The most-visited বাংলা Wikipedia articles, updated daily. Learn more...
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ই মার্চ ১৯২০–১৫ই আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এসকল কারণে তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
মুজিব বর্ষ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদযাপন করার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের কারণে গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু খ্যাত নেতা অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় ঘোষিত বর্ষটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুজিব বর্ষের লোগোর নকশা করেন সব্যসাচী হাজরা।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી উচ্চারণ )(মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী) বা মহাত্মা গান্ধী (২রা অক্টোবর, ১৮৬৯ - ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮) একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা (৩৩০০ – ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ; পূর্ণবর্ধিত কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ অববাহিকা। প্রথম দিকে এই সভ্যতা পাঞ্জাব অঞ্চলের সিন্ধু অববাহিকায় বিকাশ লাভ করে। পরে তা প্রসারিত হয় ঘগ্গর-হকরা নদী উপত্যকা ও গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল পর্যন্ত। বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমদিকের রাজ্যগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান এবং বালোচিস্তান প্রদেশের পূর্ব অংশ এই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল।
বাংলাদেশ (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
বেদবর্ণিত সময়কালকে বৈদিক যুগ ব'লে চিহ্নিত করা হয় ৷যখন ছ'সহস্রাধিক বছর পূর্বকালীন ঋষিরা অগ্নিকেন্দ্রীক নানাবিধ যজ্ঞে শক্তিপ্রকাশক বিভিন্ন সত্ত্বার প্রতি অপৌরুষেয়(জন্মলব্ধ কারো সৃষ্টি নয় যা) দৃষ্টমন্ত্র(যে মন্ত্রসমূহ মনকর্তৃক রচিত নয় বরং সাধনদ্বারা দৃষ্ট বা প্রাপ্ত)স্মরণের মাধ্যমে ব'য়ে চলেছেন অজস্র প্রার্থনা ও উপাসনা মন্ত্র । বেদগুলোকে এখন সেই সব রচনাদির সংকলন হিসেবে পাওয়া যায় যা হিন্দুধর্মের আদি হিন্দুশাস্ত্রাধারও বটে । এটিকে এরকম বলার মূল কারণ হলো, এই সময় সমস্ত বেদ ও উপনিষদ লেখা হয়। যা আগে মুখে মুখে পড়তে ও মনে রাখতে হত।এই প্রক্রিয়াটি শ্রুতি বলে পরিচিত ৷
শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি প্রথমবার তুরস্কে পালিত হয়েছিল সাল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর-এ উদযাপন করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদযাপন করার।
সত্যাগ্রহ (সংস্কৃত: सत्याग्रह) মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত একটি দর্শন এবং অহিংস প্রতিরোধের অনুশীলন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর মধ্যেমে প্রথম সত্যাগ্রহ অনুপ্রেরিত ১৯১৭ এবং ১৯১৮ এর বছরের মধ্যে বিহারের চম্পারণ এবং গুজরাট খেদা জেলায় হয়েছিল। চম্পারণের সত্যাগ্রহ ছিল প্রথম। তবে 'সত্যাগ্রহ' শব্দ প্রথম ব্যবহার হয় রাওলাট আইন এর বিরুধে আন্দলনের সময়।
সঙ্গম সাহিত্য ধ্রুপদী তামিল সাহিত্যের একটি অংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচিত এই সাহিত্যধারা ৪৭৩ জন কবির রচিত ২৩৮১টি কবিতার এক সংকলন। এই কবিদের মধ্যে ১০২ জনের পরিচয় জানা যায় না। এই কবিতাগুলি যে সময়কালে রচিত হয় সেই সময়কালটিকে সাধারণভাবে সঙ্গম যুগ নামে অভিহিত করা হয়। সাহিত্য গবেষকদের মতে সহস্রাধিক বছর বিদ্যমান সঙ্গম কিংবদন্তির নামানুসারে এই সমগ্র সাহিত্যবর্গটি নামাঙ্কিত। সঙ্গম সাহিত্যের বিষয়বস্তু ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। এর উপজীব্য ছিল তামিল জাতির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা বিবরণ।সঙ্গম সাহিত্যকারেরা ছিলেন তামিল কবি। তাদের মধ্যে ছিলেন সমাজের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির পুরুষ ও মহিলারাও। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংকলনে সংকলিত ও সম্পাদিত হয়ে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এই কবিতাগুলি। পরবর্তীকালে জনপ্রিয়তা হারালেও ঊনবিংশ শতাব্দীতে সি ডব্লিউ তামোতারামপিল্লাই ও ইউ ভি স্বামীনাথ আয়ার প্রমুখ পণ্ডিত কর্তৃক পুনরাবিষ্কৃত হয় এগুলি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বিগত কয়েক সহস্রাব্দে ভারতীয় নারীর অবস্থা বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। প্রাচীণযুগ থেকে মধ্যযুগে, তাদের অবস্থার অবনতি আর কয়েকজন সমাজসংস্কারকের প্রচেষ্টায় আবার সমমর্যাদার অধিকারে উত্তরণের ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। আধুনিক ভারতে নারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।
বিহারীলাল চক্রবর্তী (২১ মে, ১৮৩৫ - ২৪ মে, ১৮৯৪) বাংলা ভাষার কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে তিনি সুপরিচিত। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার 'ভোরের পাখি' বলে আখ্যায়িত করেন। তার সব কাব্যই বিশুদ্ধ গীতিকাব্য। মনোবীণার নিভৃত ঝংকারে তার কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিহারীলাল তার কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৩ জুলাই, ১৮৯৮- সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১) বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী, ২টি ভ্রমণ কাহিনী, ১টি কাব্যগ্রন্থ এবং ১টি প্রহসন লিখেছেন। । এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার,পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
সমাজতত্ত্ব একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ শৃঙ্খলা যা প্রাথমিকভাবে ফরাসি বিপ্লবের পর পরই জ্ঞানদান চিন্তার ফলে সমাজের প্রত্যক্ষবাদী বিজ্ঞান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি বিজ্ঞান এবং জ্ঞানের দর্শনের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ফসল। বৃহত্তর অর্থে দর্শনের সাধারণ ভিত্তি থেকে পূর্ব নির্ধারিত ক্ষেত্র হিসেবে সামাজিক বিশ্লেষণের জন্ম। আধুনিকতা, পুঁজিবাদ, নগরায়ন, যৌক্তিকীকরণ, ধর্মনিরপেক্ষতা, উপনিবেশ স্থাপন এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আধুনিক একাডেমিক সমাজতত্ত্ব আবির্ভূত হয়েছে। ১৯ শতকের শেষ দিকে সমাজবিজ্ঞান তার সামাজিকতার একক এবং নজরদারির নিমিত্তে আধুনিক জাতি রাষ্ট্রসমূহে একটি বিশেষ আগ্রহ সষ্টি করে একে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করে। আলোকায়নের চেয়ে আধুনিকতার ধারণার উপর গুরুত্বারোপ করে, প্রায়ই শাস্ত্রীয় রাজনৈতিক দর্শন থেকে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনাকে আলাদা করা হয়।সরকার, ব্যবসা, সংস্থা এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংখ্যামূলক সামাজিক গবেষণা কৌশল সাধারণ টুলস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সামাজিক গতিবিদ্যার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থেকে বিলুপ্ত হয়ে, এটি সামাজিক গবেষণা কে সমাজতত্ত্বের শৃঙ্খলা থেকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে। একইভাবে, যে সকল প্রতিষ্ঠান মানুষ, মিথস্ক্রিয়া, সমাজ বা সংস্কৃতি অধ্যয়ন করে; তাদের বুঝাতে "সামাজিক বিজ্ঞান" ছাতা টার্ম হিসেবে অধিকার লাভ করে।
সত্যাগ্রহ (সংস্কৃত: सत्याग्रह) মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (যিনি মহাত্মা গান্ধী নামেও পরিচিত) প্রতিষ্ঠিত একটি দর্শন এবং অহিংস প্রতিরোধের অনুশীলন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী সত্যাগ্রহের চর্চা করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। তার এই তত্ত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার আপার্টহাইট এবং গণঅধিকার আন্দোলনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্টিন লুথার কিং ও জেমস বেভেলের কর্মসূচি সহ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। যারা সত্যাগ্রহের চর্চা করেন তাদের সত্যাগ্রহী বলা হয়।
ভারত (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাজবিদ্যায় পিতৃতন্ত্র হচ্ছে একটি সামাজিক ব্যবস্থা যেখানে পুরুষেরা প্রাথমিক ক্ষমতা ধারণ করে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নৈতিক কর্তৃত্ব, সামাজিক সুবিধা ও সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য স্থাপন করে, পরিবারের ক্ষেত্রে পিতা ও পিতৃতুল্যগণ নারী ও শিশুর উপর কর্তৃত্ব লাভ করে। কিছু পিতৃতান্ত্রিক সমাজ একই সাথে পিতৃগোত্রজ হয়, যার অর্থ হচ্ছে এইসব সমাজে সম্পত্তি ও পদবী পুরুষের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বাহিত হয়।
রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও দর্শন ভারতের ধর্ম, শিক্ষা, চরিত্র গঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিবেকানন্দ ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী। তিনি পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শন প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতেও ধর্মসংস্কারে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দের রচনাবলি পড়ো। তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে সবই ইতিবাচক; নেতিবাচক কিছুই নেই।" বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি মানুষের উপর বেষি জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "আমার উদ্দেশ্য হল মানুষের চরিত্র গঠন"। এইভাবেই তিনি নিজের শিক্ষা বর্ণনা করেন। বিবেকানন্দ তার আদর্শ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, "(তাঁর উদ্দেশ্য) মানবজাতিকে তার অন্তর্নিহিত দেবত্ব শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শেখানো।"
সাহিত্যে বর্ণনামূলক গদ্যকে প্রবন্ধ বলা হয়।প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। এর সমার্থক শব্দগুলো হলো - সংগ্রহ, রচনা, সন্দর্ভ। প্রবন্ধের বিষয়বস্তু শৈল্পিক, কাল্পনিক, জীবনমুখী, ঐতিহাসিক কিংম্বা আত্মজীবনীমূলক হয়ে থাকে। যিনি প্রবন্ধ রচনা করেন তাকে প্রবন্ধকার বলা হয়। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়কে তুলে ধরে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়
দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি (philosophy) (গ্রিক ভাষা φιλοσοφία, ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে "জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা") হলো অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া প্রভৃতি মৌল বিধানের আলোচনাকেও দর্শন বলা হয়। মানুষের সামাজিক চেতনার বিকাশের একটা পর্যায়েই মাত্র মানুষের পক্ষে বিশ্লেষণী দৃষ্টি নিয়ে জগৎ এবং জীবন সম্পর্কে চিন্তা করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার নিজের উদ্ভব মুহূর্ত থেকেই চিন্তার এরূপ ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম ছিল না। মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। নিজের জীবনকে অধিকতর নিশ্চিত করে রক্ষা করার প্রয়োজনে মানুষ প্রকৃতি জগতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। প্রকৃতি, জগৎ এবং পরবর্তীকালে মানুষের নিজের দেহ এবং চেতনা সম্পর্কেও সে চিন্তা করতে শুরু করে।আদিকালে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুব অধিক ছিল না। দর্শনই আদি জ্ঞানের মূল ভাণ্ডার। জগৎ ও জীবনের প্রত্যেকটি সমস্যা মানুষের কাছে প্রশ্নাকারে উত্থাপিত হয়। যে প্রশ্নই উপস্থিত হোক না কেন, মানুষ তার একটা জবাব দিয়ে প্রকৃতিকে বশ করার চেষ্টা করেছে। তাই আদি দর্শন একদিকে যেমন সমস্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার তেমনি আবার তার মধ্যে সমস্যার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমাধানের বদলে কাল্পনিক সমাধানের সাক্ষাৎ অধিক মেলে। কালক্রমে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন দার্শনিক কল্পনা বাস্তব জীবনে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তার স্থানে অধিকতর সঠিক সমাধান আবিষ্কৃত হতে থাকে। এইভাবে অধিকতর বাস্তব এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা ভিত্তিতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিকশিত হতে থাকে। পূর্বে প্রকৃতি, পদার্থ, সমাজ, চেতনা, যুক্তি, অর্থনীতি, ধর্ম সবই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালক্রমে তাদের প্রত্যেকে এক একটি ভিন্ন বিজ্ঞান বা আলোচনার শাখায় রূপান্তরিত হতে থাকে। এই বিকাশের পরিণামে বর্তমানে দর্শন বলতে কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভরশীল কোনো বিষয় আর অবশিষ্ট নেই। তাই দর্শনের প্রাচীন সংজ্ঞা এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হওয়ার পরেও দর্শনকে অনেকে কল্পনার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রয়াসে দর্শন জীবনের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য হয়ে পড়ে। যেখানে প্রাচীনকালে জীবনের সমস্যাই দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে সেখানে আধুনিককালের এরূপ প্রয়াস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত করেছে। দর্শনের এই সংকটের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন ঊনবিংশ শতকে কার্ল মার্কস। কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন যে, দর্শন হবে জীবন এবং জগৎকে বৈজ্ঞানিক এবং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। দর্শন হবে বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের স্বার্থে জগৎ এবং সমাজকে পরিবর্তিত করার ভাবগত হাতিয়ার। দর্শন অবাস্তব কল্পনা নয়। দর্শন জগৎ ও জীবনের মৌলিক বিধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আর এই ব্যাখ্যারই অপরনাম হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্ব।দর্শন যেমন মানুষের আদি জ্ঞানভাণ্ডার, তেমনি তার ইতিহাস জ্ঞানের যে কোনো শাখার চেয়ে প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিস, ভারত ও চীনে দর্শনের বিস্ময়কর বিকাশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু দর্শনের বিকাশকে দেশ বা জনগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত করার কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। জীবন ও জগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তাই হচ্ছে দর্শন।
মালদ্বীপ বা মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র (ধিবেহী: ދިވެހިރާއްޖޭގެ ޖުމްހޫރިއްޔާ, ধিবেহী রাজ্যে জুমহূরিয়া) ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ।মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত "মালে দিভেহী রাজ্য" হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত 'মালা দ্বীপ' অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা 'মহিলা দ্বীপ' অর্থ নারীদের দ্বীপ হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত। প্রাচীন সংস্কৃতে যদিও এরকম কোনও অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ নামক এক অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। লক্ষদ্বীপ বলতে মালদ্বীপ ছাড়াও লাক্কাদ্বীপ পুঞ্জ অথবা চাগোস দ্বীপপুঞ্জকেও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। অপর একটি মতবাদ হল তামিল ভাষায় 'মালা তিভু' অর্থ দ্বীপমাল্য হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত ।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
আমার দেখা নয়াচীন শেখ মুজিবুর রহমানের গণচীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা একটি ডায়েরির পুস্তকি রূপ। শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি বইটি প্রকাশ করেছে এবং সাম্প্রতিকতম অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইটি সম্পাদনা করেছেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও লোক গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং ভূমিকা লিখেছেন শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বে প্রকাশিত বইয়ের মত এ বইটিরও গ্রন্থস্বত্ব থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরোরিয়াল ট্রাস্ট-এর নামে।
রামমোহন রায়, অথবা রাজা রাম মোহন রায় লেখা হয় রাজা রামমোহন রায় (মে ২২, ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩) প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮০০ সালের ০৯ জুলাই কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে এই কলেজ স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
আবুল মনসুর আহমেদ (৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ - ১৮ মার্চ ১৯৭৯) একজন বাংলাদেশী সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)' তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা।
বাংলা প্রত্নতত্ত্ব শব্দটি 'প্র+ত্ন= প্রত্ন' অর্থ- পুরাতন ও 'তৎ+ত্ব= তত্ত্ব'অর্থ-বিজ্ঞান। সমষ্টিগত অর্থ হল, পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান। প্রচলিত ধারণায়, বস্তুগত নিদর্শনের ভিত্তিতে অতীত পুনঃনির্মাণ করার বিজ্ঞানকেই প্রত্নতত্ত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়। অতীতের সংস্কৃতি ও পরিবেশগত নিয়ে চর্চা করে এমন অন্যান্য বিজ্ঞান বা বিষয়গুলোর (যেমন- ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি) মধ্যে প্রত্নতত্ত্বের বিশেষত্ব হলো- এটি কেবল বস্তুগত নিদর্শন অর্থাৎ প্রামাণ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং তার সাথে মানুষের জীবনধারার সম্পর্ক নির্ণয় করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ইনামগাঁওয়ের কয়েকহাজার বছরের বৃষ্টিপাতের ধরনের একটি উপাত্ত হাজির করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য উদ্ধারের এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকলেও ওই বিশেষ বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতিতে মানুষ কিভাবে বসবাস ও জীবনযাপন, এই বিশেষ বিশ্লেষণটি প্রত্নতাত্ত্বিকরা করে থাকেন। ইনামগাওয়ের পরিবৈশিক তথ্য ও গর্তবসতিগুলো এই দুই প্রাচীন উপাদান মিলিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই সময়ের মানুষের জীবনপ্রণালি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন। তাই প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়নের মূল বিষয়গুলো হলো- ভৌত ধ্বংসাবশেষ, পরিবেশগত তথ্য, জৈব অবশেষ বা জীবাশ্ম, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যাবলী ইত্যাদি। আর প্রত্নতত্ত্বের কাজ হলো- এইসব বিষয়কে বিশ্লেষণ করে প্রাচীনকালের মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির তৎকালীন চিত্র বোঝা এবং তার মাধ্যমে মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের ধারা ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানুষ এবং পরিবেশের রূপরেখা নির্মাণ করা। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব প্রধানত ইতিহাস ও পরিবেশ বিজ্ঞানের এক সহযোগী। তবে পরিবৈশিক প্রেক্ষিতের চেয়ে মানুষের সংস্কৃতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এমন বিষয়েই দীর্ঘকাল ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড সীমিত ছিল। কাজেই সাধারণত প্রত্নস্থান ও পুরাতন জিনিসপত্র আবিষ্কার, স্থান ও বস্তু চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তকরণ এবং বস্তু ও কাঠামোর বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ ও তা জনসমক্ষে উপস্থাপন এর মধ্যেই প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল। প্রাকৃতিক ও পরিবৈশিক প্রেক্ষিত এবং অবস্তুগত ভাবগত নিদর্শন যেমন সামাজিক সম্পর্ক ও মনোস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব বর্তমানে মানুষের অতীত ইতিহাসের গৃহবন্দী চর্চার বদলে পরিবেশ, ভূপ্রকৃতি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের অন্যান্য বিষয়ের অতীত অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত নির্মাণের বিজ্ঞান হিসেবে চর্চিত হচ্ছে।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ.
