিত হয় ।কোন বিষয়ের ভাষাগত অর্থ উদ্ধারকে প্রত্যয়াভিজ্ঞা বলে ।আর সাধারণভাবে অপ্রচলিত মাধ্যম দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে অলৌকিক উপলব্ধি বলে। সামান্য লক্ষণ ,জন লক্ষণ ও যোগজা দ্বারা এটি অর্জিত হয় ।জ্ঞান অর্জনের পর যে বিশেষ বোধ অর্জিত হয় তাকে অনুমান বলে। কারণ অনু শব্দের অর্থ হচ্ছে আগে এবং মান শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। গৌতম এর মতে অনুমান তিন রকমের পুরাভাত, শেষাভাত, সময়তদ্রষ্টা । তুলনা বা সামান্যীকরণ পদ্ধতিতে পুরাভাত, বাতিলকরণ প্রক্রিয়ায় শেষাভাত, অন্তরের সমর্থনে সময়তদ্রষ্টা অর্জিত হয় ।এই দর্শন মতে নিজের উপলব্ধিকে স্বার্থ এবং অপরের উপলব্ধিকে পরার্থ বলা হয়। তুলনা পর্বের শেষে সাক্ষ্য বা শব্দ যেটা আসলে verbal knowledge তা অর্জিত হয়। এটি দু'রকমের দ্রষ্টা ও অদ্রষ্টা ।এই দর্শন মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো ~ অনুমান ,যুক্তি তর্ক প্রভৃতি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন, সৃজনশীল চিন্তন, সঠিক বোধের দ্বারা মূল্যবোধ অর্জন করা ,বাস্তব বস্তুর সঙ্গে জ্ঞানকে একত্রিত করা, যথার্থ জ্ঞান ও বাস্তবোচিত জ্ঞানকে একত্রিত করা। ন্যায় তত্ত্বমতে পাঠক্রম সব সময় জীবনের মূল্যবোধ এবং বাস্তব ধারণা নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বস্তু ও ইন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি দ্বারাই পৃথিবীকে জানা সম্ভব। এই দর্শন মতে শিক্ষক যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করবেন তা মূলত বক্তৃতা পদ্ধতি ,আলোচনামূলক পদ্ধতি এবং সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি অনন্য ধারা হলো সাংখ্য দর্শন। এই দর্শনের উদ্ভাবক মহাঋষি কপিল। তার মতে ইহজগৎ পুরুষ ও প্রকৃতি এই দ্বৈত সত্ত্বা দ্বারা গঠিত। পুরুষ ও প্রকৃতির সমন্বয়ে মহৎ বা বুদ্ধি বা অহংকারের সৃষ্টি হয়। অহংকার তিন ধরনেরঃ সত্য, রজঃ এবং তমঃ। মন , বোধ ও শারীরবৃত্তীয় অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয় । ইহজগতের সচেতন সত্তাকে পুরুষ এবং অসচেতন সত্ত্বাকে প্রকৃতি বলা হয় ।তারা মহৎ বা বুদ্ধি দ্বারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। পঞ্চভূত কে তমঃ এবং গুণ গুলিকে রজঃ বলা হয়। ইহজাগতিক ঘটনাসমূহের কারণ হলো পুরুষ এবং তার বাস্তব বা প্রত্যক্ষ ফল হলো প্রকৃতি। এই প্রকৃতি দ্বারাই বহুবিধ ও গুণাবলী বাস্তবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের উৎস হল উপলব্ধি ,অনুমান ও আক্ষরিক পরীক্ষণীয় বস্তু সামগ্রী ।যথার্থ জ্ঞান উদ্দেশ্য বা প্রমতা , বিধেয় বা প্রমেয়া ও জ্ঞানের উৎস অর্থাৎ প্রমাণ এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উপলব্ধি দু'রকমের আলোচনা এবং বিবেচনা। বিশ্লেষণ সংশ্লেষ বা কোন তথ্যকে মনে মনে অনুধাবন করে বিবেচনা বা বস্তুর প্রত্যক্ষ ধারণা করা হয় ।আর বস্তুর সরাসরি অনুধাবন কে আলোচনা বলা হয় ।অনুমান দু'রকমের বিতঃও অবিতঃ। চিরন্তন হ্যা বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা বিত কে সনাক্ত করা হয়। চিরন্তন না-বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা অবিতঃ কে সনাক্ত করা হয়। পূর্ব পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে বিত লাভ হয় তাকে পুরাভাত বলে ।বর্তমান বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা যে বিত অর্জিত হয় তাকে সময়তদ্রষ্টা বলে ।