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বাংলা: বাংলাদেশ গণসংঘ) বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম "আওয়ামী লীগ" করা হয়।
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
সতীদাহ প্রথা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে বা আত্মহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা, যা রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়। মূলত উত্তরে এবং প্রাক আধুনিক যুগে দক্ষিণ ভারতে এই প্রথা পালিত হতে দেখা যেত ৷ কোন সময় থেকে এই প্রথার উদ্ভব হয় এটা নিয়ে তেমন কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি ৷
সার্বভৌমত্ব (বাংলা উচ্চারণ: [সার্বভৌমত্ব] (শুনুন)) বলতে কোন দেশ বা রাষ্ট্রের নিজের অভ্যন্তরীন এবং অন্যান্যরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বোঝায়। সার্বভৌমত্ব কোনো পরিচালনা পরিষদের বাইরের কোনো উৎস বা সংগঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা। রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, সার্বভৌমত্ব কোনো একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এটি রাষ্ট্রগঠনের সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক মতবাদের একটি মূলনীতি।
সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ এমন একটি অপরাধ যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত। কম্পিউটার একটি অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বা এটা নিজেই লক্ষ্য হতে পারে। দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন "আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট (চ্যাট রুম, ইমেল, নোটিশ বোর্ড ও গ্রুপ) এবং মোবাইল ফোন (এসএমএস / এমএমএস) ব্যবহার করে, অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, বা ক্ষতির কারণ হওয়া"। এ ধরনের অপরাধ একটি জাতির নিরাপত্তা ও আর্থিক স্বাস্থ্য হুমকি হতে পারে। আইনগত বা আইনবহির্ভূতভেবে বিশেষ তথ্যসমূহ বাধাপ্রাপ্ত বা প্রকাশিত হলে গোপনীয়তার লঙ্ঘন ঘটে। হ্যাকিং, কপিরাইট লঙ্ঘন, শিশু পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধগুলো বর্তমানে উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে। লিঙ্গের ভিত্তিতে দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর নারীর প্রতি সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, "ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, ইচ্ছাকৃতভাবে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে নারীর প্রতি অপরাধ"। আন্তর্জাতিকভাবে, রাষ্ট্রীয় বা ও-রাষ্ট্রীয় সত্তা কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তি, আর্থিক প্রতারণা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, কিংবা অন্তত একটি রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত এরূপ বিষয়ে হস্তক্ষেপজনিত সাইবার অপরাধকে সাইবার যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।একটি রিপোর্ট (ম্যাকাফি কর্তৃক স্পন্সরকৃত) অনুমান করে যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বার্ষিক ক্ষতি ৪৪৫ বিলিয়ন ডলার। তবে একটি মাইক্রোসফটের রিপোর্ট দেখায় যে জরিপ ভিত্তিক অনুমান "একেবারে ভ্রান্ত" হয় এবং সত্যিকারের লোকসানকে অতিরঞ্জিত করে। অনলাইন ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড জালিয়াতির ফলে ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় $ ১.৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে গেছে। ২০১৬ সালে একটি গবেষণায় অনুমান করা হয়, সাইবার অপরাধের খরচ ২০১৯ সালে ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে।
ভারতে নারীবাদ হল ভারতের নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার আন্দোলন। এই ধারণাগুলিকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রেও এই আন্দোলনের অংশীদারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। এটি ভারত রাষ্ট্রের মধ্যে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। অন্যান্য দেশের নারীবাদী আন্দোলনের মত ভারতেও এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা অর্জন: সমান পারিশ্রমিকে কাজ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সমানাধিকার এবং রাজনীতিতে সমানাধিকার। ভারতীয় নারীবাদীরা ভারতের নির্দিষ্ট পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে কিছু স্বতন্ত্র আন্দোলনও পরিচালনা করেছেন, যেমন সতীদাহ প্রথা রদ ও উত্তরাধিকার আইনের প্রতিষ্ঠা।
প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা "দিবস" পালিত হয়। এই সকল বৈশ্বিক দিবস বা বিশ্ব দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবসসমূহের তালিকা এই পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে - কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা ক্ষেত্র বিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (উচ্চারণ: [ʃad̪ʱinot̪a ɟud̪d̪ʱo]; শাধিনতা জুদ্ধো) বা মুক্তিযুদ্ধ (উচ্চারণ: [mukt̪iɟud̪d̪ʱo]; মুক্তিজুদ্ধো) হলো ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গণবিদ্রোহ দমনে পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান ও বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইসলামি দলগুলোর সমর্থন লাভ করে। সেনাবাহিনীর অভিযানে সহায়তার জন্য তারা ইসলামি মৌলবাদীদের নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী— রাজাকার, আল বদর ও আল শামস গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু-ভাষী বিহারিরাও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, উচ্ছেদ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং আরও তিন কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়। বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেনারেল এম. এ.
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল। ১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য মামলা। তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিত, কারণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তির চার যুগ পর মামলার আসামি ক্যাপ্টেন এ.
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্পান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
স্বামী বিবেকানন্দ (বাংলা: [ʃami bibekanɒnɖo] (শুনুন), Shāmi Bibekānondo; ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২) নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত (বাংলা: [nɔrend̪ro nat̪ʰ d̪ɔt̪t̪o]), ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাটি হল, "আমেরিকার ভাই ও বোনেরা ...," ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত চিকাগো বক্তৃতা, যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন। স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তার রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল "খণ্ডন-ভব-বন্ধন" (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও "নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি"। এছাড়া "নাচুক তাহাতে শ্যামা", "৪ জুলাইয়ের প্রতি", "সন্ন্যাসীর গীতি" ও "সখার প্রতি" তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। "সখার প্রতি" কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
নারীবাদ বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভূত একটি দর্শন যা সভ্যতায় মানুষ হিসেবে পুরুষের তুলনায় সর্বার্থে নারীর সমতা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। নারীবাদ সমাজে নারীর সমতা অর্জন, বিশেষ করে পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। নারীবাদ দাবী করে: নারী পুরুষের তুলনায় একদিকে সক্ষম অন্যদিকে সামাজিক অবদানের দিক দিয়ে পুরুষ থেকে কম নয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও স্বাক্ষর করতেন; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। পরে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো সামরিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ঘটে। হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের আদর্শিক পটপরিবর্তন বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দ্য হিন্দু উইডো'স রিম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৫৬ আইনটি ২৬ জুলাই ১৮৫৬ এ আইন প্রণয়ন করেছিল, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে ভারতবর্ষের সকল বিচারব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করেছিল। বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড়লাট লর্ড ডালহৌসি আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেন । লর্ড উইলিয়ম বেন্টিনয়ের দ্বারা সতীদাহ বিলুপ্ত করার পর এটিই প্রথম বড় সমাজ সংস্কার আইন।.পারিবারিক সম্মান ও পারিবারিক সম্পত্তির কথা বিবেচনা করে, উচ্চ-বর্ণবাদী হিন্দু সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বিধবা, এমনকি শিশু ও কিশোর-কিশোরদের পুনর্বাসনের বা বিয়ের অনুমতি দেয়নি, যার ফলে তাদের অনেক নিষ্ঠুর ও বঞ্চনার জীবনযাপন করতে হত। ১৮৫৬ সালের হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন একজন হিন্দু বিধবার উত্তরাধিকারের জন্য কিছু ক্ষতির বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা প্রদান করেছিল, যদিও, আইনের অধীনে বিধবা তার মৃত স্বামীর উত্তরাধিকার ত্যাগ করে। বিশেষ করে এই আইন করার লক্ষ্য ছিল কিছু হিন্দু বিধবা শিশুর জন্য, যার স্বামী বাড়িতে যাবার আগে বিধবা হয়ে যেতো।
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন " হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, পীরসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামি ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অর্থগত বিরোধ দৃশ্যমান হলে বাংলা রূপ অনুসরণীয় হবে।১০ই এপ্রিল ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনী সহ বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধীত হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে পঞ্চম সংশোধনী , সপ্তম সংশোধনী , ত্রয়োদশ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের আদেশে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায় এরূপ কোনো সংশোধনী এতে আনা যাবে না; আনা হলে তা হবে এখতিয়ার বহির্ভূত।বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়;- সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা বিধৃত আছে। দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা -কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার (যা মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা
বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা হচ্ছে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন ব্যাংকসমূহকে একটি তালিকা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহকে মূলত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই সামাজিক ব্যবসার ধারণায় প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক নামক ক্ষুদ্রঋণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যা একটি বিশেষায়িত অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখায় গ্রামীণ ব্যাংক এবং মুহাম্মদ ইউনুস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি) ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; যা বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষত্ব হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এর বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া, এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইক এর পক্ষ থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়। এটি এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪তম। এখানে প্রায় ৪৩০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ২০৮০ জন শিক্ষক রয়েছে৷DU stood the 135th among Asian universities in 2019
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা
এটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পর থেকে বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রপতিদের সম্পূর্ণ তালিকা।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সমর্থনে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন।
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বৃটেন একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে।
বেদ (সংস্কৃত: वेद veda, "জ্ঞান") হল প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ তত্ত্বজ্ঞান-সংক্রান্ত একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদই সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। সনাতনরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক) এবং "নৈর্বক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা সাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনও রচয়িতা নেই) মনে করেন।
বৈদিক যুগের ধর্ম (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ অব্দ) (অথবা বৈদিক ধর্ম, বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্ম বা প্রাচীন হিন্দুধর্ম বা, প্রাচীন ভারতের প্রেক্ষাপটে, ব্রাহ্মণ্যধর্ম) হল আধুনিক হিন্দুধর্মের আদি রূপ। ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম ও আধুনিক হিন্দুধর্মের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়। এটি হল আর্য ধর্মের একটি শাখা।
চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। এটি চৈত্র মাসে পালিত হিন্দু দেবতা শিবের গাজন উৎসবের একটি অঙ্গ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা চড়ক সংক্রান্তির মেলা নামে অভিহিত।
যৌনসঙ্গম (যৌনমিলন, সঙ্গম, মৈথুন, রতিক্রিয়া, রতিমিলন; যৌন সংসর্গ, যৌন সহবাস, সহবাস ইত্যাদি) হচ্ছে একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা মূলত যৌনআনন্দ বা প্রজনন বা উভয় ক্রিয়ার জন্য একজন পুরুষের উত্থিত শিশ্ন একজন নারীর যোনিপথে অনুপ্রবেশ করানো ও সঞ্চালনা করাকে বোঝায়। অন্যান্য অন্তর্ভেদী যৌনসঙ্গমের মধ্যে রয়েছে পায়ুসঙ্গম (লিঙ্গ দ্বারা মলদ্বার অনুপ্রবেশ), মুখমৈথুন, অঙ্গুলিসঞ্চালন (আঙ্গুল দ্বারা যৌন অনুপ্রবেশ), যৌনখেলনা ব্যবহার দ্বারা অনুপ্রবেশ (বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন)। এই সকল কার্যক্রম মূলত মানবজাতি কর্তৃক দুই বা ততোধিকের মধ্যেকার শারীরিক ও মানসিক অন্তরঙ্গতা জনিত পরিতোষ লাভের জন্য এবং সাধারণত মানব বন্ধনে ভূমিকা রাখতে সম্পাদিত হয়ে থাকে।যৌনসঙ্গম বা অপরাপর যৌনকর্ম কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, যা যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর উপর প্রভাব রাখতে পারে। যদিও যৌনসঙ্গম, নির্দিষ্টভাবে মৈথুন বলতে সাধারণত শিশ্ন-জরায়ুজ অনুপ্রবেশ ও সন্তান উৎপাদনের সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করা হয়, এর দ্বারা সাধারণভাবে অন্তর্ভেদী মুখমৈথুন ও বিশেষত শিশ্ন-পায়ুজ সঙ্গমকেও নির্দেশ করা হয়। এটি সাধারণত যৌন অনুপ্রবেশকে নির্দেশ করে, যেখানে অননুপ্রবেশকারী যৌনতাকে "বহির্সঙ্গম" নামে নামকরণ করা হয়, কিন্তু অনুপ্রবেশকারী যৌনকর্মকে যৌনসঙ্গম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যৌনতা বা ইংরেজি ভাষায় সেক্স, প্রায়শই যৌনসঙ্গমের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যবহৃত রূপ, যা দ্বারা যে কোন প্রকারের যৌনক্রিয়াকে বোঝানো হতে পারে। যেহেতু এসকল যৌনকর্মের সময়ে মানুষ যৌনবাহিত সংক্রমণের সংস্পর্শের ঝুঁকিতে থাকতে পারে, নিরাপদ যৌনচর্চার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, যদিও অনাভেদী যৌনতায় সংক্রমণ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়ে থাকে।বিভিন্ন আইনি বিধিমালা যৌনসঙ্গমমের সামাজিক অনুমতিপ্রদানের জন্য বিভিন্ন আইন ও রীতিনীতির মাধ্যমে বৈবাহিক রীতির প্রবর্তন, প্রচলন ও সমর্থন করেছে এবং বেশ কিছু যৌনকর্মের বিপরীতে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনকে স্থান দিয়েছে, যেমন বিবাহপূর্ব ব্যভিচার ও বিবাহপরবর্তী পরকীয়া, পায়ুকাম, পশুকাম, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে যৌনচর্চা ও অজাচার। ধর্মীয় বিশ্বাসও যৌনসঙ্গমসহ অন্যান্য যৌনাচার বিষয়ক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যেমন কুমারীত্ব বিষয়ক সিদ্ধান্ত, অথবা আইনি বা সরকারী নীতিমালা সম্পর্কিত বিষয়াবলি। বিভিন্ন ধর্মভেদে ও একই ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীভেদে যৌনতা সম্পর্কিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও কিছু বিষয়ে অভিন্নতা রয়েছে, যেমন ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা।
জাতিসংঘ (অপর নাম: রাষ্ট্রসংঘ) বিশ্বের জাতিসমূহের একটি সংগঠন, যার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে লুপ্ত লীগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়।
ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দর্শন ও শিক্ষার সমন্বয়
শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ education। এই education শব্দটি তিনটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে ধরা হয়, যথা এডুকেয়ার যার অর্থ হলো প্রতিপালন করা, educo যার অর্থ হলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এডুকিরি যার অর্থ হলো অঙ্কন করা । অর্থাৎ শিক্ষা হলো সমস্ত প্রক্রিয়ার সমন্বয় যার দ্বারা ব্যক্তি তার সক্ষমতা ,দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সহ সমস্ত রকম চারিত্রিক ও সামাজিক গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে এবং যার ফলস্বরূপ ব্যক্তির সর্বোত্তম আত্ম পরিস্ফুরণ সাধিত হয় । স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় মানবাত্মার অন্তর্নিহিত উৎকর্ষতার সার্বিক পরিস্ফূরণ ই-শিক্ষা। মহান শিক্ষাবিদ পেস্তালোজির মতে মানবাত্মার অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক মধুর ও প্রগতিশীল বিকাশই হল শিক্ষা। কবিগুরুর ভাষায় অন্তরের আলোর সম্পদ শিক্ষা দ্বারা অর্জিত হয় শিক্ষা কে একটি প্রক্রিয়া ধরা হলে শিক্ষা একটি নিরবিচ্ছিন্ন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা দ্বারা মানুষ জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে সার্বিক গুণের অধিকারী হয়। শিক্ষাকে উৎপাদন হিসেবে ধরলে শিক্ষান্তে শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারা শিক্ষার ফল বিচার করা হয় যা শিক্ষাকে পরিমাপ করতে সাহায্য করে অপরপক্ষে দর্শন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ philosophy শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফিলিও ও সোফিয়া এর সমন্বয় তার অর্থ হলো সত্যের প্রতি ভালোবাসা। আসলে দর্শন হলো সত্যের অনন্ত অনুসন্ধান বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে সার্বজনীন জিজ্ঞাসাই দর্শনের লক্ষ্য। মহান দার্শনিক প্লেটোর মতে বহুবিধ বস্তু বা ঘটনার সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কীয় জ্ঞান ই দর্শন। radhakrishnan বলেছেন বাস্তবতার যুক্তিসম্মত অনুসন্ধানই দর্শন। দর্শন মানব জীবনের তিনটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে যথা metaphysics বা আধিভৌতিক epistemology বা জ্ঞানতত্ত্ব axiology বা মূল্যবোধের অনুসন্ধান। অনুসন্ধান যুক্তি নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।সুতরাং উদ্দেশ্যগত ভাবেই দর্শন ও শিক্ষা নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সমস্ত সময়কার মহান দার্শনিকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা এবং চেতনা দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার রীতিনীতি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করে গেছেন ।প্রাচীন গ্রিসের মহান দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এবং এরিস্টোটল শিক্ষাব্যবস্থা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করে গেছেন ।পাশ্চাত্যের মহান দার্শনিক রুশো ,কান্ট ,হেগেল, dewy শিক্ষার প্রকৃতি , শিক্ষার লক্ষ্য এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন ।ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা পদ্ধতি এবং তার সঠিক ইমপ্লিমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে ভারতীয় দার্শনিকগণ যথা বুদ্ধ ,গান্ধী ,টেগর, অরবিন্দ ,রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখের অবদান আছে ।শিক্ষা এবং দর্শন দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় কারণ শিক্ষা ও দর্শন ও উভয়ের লক্ষ্যই হলো জ্ঞান এবং উভয় অর্জনের মাধ্যমই হল ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান। ধারণা নির্মাণ ও তার যথার্থ বাস্তবিক প্রয়োগ দ্বারা শিক্ষা পরিচালিত হয় তাই যথার্থভাবে শিক্ষা প্রয়োগ করতে হলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত অভিলক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই অভি লক্ষ্য নির্মাণের কাজটি করে থাকে দর্শন । দর্শন জীবন ও মূল্যবোধের সাপেক্ষে একটি সুস্থির দিশা তৈরি করে যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও স্থির অভিমুখী করে তোলে । তাই বলা ভালো সুস্থির দর্শন ছাড়া শিক্ষা অন্ধ আর সুস্থির শিক্ষা ছাড়া দর্শন অচল । জন ডুয়ি যথার্থই বলেছেন শিক্ষা হলো দর্শনের পরীক্ষাগার যেখানে সমস্ত দার্শনিক সত্যতার যথার্থতা পরীক্ষিত হয় । তাই দর্শনের কাজ হল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক গুণাবলী নির্দেশনার পথ স্থির করা আর শিক্ষার কাজ হলো সেই পথে চলে জীবনকে উৎকর্ষ থেকে উৎকর্ষতর করে তোলা । একটি মুদ্রার দুই পিঠ হলো শিক্ষা আর দর্শন । দর্শনের পিঠটি হল চিন্তাশীল শিক্ষার পিঠটি হল সক্রিয় ।সুতরাং পরিশেষে বলা চলে যে শিক্ষা এবং দর্শন দুটি পৃথক বিষয় নয় এটি একত্র করে যে শিক্ষাদর্শন ভাবনা করা হয়েছে সেটি যথার্থ। শিক্ষা পদ্ধতি চারটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষক , পাঠক্রম ও শিক্ষার্থী এই চারটি মৌলিক বিষয় নিজেদের মধ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে শিক্ষার লক্ষ্য কে পূর্ণতা দেয় ।আর এই চারটি বিষয়কে একত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত শিক্ষা দর্শনের ।একটি যথার্থ সমাজদর্শন ই পারে শিক্ষার ধারণা শিক্ষা পরিকল্পনাকে সুশৃংখল করে তুলতে দার্শনিক রীতিনীতি এবং দার্শনিকদের মৌলিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ উচ্চশিক্ষা এই রীতি-নীতি গুলিকে আশ্রয় করে অতীতের সমস্ত সম্পদ ও ঐতিহ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যা দার্শনিক চিন্তা ভাবনা দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃংখল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে শিখন ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করা এবং তার উন্নতি সাধন করা শিক্ষা দর্শনের মৌলিক লক্ষ্য । কোন শিক্ষা ভাবনার বা শিক্ষা তত্ত্বের যে দ্বন্দ্ব ও ভ্রান্তি গুলি আছে সেগুলো দূর করা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষা দর্শন মানুষকে সক্ষম করে তোলে যার দ্বারা সে প্রচলিত ব্যবস্থা ও নীতিগুলির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে শেখে। শিক্ষাতত্ত্ব গুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধারণা উপলব্ধিগুলোকে বাস্তবতা দান করে শিক্ষাকে সময় উপযোগী করে তোলা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষাব্যবস্থার চারটি মৌলিক উপাদানকে শিক্ষাদর্শন নিম্নলিখিতভাবে পরিশীলিত ও যথার্থ করে তোলে: প্রথমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো একটি সামাজিক সংস্থা যা শিক্ষার মূলাধার । শিক্ষা দর্শন মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলির পুনস্থাপন করা যা পূর্বপুরুষ দ্বারা অর্জিত ।এগুলির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় যেমন ভাষা, বিজ্ঞান , ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে যা তাদের বোধকে প্রাথমিক স্তর থেকে অন্তিম স্তরের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । আর এই জ্ঞান অর্জন পর্বের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পাঠক্রম যা উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষাদর্শন দ্বারা গঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন । শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি শিশু তার সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্তব্যবোধ নীতিবোধ এবং তার চরিত্র ও মানসিক গঠন পাশাপাশি শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া আবশ্যক বলে বিবেচনা করবে । এ থেকেই তার মনে সাম্যের অধিকার ও সামাজিক ভাবনাগুলি বিকাশ পাবে যা তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বিদ্যালয় এর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী নাহলে এই শিক্ষার লক্ষ্য গুলি কোন রূপেই যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো শিক্ষক । ই-লার্নিং ব্যবস্থায় শিক্ষকের গুণগতমানের ও তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন সাধিত হলেও শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক একাধারে প্রশিক্ষক, নির্দেশক বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শিক্ষাব্যবস্থায় তিনিই নেতা, তার নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ।একজন যথার্থ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে তার উপযুক্ত নেতৃত্ব দান ও কর্ম প্রয়াসের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে এমন কার্যক্রম নির্ধারণ করে যে যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সানন্দে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধ্য হয়। শিক্ষকের সে কারণেই প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সমর্থ করে তোলে যার দ্বারা সে তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের পরিধি, সীমা ,লক্ষ্য ,যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি লাভ করতে পারেন। শিক্ষার্থীর শিক্ষার লক্ষ্য ,শিখন পরামর্শ এবং শিখন কর্মকান্ড শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় ।কিন্তু তিনি কখনোই শিক্ষার্থীকে চাপ বা স্ট্রেস প্রদান করবেন না যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পর্কে ভ্রান্ত ভয়ের শিকার হয়ে সে ব্যবস্থা থেকে ফিরে আসে শিক্ষকের নিজের গুণেই জ্ঞান-বুদ্ধি বিকশিত হবে এবং তার শিক্ষার্থী দ্বারা প্রয়োগে রূপান্তরিত হবে সম্মত সুস্থির পরিকল্পনা শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে উৎসাহিত করবে ।শিক্ষক নিজেকে সর্বজ্ঞ না ভেবে শিক্ষার্থীর সাথে একই আনন্দে শেখার লক্ষ্যে ব্রতী হবে ।পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে উপযোগী শিক্ষা শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় । শিক্ষক ,পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর সুস্থির সমন্বয় দ্বারাই শিক্ষার লক্ষ্য সাধিত হয়, তাই শিক্ষককে শিক্ষা ,শিখন দর্শন অবশ্যই জানা প্রয়োজন এবং তা অনুযায়ী তাকে শ্রেণিকক্ষ পরিচালিত করা একান্ত কর্তব্য বলে মেনে নিতে হবে । একজন শিক্ষক তিনি যদি মনে করেন যে তিনি পারবেন তবে তিনি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন কিন্তু তিনি যদি মনে করেন তিনি পারবেন না তবে শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।তাই শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সামগ্রিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্য করবে। তৃতীয়তঃ পাঠক্রম ,পাঠক্রম শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ।শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাদর্শন সম্মত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তা পাঠক্রমে সুপরিকল্পিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে ।এর ব্যাপ্তি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণীকক্ষের বাইরে উভয় জায়গাতেই সুবিন্যাস্ত থাকে। ক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী উভয়ই পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়বস্তু ও শিক্ষা পদ্ধতি , শিখন পদ্ধতি ও তার মূল্যায়ন পাঠক্রমের দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়। শিক্ষার লক্ষ্য বলতে পাঠক্রম দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী উভয় লক্ষ্যই কার্যকরী করা হয় ।তাই জ্ঞান ও বোধ অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োগ ও দক্ষতার দিকেও পাঠক্রমের যথেষ্ট নজর থাকে ।পাঠক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় পদ্ধতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয় বলা হয় ।পাঠক্রমের মধ্যদিয়েই শিক্ষা দর্শনের উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি শিক্ষাঙ্গনে পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থী এই পাঠক্রম দ্বারা শিক্ষকের সাহায্যে শিক্ষাঙ্গনে যেমন ভবিষ্যতে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে তেমনই উপযুক্ত মানুষ হয়ে ওঠে। চতুর্থত ছাত্রঃ শিক্ষার্থী হল শিক্ষাব্যবস্থার সর্বাধিক সজীব উপাদান ।শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকে ছাত্র তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও বিদ্যালয় এর যাবতীয় কার্যাবলী আবর্তিত হয় ।বৈদিক শিক্ষায় বা প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষার্থী ছিল কেবলমাত্র শ্রোতা , কিন্তু দিনে দিনে শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষম ও সক্রিয় করে তোলার যাবতীয় উপাদান শিক্ষাব্যবস্থায় আমদানি করা হয়েছে ।আর তাই প্রকৃতির মাঝে শিক্ষা, হাতে-কলমে শিক্ষা বা সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষা ক্রমে ক্রমে প্রসার লাভ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি প্রচ্ছদে শিক্ষার্থীর মনে ও চিন্তাই যদি সুস্থির শিক্ষা দর্শনের ছাপ পরিলক্ষিত না হয় তবে শিক্ষার্থীর যে সামাজিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে তা শিক্ষা এবং সমাজ উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। জ্ঞানের প্রতি জিজ্ঞাসা বা জ্ঞানের পিপাসা সত্যানুসন্ধান এ গুলি দর্শনের মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মনে এই লক্ষ্য গুলি স্থাপিত করা একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন তাই একজন শিক্ষার্থীকে যেমন ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মের অনুসন্ধানে সাহায্য করে, তার পাশাপাশি জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে বাস্তব ধারণা তাকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী করে তোলে ।