অবিতা কে কখনো কখনো শেষাভাত বলা হয়। এই দর্শন মতে প্রমাণ বা শব্দ হিসাবে লৌকিক ও বৈদিক সমস্ত শ্রুতি ও বেদ নির্ভর লেখাগুলিকে ধরা হয়ে থাকে। আত্ম অনুভূতি এই দর্শন মতে জ্ঞান অর্জনের প্রধান উৎস। বৌধিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সংবেদন অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বৃদ্ধি এই দর্শন মতে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। পরিশেষে বলা যায় এই দর্শন মতে quality of life অর্থাৎ জীবনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার লক্ষ্য। পরবর্তী ভারতীয় দার্শনিক মতবাদটি হল যোগ। ঋষি পতঞ্জলি এর প্রবক্তা। সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে এর বহুবিধ মিল আছে। বলা ভাল সাংখ্যদর্শনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হল যোগ। এই দর্শন মতে উপলব্ধি দু'রকমের নির্বিকল্প ও সবিকল্প ।কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা কে নির্বিকল্প বলে ,এরপর যে মানসিক বিশ্লেষণ চলে তাকে সবিকল্প বলে। 25টি উপাদান দ্বারা মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয় এই দর্শন মতে তা ধরা হয়। এই 25 টি বিষয়ের মধ্যে প্রকৃতি, মহৎ ,অহংকার, মন ,ইন্দ্রিয়, পাঁচটি তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদান এবং পাঁচটি gross এলিমেন্ট বা মূল উপাদান এবং পুরুষ আছে। পুরুষ ,প্রকৃতি এবং ঈশ্বর মিলে মহৎ বা বুদ্ধি তৈরি হয় ।ইন্দ্রিয় ,অঙ্গ ও মন দ্বারা অহংকার বা জ্ঞান অর্জিত হয়। এই অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটে। এই দর্শন মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল মন, ইন্দ্রিয় ,চালন অঙ্গ। মানসিক বিশ্লেষণ দ্বারা নিজেকে মডিফাই বা উৎকর্ষতা বিধান করাই হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য। এভাবেই অর্জিত হয় সঠিক জ্ঞান বা প্রমা ।তৎপরতা বা প্রয়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দর্শনের মূল নীতি। দৈহিক উন্নতি ও মানসিক প্রগতি যোগ দর্শন এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ।আত্ম-উপলব্ধি শিক্ষার শেষ লক্ষ্য। নীতি প্রশিক্ষণ মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হয় । activities বা সক্রিয়তা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠদান এক্ষেত্রে শিক্ষাদানের প্রধান পন্থা। ভারতীয় দর্শনের একটি ভিন্নতর ধারা হলো চার্বাক দর্শন। চার্বাক দর্শন বেদ নির্ভর দর্শন নয়। এই দর্শনের স্রষ্টা বৃহস্পতি। এই দর্শনে জ্ঞানতত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব বা প্রত্যক্ষ উপলব্ধি এই দর্শন মতে জ্ঞানের একমাত্র উৎস । জ্ঞান অর্জনে অনুমান, কথ্য প্রবচন, তুলনা প্রভৃতির কোনো ভূমিকা নেই। ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব উপলব্ধি একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানের উৎস । অন্য উৎসগুলি সুপরিকল্পিতভাবে যুক্তি দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া বাধ্যতামূলক। দর্শন মতে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যায় পার্থিব বস্তু, বাস্তব যুক্তির অবতারণা করা হয়। কোন কাল্পনিক বা অবাস্তব সত্তা যেমন ঈশ্বর ,কর্মফল, পুনর্জন্ম ইত্যাদির অস্তিত্ব এই দর্শন বিশ্বাস করে না। এই দর্শনের মূল বৈচিত্র হলো এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না কারণ ঈশ্বরকে বাস্তবে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। চার্বাকপন্থীদের যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ভগবানের উৎস যদি না থাকে তবে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কে ?বা এই মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা কে?
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। পরে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো সামরিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ঘটে। হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের আদর্শিক পটপরিবর্তন বলে বিবেচিত।
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।