এখানেই শিক্ষা দর্শন এর উপযোগিতা। মূল্যবোধ ,নীতিশিক্ষা, জীবনবোধ ,কর্মক্ষমতার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, অঙ্ক ,ইতিহাস-ভূগোল, অঙ্কন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থী নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। শিক্ষার্থীর ভেতরকার যে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান জিজ্ঞাসা তা বাস্তবে পরিস্ফুটিত হয় তাই শিক্ষাঙ্গনে অসমর্থ শিক্ষার্থী ও একটু পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা ফুটে ওঠে তার পরিস্ফূরণ ঘটে শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হিসাবে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষাব্যবস্থার উপযুক্ত লক্ষ্য ও উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষার যথার্থ বাস্তব প্রয়োগের জন্য শিক্ষাদর্শন অনস্বীকার্য ।তাই দর্শনের অন্যান্য শাখার থেকেও দর্শনের শিক্ষাদর্শন শাখার উপযোগিতা ও ব্যবহার বর্তমানে সর্বাধিক। এই শিক্ষা দর্শনের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ যা শিক্ষার লক্ষ্য তাকেই বাস্তবে সুচিন্তিত মতামতের দ্বারা দিশা স্থাপন করান। ভারতীয় শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি অর্থাৎ বেদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেদ বৈদিক যুগে মূলত আর্যদের দ্বারা বিভিন্ন মনিষীদের অর্জিত জ্ঞান ,উপলব্ধি মূলত দার্শনিক চিন্তা ভাবনার ভিত্তিতে আকরগ্রন্থ বলা যায় । বেদের মূলত চারটি ভাগ ঋক্ ,সাম, যজু ও অথর্ব। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুটি অংশের সমন্বয়ে বেদ গঠিত। মন্ত্রের যে সমন্বয় বা সমষ্টি তাকে সংহিতা নাম দেওয়া হয়েছে ।আর বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনা বা যজ্ঞ, পূজা-পার্বণ প্রভৃতির জন্য যে নিয়ম লেখা আছে তাকে ব্রাহ্মণ নাম দেওয়া হয়েছে । জীবনের শেষ ভাগ শান্তিময় জীবন তার কথা বলা আছে আরন্যকে ।আর আরন্যক তথা বেদের সংশোধন পরিসমাপ্তি সমষ্টি একে উপনিষদ নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা মীমাংসা এবং বেদান্ত বলে দুটি গ্রন্থের কথা পাবো । মীমাংসা সাধারণত ritualistic ধারণাগুলি অর্থাৎ ধর্মীয় উপাচার সম্পর্কে বলা আছে। আর বেদান্ত সেখানে কিছু আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কথা বলা আছে। ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় শিক্ষা দর্শন এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম যে বিষয়গুলির কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে দর্শন যে শব্দটি এটি একটি সংস্কৃত শব্দ ।এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যক্ষভাবে দেখা। দর্শন শব্দের অর্থ থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের থেকে ভারতীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। পাশ্চাত্য দর্শনে বৌদ্ধিক উপলব্ধির কথা জোর দিয়ে বলা হলেও ভারতীয় দর্শনে আত্মার উপলব্ধির উপরে সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। যার মূলগত অর্থ হচ্ছে সত্য এবং বুদ্ধি এই দুটির প্রত্যক্ষ অবলোকন বা দর্শন ।ভারতীয় দর্শন কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি হচ্ছে আস্তিক দর্শন আরেকটি হচ্ছে নাস্তিক দর্শন। আস্তিক দর্শন দু'প্রকার একটি হচ্ছে বেদ নির্ভর দর্শন, আরেকটি হচ্ছে বেদ নিরপেক্ষ দর্শন ,এখানে বেদের পরোক্ষ প্রভাব বর্তমান। নাস্তিক দর্শনে বেদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রভাবই বর্তমান নেই ।বৈদিক দর্শনের মধ্যে মীমাংসা এবং বেদান্ত এই দু'প্রকার দর্শন পরে ।আর বেদ নিরপেক্ষ দর্শনের মধ্যে সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিকা এই দর্শন গুলি পরে ।নাস্তিক দর্শনের মধ্যে চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন পড়ে । পরবর্তীকালে যে সমস্ত দর্শন গুলি এসেছে সেগুলি এসমস্ত দর্শনের সমন্বয়েই গঠিত । ভারতীয় দর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপঃ ১/প্রত্যক্ষ উপলব্ধিঃ বৈদিক যুগে বিভিন্ন ঋষি মনীষীরা তাদের প্রতিদিনকার বাস্তব উপলব্ধি থেকে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করতেন ।জীবনের প্রকৃতি, জন্ম , মৃত্যু এবং বিভিন্ন জাগতিক ও মহাজাগতিক কর্মকান্ডের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য ও তার সত্য অনুসন্ধান করার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোই ছিল একমাত্র পথ। প্রতিটি দর্শনেই গুরুর বাস্তব উপলব্ধি দ্বারা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২/চার্বাক দর্শন ছাড়া প্রতিটি দর্শনেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে ।ঈশ্বরের অস্তিত্ববাদ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বৈদিক দর্শনের পাশাপাশি জৈন ও বৌদ্ধ এই দর্শন গুলিতেও অস্তিত্ব সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে । ৩/ভারতীয় দর্শনের প্রত্যেকটি ধারা একই সাথে এগিয়ে গেলেও এদের মধ্যে সুস্থির পার্থক্য এবং সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান । একে অপরের উত্তরণের পথে কখনো বাধা সৃষ্টি করেনি। আবার ভিন্ন ভিন্ন দর্শন বা মত অবলম্বনকারী মানুষদের মধ্য প্রত্যক্ষ কোন সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ৪/ প্রত্যেক দর্শন মতে যুক্তি নির্ভরতা একটা মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।যুক্তির দ্বারা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যা ও জীবনবোধকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যম হিসেবে দর্শনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ৫/ভারতীয় দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব বরাবরই বিদ্যমান । এখানে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য আত্মাকে একটি চরম পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে জীবনের লক্ষ্য অর্জিত হয় । ৬/ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দর্শন ছাড়া সব ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে মানুষের অজ্ঞতাই হলো মানুষের দুঃখের কারণ। এই দুঃখ তিন রকম হতে পারেঃ একটি আধ্যাত্মিক, একটি আধিভৌতিক, আরেকটি আধিদৈবিক ।মানুষের উপলব্ধি শ্রবণ ,মনন ও নিদ্বিধায়াসন দ্বারা। জাগতিক চাওয়া-পাওয়া বা বন্ধন থেকে মুক্তির ঘটনাকে মোক্ষলাভ বলা হয়েছে। ৭/ভারতীয় দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভারতীয় দর্শন উদার মানসিকতার ধারক ও বাহক । ৮/একটি দর্শনই self-realization আত্ম-উপলব্ধিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। ৯/ দর্শন মতে কার্যকারণ সম্পর্ক পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মুখ্য কারণ ।যদি কোন ঘটনা ঘটে জানতে হবে তার একটি কারণ আছে ।তবে ফলের আশা করে কর্ম করা ঠিক নয়। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি প্রধান উপাদান হলো নীতিবোধ ও মূল্যবোধের উপর এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ৯/ভারতীয় দর্শন মতে অজ্ঞতা বা কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি না থাকলে মানুষ দুঃখ কষ্টের শিকার হয় ।এবং এই দুঃখ-কষ্টের থেকে তাকে বের হতে গেলে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে তাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ১০/ ভারতীয় দর্শন পুনর্জন্ম মতে বিশ্বাসী অর্থাৎ মানুষ এজনমে যেমন কাজ করে যাবে পরজন্মে সেই কাজের ফলস্বরূপ তার জন্ম নিতে হবে । ১১/ভারতীয় দর্শনের গভীরতা সুনিবিড় ।মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ থেকে তার আত্মার চরম মুক্তি বা অজানা সমস্ত তথ্যের সত্য উদঘাটন এসবের মধ্যেই নিহিত আছে ভারতীয় দর্শনের মূল্যবোধ। ১২/ভারতীয় দর্শন মতে মানুষের যে গুনগুলি বা চাওয়া-পাওয়া গুলি থাকে সেগুলি হচ্ছে অর্থ ,কাম ,ধর্ম এবং মোক্ষ ।ধর্ম ও মোক্ষের আত্মিক মূল্য বর্তমান ,আর বাস্তবিক মূল্য অর্থ ও কামের বর্তমান । আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন যার নেতৃত্বে ছিলেন ডেলর 1996 সালে শিক্ষা সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি পেশ করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে শিক্ষার মূলত চারটি স্তম্ভ আছে প্রথমত learning to know দ্বিতীয়তঃ learning টুডু তৃতীয়তঃ learning to লিভটুগেদার চতুর্থত learning to be ।ভারতীয় দর্শনে এই বিষয়গুলি কেই মূলত উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ,সহযোগ ও আত্মানমরিদ্ধি । ভারতীয় দর্শনের মুল বক্তব্যগুলিকে অান্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বসহ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দু'রকমের প্রমা ও অপ্রমা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলা হয় যা অনুভব ও স্মৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।আর অপ্রমা ~ সমস্যা ,ভ্রম ও যুক্তি দ্বারা গঠিত হয় । ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞানের ধারণা নির্মাণ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে ন্যায় তত্ত্বের কথা আলোচনা করব । ন্যায় তত্বের উদ্ভাবক ঋষি গৌতম ।বাস্তব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক চিন্তা এই দুটি এই তত্ত্বের ভিত্তি। বাস্তবতার নিরিখে ক্ষেত্রে বহুবস্তু বাদী বাস্তবতাকে স্বীকার করে ।বাস্তবতার আধার হিসেবে যে বস্তুগুলোকে এখানে ধরা হয়েছে তা হলো পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু ,আকাশ, কাল, দিক ,আত্মা, মন। এই তত্ত্ব মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল উপলব্ধি ,অনুমান ,তুলনা ও পরীক্ষণ ।আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি দ্বারা তাৎক্ষণিক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি বলে ।উপলব্ধি দুই প্রকার একটি লৌকিক অপরটি অলৌকিক ।বাক্য ও মানস বা মন দ্বারা যে উপলব্ধি অর্জিত হয় তাকে লৌকিক উপলব্ধি বলে ।নির্বিকল্প ,সবিকল্প এবং প্রত্যয় অভিজ্ঞতা দ্বারা লৌকিক উপলব্ধি অর্জিত হয়। প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া নির্বিকল্প এবং প্রত্যক্ষ সংযোগ দ্বারা সবিকল্প অর্জিত হয় ।কোন বিষয়ের ভাষাগত অর্থ উদ্ধারকে প্রত্যয়াভিজ্ঞা বলে ।আর সাধারণভাবে অপ্রচলিত মাধ্যম দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে অলৌকিক উপলব্ধি বলে। সামান্য লক্ষণ ,জন লক্ষণ ও যোগজা দ্বারা এটি অর্জিত হয় ।জ্ঞান অর্জনের পর যে বিশেষ বোধ অর্জিত হয় তাকে অনুমান বলে। কারণ অনু শব্দের অর্থ হচ্ছে আগে এবং মান শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। গৌতম এর মতে অনুমান তিন রকমের পুরাভাত, শেষাভাত, সময়তদ্রষ্টা । তুলনা বা সামান্যীকরণ পদ্ধতিতে পুরাভাত, বাতিলকরণ প্রক্রিয়ায় শেষাভাত, অন্তরের সমর্থনে সময়তদ্রষ্টা অর্জিত হয় ।এই দর্শন মতে নিজের উপলব্ধিকে স্বার্থ এবং অপরের উপলব্ধিকে পরার্থ বলা হয়। তুলনা পর্বের শেষে সাক্ষ্য বা শব্দ যেটা আসলে verbal knowledge তা অর্জিত হয়। এটি দু'রকমের দ্রষ্টা ও অদ্রষ্টা ।এই দর্শন মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো ~ অনুমান ,যুক্তি তর্ক প্রভৃতি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন, সৃজনশীল চিন্তন, সঠিক বোধের দ্বারা মূল্যবোধ অর্জন করা ,বাস্তব বস্তুর সঙ্গে জ্ঞানকে একত্রিত করা, যথার্থ জ্ঞান ও বাস্তবোচিত জ্ঞানকে একত্রিত করা। ন্যায় তত্ত্বমতে পাঠক্রম সব সময় জীবনের মূল্যবোধ এবং বাস্তব ধারণা নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বস্তু ও ইন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি দ্বারাই পৃথিবীকে জানা সম্ভব। এই দর্শন মতে শিক্ষক যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করবেন তা মূলত বক্তৃতা পদ্ধতি ,আলোচনামূলক পদ্ধতি এবং সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি অনন্য ধারা হলো সাংখ্য দর্শন। এই দর্শনের উদ্ভাবক মহাঋষি কপিল। তার মতে ইহজগৎ পুরুষ ও প্রকৃতি এই দ্বৈত সত্ত্বা দ্বারা গঠিত। পুরুষ ও প্রকৃতির সমন্বয়ে মহৎ বা বুদ্ধি বা অহংকারের সৃষ্টি হয়। অহংকার তিন ধরনেরঃ সত্য, রজঃ এবং তমঃ। মন , বোধ ও শারীরবৃত্তীয় অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয় । ইহজগতের সচেতন সত্তাকে পুরুষ এবং অসচেতন সত্ত্বাকে প্রকৃতি বলা হয় ।তারা মহৎ বা বুদ্ধি দ্বারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। পঞ্চভূত কে তমঃ এবং গুণ গুলিকে রজঃ বলা হয়। ইহজাগতিক ঘটনাসমূহের কারণ হলো পুরুষ এবং তার বাস্তব বা প্রত্যক্ষ ফল হলো প্রকৃতি। এই প্রকৃতি দ্বারাই বহুবিধ ও গুণাবলী বাস্তবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের উৎস হল উপলব্ধি ,অনুমান ও আক্ষরিক পরীক্ষণীয় বস্তু সামগ্রী ।যথার্থ জ্ঞান উদ্দেশ্য বা প্রমতা , বিধেয় বা প্রমেয়া ও জ্ঞানের উৎস অর্থাৎ প্রমাণ এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উপলব্ধি দু'রকমের আলোচনা এবং বিবেচনা। বিশ্লেষণ সংশ্লেষ বা কোন তথ্যকে মনে মনে অনুধাবন করে বিবেচনা বা বস্তুর প্রত্যক্ষ ধারণা করা হয় ।আর বস্তুর সরাসরি অনুধাবন কে আলোচনা বলা হয় ।অনুমান দু'রকমের বিতঃও অবিতঃ। চিরন্তন হ্যা বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা বিত কে সনাক্ত করা হয়। চিরন্তন না-বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা অবিতঃ কে সনাক্ত করা হয়। পূর্ব পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে বিত লাভ হয় তাকে পুরাভাত বলে ।বর্তমান বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা যে বিত অর্জিত হয় তাকে সময়তদ্রষ্টা বলে ।অবিতা কে কখনো কখনো শেষাভাত বলা হয়। এই দর্শন মতে প্রমাণ বা শব্দ হিসাবে লৌকিক ও বৈদিক সমস্ত শ্রুতি ও বেদ নির্ভর লেখাগুলিকে ধরা হয়ে থাকে। আত্ম অনুভূতি এই দর্শন মতে জ্ঞান অর্জনের প্রধান উৎস। বৌধিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সংবেদন অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বৃদ্ধি এই দর্শন মতে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। পরিশেষে বলা যায় এই দর্শন মতে quality of life অর্থাৎ জীবনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার লক্ষ্য। পরবর্তী ভারতীয় দার্শনিক মতবাদটি হল যোগ। ঋষি পতঞ্জলি এর প্রবক্তা। সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে এর বহুবিধ মিল আছে। বলা ভাল সাংখ্যদর্শনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হল যোগ। এই দর্শন মতে উপলব্ধি দু'রকমের নির্বিকল্প ও সবিকল্প ।কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা কে নির্বিকল্প বলে ,এরপর যে মানসিক বিশ্লেষণ চলে তাকে সবিকল্প বলে। 25টি উপাদান দ্বারা মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয় এই দর্শন মতে তা ধরা হয়। এই 25 টি বিষয়ের মধ্যে প্রকৃতি, মহৎ ,অহংকার, মন ,ইন্দ্রিয়, পাঁচটি তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদান এবং পাঁচটি gross এলিমেন্ট বা মূল উপাদান এবং পুরুষ আছে। পুরুষ ,প্রকৃতি এবং ঈশ্বর মিলে মহৎ বা বুদ্ধি তৈরি হয় ।ইন্দ্রিয় ,অঙ্গ ও মন দ্বারা অহংকার বা জ্ঞান অর্জিত হয়। এই অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটে। এই দর্শন মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল মন, ইন্দ্রিয় ,চালন অঙ্গ। মানসিক বিশ্লেষণ দ্বারা নিজেকে মডিফাই বা উৎকর্ষতা বিধান করাই হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য। এভাবেই অর্জিত হয় সঠিক জ্ঞান বা প্রমা ।তৎপরতা বা প্রয়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দর্শনের মূল নীতি। দৈহিক উন্নতি ও মানসিক প্রগতি যোগ দর্শন এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ।আত্ম-উপলব্ধি শিক্ষার শেষ লক্ষ্য। নীতি প্রশিক্ষণ মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হয় । activities বা সক্রিয়তা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠদান এক্ষেত্রে শিক্ষাদানের প্রধান পন্থা। ভারতীয় দর্শনের একটি ভিন্নতর ধারা হলো চার্বাক দর্শন। চার্বাক দর্শন বেদ নির্ভর দর্শন নয়। এই দর্শনের স্রষ্টা বৃহস্পতি। এই দর্শনে জ্ঞানতত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব বা প্রত্যক্ষ উপলব্ধি এই দর্শন মতে জ্ঞানের একমাত্র উৎস । জ্ঞান অর্জনে অনুমান, কথ্য প্রবচন, তুলনা প্রভৃতির কোনো ভূমিকা নেই। ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব উপলব্ধি একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানের উৎস । অন্য উৎসগুলি সুপরিকল্পিতভাবে যুক্তি দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া বাধ্যতামূলক। দর্শন মতে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যায় পার্থিব বস্তু, বাস্তব যুক্তির অবতারণা করা হয়। কোন কাল্পনিক বা অবাস্তব সত্তা যেমন ঈশ্বর ,কর্মফল, পুনর্জন্ম ইত্যাদির অস্তিত্ব এই দর্শন বিশ্বাস করে না। এই দর্শনের মূল বৈচিত্র হলো এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না কারণ ঈশ্বরকে বাস্তবে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। চার্বাকপন্থীদের যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ভগবানের উৎস যদি না থাকে তবে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কে ?বা এই মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা কে?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ - ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০ - ৮ জুন ৬৩২; আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ), পূর্ণ নাম : মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم) হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী, (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু), তথা "বার্তাবাহক" (আরবি : الرسول আর-রাসুল), যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষ) মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন শিশু বয়সে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন। তিন বছর পর ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন, এবং ঘোষণা দেন "আল্লাহ্ এক" ও তার নিকট নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত, এবং ইসলামের অন্যান্য নবীদের মত তিনিও আল্লাহর প্রেরিত দূত।মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে "আল্লাহর বাণী" বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামী আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স (জার্মান: Karl Heinrich Marx জার্মান উচ্চারণ: [kaːɐ̯l ˈhaɪnʀɪç ˈmaːɐ̯ks]) (৫ই মে, ১৮১৮ – ১৪ই মার্চ, ১৮৮৩) একজন জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজ বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন মার্ক্স। মার্ক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোর মাঝে রয়েছে তিন খণ্ডে রচিত পুঁজি এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে রচিত কমিউনিস্ট ইশতেহার (১৮৪৮)।
বিবেক একটি জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া যা কোনও ব্যক্তির নৈতিক দর্শন বা মান পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আবেগ এবং যুক্তিযুক্ত সংস্থাগুলি প্রকাশ করে। সহানুভূতিশীল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাত্ক্ষণিক সংজ্ঞাবহ ধারণাগুলি এবং রিফ্লেক্সিভ প্রতিক্রিয়াগুলির উপর ভিত্তি করে সংযোগগুলির কারণে বিবেক বিচ্ছিন্নভাবে আবেগ বা চিন্তার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভাষায়, বিবেককে প্রায়ই আক্ষেপের অনুভূতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয় যখন কোনও ব্যক্তি তাদের নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করে। মনোবিজ্ঞানের অনুশীলন এবং অধ্যয়ন উভয় ক্ষেত্রেই কোনও ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক দর্শনের historicalতিহাসিক ব্যাখ্যার সাথে তাদের বিভাজনকে সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার পরীক্ষায় বিবেচনা করা হয়। বিধি কার্যের আগে নৈতিক রায়কে যে পরিমাণে অবহিত করে এবং এই জাতীয় নৈতিক রায়গুলি যুক্তির ভিত্তিতে হওয়া উচিত বা না হওয়া উচিত আধুনিক পশ্চিমা দর্শনের তত্ত্বগুলির মধ্যে আধুনিক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে অনেকটা বিতর্ককে অনুভূতিতে রোমান্টিকতার তত্ত্ব এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলনের তত্ত্বগুলিতে ডেকে আনে has মধ্যযুগের শেষ
কলকাতা বা কোলকাতা ([kolkata] (শুনুন) ইংরেজি: Kolkata; আদি নাম: কলিকাতা; পুরনো ইংরেজি নাম: Calcutta) হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর এবং ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কলকাতা শহরটি হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। এই শহর পূর্ব ভারতের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। দক্ষিণ এশিয়ায় কলকাতা ৭ম বৃহৎ অর্থনীতির শহর । কলকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম সচল বন্দর তথা দেশের প্রধান নদী বন্দর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, কলকাতার জনসংখ্যা ৪,৪৯৬,৬৯৪। জনসংখ্যার হিসেবে এটি ভারতের ৭ম সর্বাধিক জনবহুল পৌর-এলাকা। অন্যদিকে বৃহত্তর কলকাতার জনসংখ্যা ১৪,১১২,৫৩৬। জনসংখ্যার হিসেবে বৃহত্তর কলকাতা ভারতের ৩য় সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চল। কলকাতা শহরের অর্থনীতি আর চট্টগ্রাম শহরের অর্থনীতি প্রায় সমান। বৃহত্তর কলকাতার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক (আনুমানিক)৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী (ক্রয়ক্ষমতা সমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জিডিপি অনুযায়ী)। এই সূচক অনুযায়ী ভারতে কলকাতার স্থান মুম্বই ও নতুন দিল্লির ঠিক পরেই। কলকাতা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাই,ঢাকা,দিল্লি,চেন্নাই,করাচী, চট্টগ্রাম,এর পর ৭ম বৃহৎ অর্থনীতির শহর। সুতানুটি, ডিহি কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে মূল কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। ১৭শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাংলার নবাবেরা। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করে। এরপর কোম্পানি কলকাতায় একটি দুর্গবেষ্টিত বাণিজ্যকুঠি গড়ে তোলে। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলা কলকাতা জয় করেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানি আবার শহরটি দখল করে নেয়। এর কয়েক দশকের মধ্যেই কোম্পানি বাংলায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করে এবং ১৭৯৩ সালে ‘নিজামৎ’ বা স্থানীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করে। কোম্পানির শাসনকালে এবং ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনকালের প্রথমার্ধ্বে কলকাতা ছিল ভারতের ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চলগুলির রাজধানী। ১৯শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই কলকাতা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র। ১৯১১ সালে ভারতের মতো একটি বৃহৎ রাষ্ট্র শাসনে ভৌগোলিক অসুবিধার কথা চিন্তা করে এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় নতুন দিল্লিতে। স্বাধীনতার পর কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞানচর্চা এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী দশকগুলিতে কলকাতা এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার সম্মুখীন হয়।
সংস্কৃতি (বা কৃষ্টি) হলো সেই জটিল সামগ্রিকতা যাতে অন্তর্গত আছে জ্ঞান, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, আচার এবং সমাজের একজন সদস্য হিসেবে মানুষের দ্বারা অর্জিত অন্য যেকোনো সম্ভাব্য সামর্থ্য বা অভ্যাস।ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপিকা হেলেন স্পেনসার-ওটেইয়ের মতে, সংস্কৃতি হলো কিছু বুনিয়াদি অনুমান, মূল্যবোধ ও জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির, বিশ্বাস, নীতিমালা, প্রক্রিয়া এবং আচরণিক প্রথার অস্পষ্ট সমষ্টি–যা এক দল মানুষ ভাগ করে নেয় এবং সেই সমষ্টি দলের প্রত্যেক সদস্যের আচরণকে এবং তার নিকট অন্য সদস্যের আচরণের 'অর্থ' বা সংজ্ঞায়নকে প্রভাবিত করে (কিন্তু নির্ধারিত করে না)।
রামায়ণ (দেবনাগরী: रामायण) একটি প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য। আদিকবি ঋষি বাল্মীকি রামায়ণের রচয়িতা। এই গ্রন্থটি হিন্দুশাস্ত্রের স্মৃতি বর্গের অন্তর্গত। রামায়ণ ও মহাভারত ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্য। এই কাব্যে বিভিন্ন সম্পর্কের পারস্পরিক কর্তব্য বর্ণনার পাশাপাশি আদর্শ ভৃত্য, আদর্শ ভ্রাতা, আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ রাজার চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে মানবসমাজের আদর্শ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
সুভাষচন্দ্র বসু উচ্চারণ (২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ - ?) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে ভারত সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষনা করেন।
যোনি বা যোনিপথ বা যৌননালী বা জনননালী (লাতিন: ভ্যাজাইনা) হলো স্ত্রী যৌনাঙ্গ, যা জরায়ু থেকে স্ত্রীদেহের বাইরের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ফাইব্রোমাসকুলার (তন্তু-পেশিময়) নলাকার অংশ। মানুষ ছাড়াও অমরাবিশিষ্ট মেরুদণ্ডী ও মারসুপিয়াল প্রাণীতে, যেমন ক্যাঙ্গারু অথবা স্ত্রী পাখি, মনোট্রিম ও কিছু সরীসৃপের ক্লোকাতে যোনি পরিদৃষ্ট হয়। স্ত্রী কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীরও যোনি আছে, যা মূলত ওভিডাক্টের শেষ প্রান্ত।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হলো একটি অবস্তুগত বৈধ সত্ত্বা, যা একটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত এবং যার একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি স্থায়ী জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সীমানা, সরকার এবং অপর কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা থাকলে তাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র অন্য কোন শক্তি বা রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল বা অন্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত নয়।রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বা বিলোপ একটি আইনগত প্রত্যয়। রাষ্ট্রসত্তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়াও একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্ত্বিত্ব থাকতে পারে। তবে অস্বীকৃত রাষ্ট্রসমূহ কখনও কখনও অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অপারগ হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বলতে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত অন্য একটি ঘোষণাপত্রকে বোঝায়। যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান বা ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও এই ঘোষণাপত্র সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর তারিখে যখন দেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংবিধান হিসেবে এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।
সামন্ততন্ত্র বা সামন্তবাদ মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে একটি গুরত্ত্বপুর্ন প্রতিষ্ঠান বা প্রথা। মধ্য যুগে ইউরোপে যে তিনটি স্তম্ভ ( জার্মান জাতিগোষ্ঠীর রাজ্য শাসন পদ্ধতি, খ্রিষ্ট ধর্ম ও সামন্ত্রতন্ত্র ) এর উপর ভিত্তি করে তাদের সমাজ ও সভ্যতার সৌধ নির্মিত হয়েছিল বলে স্বীকৃত, সেই তিনটি স্তম্ভের মধ্যে নিঃসন্দেহে সামন্ত্রতন্ত্র বিশেষভাবে আলোচিত। কারণ সামন্ত্রতন্ত্র ইউরোপের ইতিহাসে এতো বেশি আলোচিত যে, মধ্যযুগকে অনেক সময় সামন্ত্রতন্ত্রের যুগ বলেও চিহ্নিত করা হয়।
সরকার বা শাসনব্যবস্থা (ইং: Government) হলো কোনো দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যার মাধ্যমে দেশটির শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সরকারের মৌলিক দায়িত্ব জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা বিধান করা, সমাজের শান্তি বজায় রাখা, মানুষের জান-মাল রক্ষা করা এবং বিবাদের ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনা করা। সরকার তার ওপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ পালনের স্বার্থে রাজস্ব আহরণ করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তা ব্যয় করে থাকে।সাধারণত "সরকার" শব্দটির দ্বারা একটি সাধারণ সরকার বা সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বোঝায়। সরকার স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক, শিক্ষাগত, ধর্মীয়, বা অন্যান্য বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলিও নিজস্ব পরিচালন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাসিত হয়। এই জাতীয় কর্তৃপক্ষ বোর্ড অফ ডিরেক্টর, ম্যানেজার, গভর্নর নামে পরিচিত; এগুলিকে প্রশাসন (যেমন বিদ্যালয় প্রশাসন) বা কাউন্সিল অফ এল্ডার্স (যেমন খ্রিষ্টান চার্চে) নামেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সরকারের আকার অঞ্চল বা উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়।
জসীম উদ্দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৪ মার্চ ১৯৭৬) একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। 'পল্লীকবি' উপাধিতে ভূষিত, জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্দীনের। তার নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য পল্লিগীতি এখোনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। যথা:- আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, কাজল ভ্রমরা রে ইত্যাদি।
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ
ভারত হল ২৮টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্যসংঘ। এই দেশের প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগের সংখ্যা ৩৬। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি আবার জেলা ও ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত।