The most-visited বাংলা Wikipedia articles, updated daily. Learn more...
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যা ২৬শে মার্চ তারিখে পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি হলো একধরণের বৃষ্টিপাত যেক্ষেত্রে পানি অম্লীয় প্রকৃতির হয়। এক্ষেত্রে পানির পি.এইচ ৭ এর চেয়ে কম হয়ে থাকে। এটি এমন এক ধরনের বৃষ্টি যাতে এসিড উপস্থিত থাকে। নানাবিধ অম্লধর্মীয় অক্সাইড বা এসিড মিশ্রিত থাকার কারণে এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টির পানির pH ৫.৬ এর সমান বা কম হয়ে থাকে। এই বৃষ্টির ফলে গাছপালা, পশু-পাখি, জলজ প্রাণী, জীব-জন্তু, দালান-কোঠা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানা ধরনের কল-কারখানা থেকে নির্গত সালফার-ডাই-অক্সাইড (SO2), সালফার-ট্রাই-অক্সাইড(SO3).
অপারেশন সার্চলাইট (ইংরেজি: Operation Searchlight) ১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। বাঙালিরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে,যা পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে ছিল। মে এর মাঝামাঝি সময়ে সকল বড় বড় শহরের পতন ঘটার মধ্যে দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান অংশ শেষ হয়। এই সামরিক আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করে। এই গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ করে তোলে যে কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গালি অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং বহু মানুষকে শরণার্থীরূপে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়। এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরিণতিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড "মিত্র বাহিনী" এর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে।
বুদ্ধদেব বসু (৩০ নভেম্বর ১৯০৮ - ১৮ মার্চ ১৯৭৪) একজন বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি হিসেবে তিনি সমাদৃত। তবে সাহিত্য সমালোচনা ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মাননীয়।
জীববৈচিত্ৰ্য হল পৃথিবীতে জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনশীলতা। অধ্যাপক হ্যামিল্টনের মতে, পৃথিবীর মাটি, পানি ও বায়ুতে বসবাসকারী সব উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবদের মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত (বাস্তুতান্ত্রিক) বৈচিত্র্য দেখা যায় তাকেই জীববৈচিত্র্য বলে। মার্কিন জীব বিজ্ঞানী ই.এ.নরসে এবং তার সহযোগীদের সূত্ৰ অনুযায়ী জৈব বৈচিত্ৰ্য হল জল, স্থল সকল জায়গায় সকল পরিবেশে থাকা সকল ধরনের জীব এবং উদ্ভিদের বিচিত্ৰতা। পৃথিবীর ১০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ অংশতেই ৫০ মিলিয়ন প্ৰজাতির বিভিন্ন জীব-জন্তু এবং উদ্ভিদের বসবাস৷
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। বড়দিদি (১৯১৩), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), শ্রীকান্ত (চারখণ্ডে ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), পথের দাবী (১৯২৬), পরিণীতা (১৯১৪), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি শরৎচন্দ্র রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে খ্যাত। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান৷ এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ই মার্চ ১৯২০–১৫ই আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এসকল কারণে তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
হুতোম প্যাঁচার নকশা কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গোড়াপত্তনকালীন পর্যায়ে রচিত একটি গদ্য উপাখ্যান, যা তিনি "হুতোম প্যাঁচা" ছদ্মনামে লিখেছেন। এটি মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা। ১৮৬১ সালে "চড়ক" শিরোনামে একটি নকশায় এটি প্রকাশিত হয়, পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে প্রথম ভাগ এবং ১৮৬৪ সালে দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রাঢ় বাংলায় জন্ম নেওয়া একজন বাঙালি কবি এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (উচ্চারণ: [ʃad̪ʱinot̪a ɟud̪d̪ʱo]; শাধিনতা জুদ্ধো) বা মুক্তিযুদ্ধ (উচ্চারণ: [mukt̪iɟud̪d̪ʱo]; মুক্তিজুদ্ধো) হলো ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গণবিদ্রোহ দমনে পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান ও বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইসলামি দলগুলোর সমর্থন লাভ করে। সেনাবাহিনীর অভিযানে সহায়তার জন্য তারা ইসলামি মৌলবাদীদের নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী— রাজাকার, আল বদর ও আল শামস গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু-ভাষী বিহারিরাও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, উচ্ছেদ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং আরও তিন কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়। বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেনারেল এম. এ.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও স্বাক্ষর করতেন; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর, ১৯৫০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।
গিরিশচন্দ্র ঘোষ (২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ - ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তারই অবদান।১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। গিরিশচন্দ্র প্রায় চল্লিশটি নাটক রচনা করেছেন এবং ততোধিক সংখ্যক নাটক পরিচালনা করেছেন। জীবনের পরবর্তী ভাগে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের এক বিশিষ্ট শিষ্য হয়েছিলেন।
অত্যধিক জনসংখ্যা (বা জনসংখ্যা বৃদ্ধি) হলো যখন অনেক জনসংখ্যার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাহত হয়ে থাকে (খাদ্য, সুপেয় পানি, বিশুদ্ধ বায়ু ইত্যাদি)। আরও বৈজ্ঞানিক ভাবে, যখন জনসংখ্যা কোনো ভৌগলিক সীমার ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বেশি হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক ভাবে পরিবেশের ক্ষতিপূরণের চেয়ে দ্রুত পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে, ধীরে ধীরে পরিবেশগত ও সামাজিক পতনের দিকে পরিচালিত করে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটি নির্দিষ্ট জাতি বা পুরো বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম তাঁর রচিত কাব্য, উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাট্যসাহিত্য, প্রবন্ধ, চিত্রকলা ও সঙ্গীতের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশ (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
উইলিয়াম কেরি ইংরেজি: William Carey (১৭৬১ – ১৮৩৪) ছিলেন একজন মিশনারি ও বাংলায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক, ব্রিটিশ খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক, যাজক, বিশেষ ব্যাপটিষ্ট মন্ত্রী, অনুবাদক, সামাজিক সংস্কারক, এবং সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ। তিনি ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি, প্রথম ডিগ্রী প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শ্রীরামপুর কলেজ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
রূপসী বাংলা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের সর্বাধিক জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। কবি জীবদ্দশায় এ গ্রন্থটি বা এর অন্তর্ভুক্ত কোন কবিতা প্রকাশ করেন নি। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে দুঘর্টনায় অকালমৃত্যুর পর এর পাণ্ডুলিপির খাতাটি আবিষ্কৃত হয়। কবি এ গ্রন্থটির প্রচ্ছদনাম নির্বাচন করেছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা। জীবনানন্দ কেন স্বীয় জীবদ্দশায় এ কাব্যগন্থটি প্রকাশ করেননি তা অদ্যাবধি এক পরম বিস্ময় হয়ে আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এর কবিতাগুলি বাঙালিদের বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
প্রাকৃতিক পরিবেশ হল জীবিত এবং প্রাণহীন প্রাকৃতিকভাবে পরিবেষ্টিত ঘটমান সমস্ত জিনিস, এক্ষেত্রে এর অর্থ কৃত্রিম নয়। পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর কিছু অংশে এই শব্দের ব্যবহার সুপ্রযুক্ত। সমস্ত প্রজাতি, জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত যেটা মানুষের বাঁচা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে।প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারণাকে নিম্নলিখিত উপাদানে ভাগ করা যায়:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বলতে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত অন্য একটি ঘোষণাপত্রকে বোঝায়। যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান বা ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও এই ঘোষণাপত্র সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর তারিখে যখন দেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংবিধান হিসেবে এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে, "সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) তাঁর লেখা। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের পূর্ণ তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো:
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ.
কিন্ডারগার্টেন শিশুদের প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ। এ শব্দটি জার্মান, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। 'কিন্ডারগার্টেন' শব্দটি বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদেরকে বাড়ী থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং 'শিশুদের বাগান' হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে।
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী (গুজরাটি: નરેન્દ્ર દામોદરદાસ મોદી; উচ্চারণ শুনুন , জন্ম ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৫০) ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী। এই রাজনীতিবিদ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে বহুমতের দ্বারা জয়লাভ লাভ করেন এবং ২৬শে মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি গুজরাটের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বৃহস্পতি (সংস্কৃত: बृहस्पति) একটি ভারতীয় নাম এবং এর দ্বারা নির্দেশ করা হয় বিভিন্ন যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রচনায় বর্ণীত পৌরাণিক চরিত্রকে। প্রাচীন হিন্দু সাহিত্য মতে বৃহস্পতি বৈদিক যুগের একজন ঋষি যিনি দেবতাদের পরামর্শদাতা, বিভিন্ন মধ্যযুগীয় গ্রন্থে এই শব্দটি বৃহস্পতি গ্রহকে ইঙ্গিত করে। প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক গ্রন্থ মতে তিনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা, এবং কখনও কখনও তাকে অগ্নি দেবতার সঙ্গে শনাক্ত করা হয়।
রামমোহন রায়, অথবা রাজা রাম মোহন রায় লেখা হয় রাজা রামমোহন রায় (মে ২২, ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩) প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮ – ১৯৫৬) বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক। এই পৃষ্ঠায় তার যাবতীয় গ্রন্থ, রচনা সংকলন ও অনূদিত গ্রন্থের তালিকা দেওয়া হল।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।
ভারত (শুনুন ) দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল, ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত। এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
অরণ্য বা বন হলো ঘন বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের দ্বারা ঘেরা একটি এলাকা। বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে, বনের নানান ধরনের সংজ্ঞা আছে। ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ২০০৬ সালে অরণ্য চার বিলিয়ন হেক্টর (১৫ মিলিয়ন বর্গ মাইল) বা বিশ্বের জমির প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে। এই বনাঞ্চল অনেক প্রাণীর লালনক্ষেত্র হিসেবেও যেমন কাজ করে তেমনি বিভিন্ন নদী-নালার পথ পরিবর্তন, মাটি সংরক্ষণের মতো কাজ করে। পৃথিবীর জীবমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ অরণ্য। যদিও প্রাথমিকভাবে একটি বনের বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট করা হয় তার গাছের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী। এ হলো অক্সিজেনের এক বিপুল সরবরাহকারী। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া অন্য সব মহাদেশেই অরণ্য বর্তমান। গরমকালে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ও বার্ষিক পঁচাত্তর সেন্টিমিটার বৃষ্টিপূর্ণ স্থান অরণ্য গড়ে ওঠার পক্ষে উপযোগী।
খাদ্য শৃঙ্খল বা খাদ্য শিকল হচ্ছে উৎপাদক জীব (অর্থাৎ, উদ্ভিদ যা খাদ্য তৈরির জন্য সূর্যের বিকিরণ ব্যবহার করে) থেকে শুরু করে শীর্ষে অবস্থানকারী সর্বোচ্চ স্তরের খাদক বা শিকারী প্রজাতির (গ্রিজলি ভাল্লুক বা খুনে তিমির মতো) এবং বিয়োজক তথা মৃতভোজী (যেমন: কেঁচো বা ঘুনপোকা) এবং পচনকারীতে (যেমন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া) সমাপ্ত হওয়া কোনও খাদ্য জালের বিভিন্ন অংশের একটি রৈখিক সম্পর্ক। এছাড়াও একটি খাদ্য শৃঙ্খল আরও দেখায় বিভিন্ন জীব খাদ্যের জন্য কীভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তর একটি আলাদা ট্রফিক স্তর প্রতিনিধিত্ব করে। খাদ্য জাল থেকে খাদ্য শৃঙ্খল আলাদা। কারণ কোন বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন প্রাণির মধ্যে খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের জটিল নেটওয়ার্ক একত্রিত হয়ে খাদ্য জাল তৈরি হয়; অন্যদিকে খাদ্য শৃঙ্খল কেবল অল্প কয়েকটি জীবের মধ্যে খাদ-খাদকের একমূখী সম্পর্ক। অনেকগুল৯ খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যে প্রাকৃতিক আন্তঃসংযোগগুলো মিলে একটি খাদ্য জাল তৈরি হয়। অর্থাৎ, খাদ্য শৃঙ্খল হচ্ছে খাদ্য জালের একটি অংশ।
বিহারীলাল চক্রবর্তী (২১ মে, ১৮৩৫ - ২৪ মে, ১৮৯৪) বাংলা ভাষার কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে তিনি সুপরিচিত। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার 'ভোরের পাখি' বলে আখ্যায়িত করেন। তার সব কাব্যই বিশুদ্ধ গীতিকাব্য। মনোবীণার নিভৃত ঝংকারে তার কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিহারীলাল তার কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার (যা মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
মুজিব বর্ষ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদযাপন করার কথা থাকলেও, করোনাভাইরাসের কারণে গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু খ্যাত নেতা অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় ঘোষিত বর্ষটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুজিব বর্ষের লোগোর নকশা করেন সব্যসাচী হাজরা।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সমর্থনে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় সংবিধান লঙ্ঘন, শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ - ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্পান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি (philosophy) (গ্রিক ভাষা φιλοσοφία, ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে "জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা") হলো অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া প্রভৃতি মৌল বিধানের আলোচনাকেও দর্শন বলা হয়। মানুষের সামাজিক চেতনার বিকাশের একটা পর্যায়েই মাত্র মানুষের পক্ষে বিশ্লেষণী দৃষ্টি নিয়ে জগৎ এবং জীবন সম্পর্কে চিন্তা করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ তার নিজের উদ্ভব মুহূর্ত থেকেই চিন্তার এরূপ ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম ছিল না। মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। নিজের জীবনকে অধিকতর নিশ্চিত করে রক্ষা করার প্রয়োজনে মানুষ প্রকৃতি জগতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। প্রকৃতি, জগৎ এবং পরবর্তীকালে মানুষের নিজের দেহ এবং চেতনা সম্পর্কেও সে চিন্তা করতে শুরু করে।আদিকালে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুব অধিক ছিল না। দর্শনই আদি জ্ঞানের মূল ভাণ্ডার। জগৎ ও জীবনের প্রত্যেকটি সমস্যা মানুষের কাছে প্রশ্নাকারে উত্থাপিত হয়। যে প্রশ্নই উপস্থিত হোক না কেন, মানুষ তার একটা জবাব দিয়ে প্রকৃতিকে বশ করার চেষ্টা করেছে। তাই আদি দর্শন একদিকে যেমন সমস্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার তেমনি আবার তার মধ্যে সমস্যার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমাধানের বদলে কাল্পনিক সমাধানের সাক্ষাৎ অধিক মেলে। কালক্রমে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন দার্শনিক কল্পনা বাস্তব জীবনে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তার স্থানে অধিকতর সঠিক সমাধান আবিষ্কৃত হতে থাকে। এইভাবে অধিকতর বাস্তব এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা ভিত্তিতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিকশিত হতে থাকে। পূর্বে প্রকৃতি, পদার্থ, সমাজ, চেতনা, যুক্তি, অর্থনীতি, ধর্ম সবই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালক্রমে তাদের প্রত্যেকে এক একটি ভিন্ন বিজ্ঞান বা আলোচনার শাখায় রূপান্তরিত হতে থাকে। এই বিকাশের পরিণামে বর্তমানে দর্শন বলতে কেবলমাত্র কল্পনার উপর নির্ভরশীল কোনো বিষয় আর অবশিষ্ট নেই। তাই দর্শনের প্রাচীন সংজ্ঞা এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হওয়ার পরেও দর্শনকে অনেকে কল্পনার মধ্যে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রয়াসে দর্শন জীবনের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য হয়ে পড়ে। যেখানে প্রাচীনকালে জীবনের সমস্যাই দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে সেখানে আধুনিককালের এরূপ প্রয়াস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত করেছে। দর্শনের এই সংকটের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন ঊনবিংশ শতকে কার্ল মার্কস। কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে বলেন যে, দর্শন হবে জীবন এবং জগৎকে বৈজ্ঞানিক এবং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। দর্শন হবে বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের স্বার্থে জগৎ এবং সমাজকে পরিবর্তিত করার ভাবগত হাতিয়ার। দর্শন অবাস্তব কল্পনা নয়। দর্শন জগৎ ও জীবনের মৌলিক বিধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আর এই ব্যাখ্যারই অপরনাম হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তত্ত্ব।দর্শন যেমন মানুষের আদি জ্ঞানভাণ্ডার, তেমনি তার ইতিহাস জ্ঞানের যে কোনো শাখার চেয়ে প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিস, ভারত ও চীনে দর্শনের বিস্ময়কর বিকাশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু দর্শনের বিকাশকে দেশ বা জনগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত করার কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। জীবন ও জগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তাই হচ্ছে দর্শন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৩ জুলাই, ১৮৯৮- সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১) বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী, ২টি ভ্রমণ কাহিনী, ১টি কাব্যগ্রন্থ এবং ১টি প্রহসন লিখেছেন। । এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার,পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০
ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সনে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সনের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৯৭১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।
ছোটগল্প (বিকল্প বানান ছোট গল্প) বাংলাই না সমগ্র কথাসাহিত্যের একটি বিশেষ রূপবন্ধ যা কাহিনীভিত্তিক এবং দৈর্ঘ্যে হ্রস্ব, তবে ছোটগল্পের আকার কী হবে সে সম্পর্কে কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেই। সব ছোটগল্পই গল্প বটে কিন্তু সব গল্পই ছোটগল্প নয়। একটি কাহিনী বা গল্পকে ছোটগল্পে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কিছু নান্দনিক ও শিল্পশর্ত পূরণ করতে হয়। ছোটগল্পের সংজ্ঞার্থ কী সে নিয়ে সাহিত্যিক বিতর্ক ব্যাপক। এককথায় বলা যায়- যা আকারে ছোট, প্রকারে গল্প তাকে ছোটগল্প বলে।
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্য নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন " হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা "। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, পীরসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামি ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয়: কলকাতা-কেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও ঢাকা-কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।
মৈমনসিংহ গীতিকা একটি সংকলনগ্রন্থ যাতে ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত দশটি পালাগান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডের দশটি পালার রচয়িতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো অন্যান্যদের সহায়তায় সংগ্রহ করেন এবং স্বীয় সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহকুমার আইথর নামক স্থানের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাথা সংগ্রহ করছিলেন। এই গীতিকাটি বিশ্বের ২৩টি ভাষায় মুদ্রিত হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
স্বাধীনতা (বাংলা উচ্চারণ: [স্বাধীনতা] (শুনুন)) একটি শর্ত, যেখানে একটি জাতি, দেশ, বা রাষ্ট্র বা জায়গা যেখানে জনগণ থাকবে, নিজস্ব শাসনব্যবস্থা, এবং সাধারণত কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা. স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়। স্বাধীনতা দীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতার প্রশ্নে বিতর্ক যেভাবেই হোক, সার্বভৌমত্ব অর্জন যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; অন্যদের শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্য, যেখানে মুক্তির উপাদান থাকে, যেমন একটি দেশের মধ্যে গণতন্ত্রায়ন, যেখানে সীমানায় কোন পরিবর্তন হয় না। জাতি-রাষ্ট্র কোন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ছাড়া স্বাধীনতা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব,জাতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে হয়নি। (যদিও এর মাধ্যমে রুশ সাম্রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয়েছিল, যদিও এর ফলে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া এবং ইস্তোনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে).
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা কার্যক্রম অপারেশন সার্চলাইটের অধীনে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে নির্মূল করতে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের সহায়তাকারী দলগুলো ৩০,০০,০০০ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। ২,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ বাঙালি মহিলাকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে। এছাড়াও, বাঙালি ও উর্দুভাষী বিহারিরা জাতিগত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত ঘটনাসমূহ গণহত্যা হিসেবে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনৈকা মার্কিন শিক্ষাবিদ শর্মিলা বসু মন্তব্য করেছিলেন যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদীরাও যুদ্ধকালীন বিহারিদের উপর গণহত্যা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ () (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪; ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ - ৫ কার্তিক, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
গণতন্ত্র হল এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বা কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা একটি দেশের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন ব্যবস্থা, যেখানে সমস্ত সদস্যই ক্ষমতার সমান অংশীদার । আধুনিক গণতন্ত্রকে দুটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা তাদের প্রাচীনকালের সরকারগুলি থেকে পৃথক করে: তাদের নিজস্ব সমাজে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে ও একইভাবে সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির দ্বারা বানানো আন্তর্জাতিক আইনত কাঠামোর দ্বারা তাদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আছে । গণতান্ত্রিক সরকার সাধারণত বহুতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার থেকে পৃথক , যা যথাক্রমে সংখ্যালঘু এবং একক রাজার দ্বারা শাসিত হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বাংলা: বাংলাদেশ গণসংঘ) বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম "আওয়ামী লীগ" করা হয়।
একাদশী একটি চান্দ্র তিথি। চাঁদের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি, হিন্দু ধর্মমতানুসারে পুণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মমতে নিরম্বু উপবাস বিহিত। একাদশী ব্রত অবশ্য পালনীয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তার লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই "একাদশী উপবাসের" প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রীল জীব-গোস্বামী তার ভক্তিসন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্ধ পুরাণের একটি উদ্ধৃৃতি দিয়ে বলেছেন, "যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী, সে যদি বৈকন্ঠ লোকেও উন্নীত হয়, তবুুুুও তার অধঃপতন হয়়।" (শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা ১৫/৮-১০) এসময় সাধারণত ফলমূল ও বিভিন্ন সবজি এবং দুধ খাওয়া যায়, তবে একাদশীতে পঞ্চরবি শস্য বর্জন করা বাঞ্চনীয়। বিষ্ণুর শয়ন, পার্শ্ব পরিবর্তন ও উত্থান উপলক্ষে যথাক্রমে আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভপ্রদ গণ্য করা হয়। ভৈমী একাদশী ও মাঘের শুক্লা একাদশীকেও বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। নিয়মিত একাদশী পালন শরীরের পক্ষেও উপকারী। তাই স্বাস্থ্যগত কারণেও অনেকে প্রতি মাসে দুটি একাদশী তিথি পালন করেন। . . . পদ্মপূরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় জৈমিনি ঋষি তার গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি?
ভুটান (জংখা: འབྲུག་ཡུལ ড্রুক ইয়ুল আনুষ্ঠানিক নাম কিংডম অব ভুটান འབྲུག་རྒྱལ་ཁབ་ ড্রুক ইয়ুল খাপ,) দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাজতন্ত্র। ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংখা ভাষায় 'দ্রুক ইয়ুল' বা 'বজ্র ড্রাগনের দেশ' নামে ডাকে। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভুটান উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও উত্তরবঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "ভূ-উত্থান" থেকে যার অর্থ "উঁচু ভূমি"।সংস্কৃত ভাষায় ভোট বা ভোটান্ত বলতেও ভুুুটান দেশটিকে বোঝানো হয়। ভুটান সার্কের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং মালদ্বীপের পর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ভুটানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর থিম্পু। ফুন্টসলিং ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
শিবায়ন কাব্য মধ্যযুগীয় বাংলা আখ্যানকাব্যের একটি ধারা। শিব ও দুর্গার দরিদ্র সংসার জীবন কল্পনা করে মঙ্গলকাব্যের আদলে এই কাব্যধারার উদ্ভব। শিবায়ন কাব্যে দুটি অংশ দেখা যায় – পৌরাণিক ও লৌকিক। মঙ্গলকাব্যের আদলে রচিত হলেও শিবায়ন মঙ্গলকাব্য নয়, মঙ্গলকাব্যের সঙ্গে এর কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই কাব্যের দুটি ধারা দেখা যায়। প্রথমটি মৃগলুব্ধ-মূলক উপাখ্যান ও দ্বিতীয়টি শিবপুরাণ-নির্ভর শিবায়ন কাব্য। শিবায়নের প্রধান কবিরা হলেন রতিদেব, রামরাজা, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র কবিচন্দ্র ও শঙ্কর কবিচন্দ্র।
ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দর্শন ও শিক্ষার সমন্বয়
শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক শিক্ষা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ education। এই education শব্দটি তিনটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে ধরা হয়, যথা এডুকেয়ার যার অর্থ হলো প্রতিপালন করা, educo যার অর্থ হলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এডুকিরি যার অর্থ হলো অঙ্কন করা । অর্থাৎ শিক্ষা হলো সমস্ত প্রক্রিয়ার সমন্বয় যার দ্বারা ব্যক্তি তার সক্ষমতা ,দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সহ সমস্ত রকম চারিত্রিক ও সামাজিক গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে এবং যার ফলস্বরূপ ব্যক্তির সর্বোত্তম আত্ম পরিস্ফুরণ সাধিত হয় । স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় মানবাত্মার অন্তর্নিহিত উৎকর্ষতার সার্বিক পরিস্ফূরণ ই-শিক্ষা। মহান শিক্ষাবিদ পেস্তালোজির মতে মানবাত্মার অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক মধুর ও প্রগতিশীল বিকাশই হল শিক্ষা। কবিগুরুর ভাষায় অন্তরের আলোর সম্পদ শিক্ষা দ্বারা অর্জিত হয় শিক্ষা কে একটি প্রক্রিয়া ধরা হলে শিক্ষা একটি নিরবিচ্ছিন্ন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা দ্বারা মানুষ জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে সার্বিক গুণের অধিকারী হয়। শিক্ষাকে উৎপাদন হিসেবে ধরলে শিক্ষান্তে শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারা শিক্ষার ফল বিচার করা হয় যা শিক্ষাকে পরিমাপ করতে সাহায্য করে অপরপক্ষে দর্শন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ philosophy শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ফিলিও ও সোফিয়া এর সমন্বয় তার অর্থ হলো সত্যের প্রতি ভালোবাসা। আসলে দর্শন হলো সত্যের অনন্ত অনুসন্ধান বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে সার্বজনীন জিজ্ঞাসাই দর্শনের লক্ষ্য। মহান দার্শনিক প্লেটোর মতে বহুবিধ বস্তু বা ঘটনার সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কীয় জ্ঞান ই দর্শন। radhakrishnan বলেছেন বাস্তবতার যুক্তিসম্মত অনুসন্ধানই দর্শন। দর্শন মানব জীবনের তিনটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে যথা metaphysics বা আধিভৌতিক epistemology বা জ্ঞানতত্ত্ব axiology বা মূল্যবোধের অনুসন্ধান। অনুসন্ধান যুক্তি নান্দনিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।সুতরাং উদ্দেশ্যগত ভাবেই দর্শন ও শিক্ষা নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সমস্ত সময়কার মহান দার্শনিকেরা তাদের নিজস্ব চিন্তা এবং চেতনা দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার রীতিনীতি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করে গেছেন ।প্রাচীন গ্রিসের মহান দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এবং এরিস্টোটল শিক্ষাব্যবস্থা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করে গেছেন ।পাশ্চাত্যের মহান দার্শনিক রুশো ,কান্ট ,হেগেল, dewy শিক্ষার প্রকৃতি , শিক্ষার লক্ষ্য এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন ।ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা পদ্ধতি এবং তার সঠিক ইমপ্লিমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে ভারতীয় দার্শনিকগণ যথা বুদ্ধ ,গান্ধী ,টেগর, অরবিন্দ ,রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখের অবদান আছে ।শিক্ষা এবং দর্শন দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় কারণ শিক্ষা ও দর্শন ও উভয়ের লক্ষ্যই হলো জ্ঞান এবং উভয় অর্জনের মাধ্যমই হল ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান। ধারণা নির্মাণ ও তার যথার্থ বাস্তবিক প্রয়োগ দ্বারা শিক্ষা পরিচালিত হয় তাই যথার্থভাবে শিক্ষা প্রয়োগ করতে হলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত অভিলক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই অভি লক্ষ্য নির্মাণের কাজটি করে থাকে দর্শন । দর্শন জীবন ও মূল্যবোধের সাপেক্ষে একটি সুস্থির দিশা তৈরি করে যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও স্থির অভিমুখী করে তোলে । তাই বলা ভালো সুস্থির দর্শন ছাড়া শিক্ষা অন্ধ আর সুস্থির শিক্ষা ছাড়া দর্শন অচল । জন ডুয়ি যথার্থই বলেছেন শিক্ষা হলো দর্শনের পরীক্ষাগার যেখানে সমস্ত দার্শনিক সত্যতার যথার্থতা পরীক্ষিত হয় । তাই দর্শনের কাজ হল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক গুণাবলী নির্দেশনার পথ স্থির করা আর শিক্ষার কাজ হলো সেই পথে চলে জীবনকে উৎকর্ষ থেকে উৎকর্ষতর করে তোলা । একটি মুদ্রার দুই পিঠ হলো শিক্ষা আর দর্শন । দর্শনের পিঠটি হল চিন্তাশীল শিক্ষার পিঠটি হল সক্রিয় ।সুতরাং পরিশেষে বলা চলে যে শিক্ষা এবং দর্শন দুটি পৃথক বিষয় নয় এটি একত্র করে যে শিক্ষাদর্শন ভাবনা করা হয়েছে সেটি যথার্থ। শিক্ষা পদ্ধতি চারটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষক , পাঠক্রম ও শিক্ষার্থী এই চারটি মৌলিক বিষয় নিজেদের মধ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে শিক্ষার লক্ষ্য কে পূর্ণতা দেয় ।আর এই চারটি বিষয়কে একত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত শিক্ষা দর্শনের ।একটি যথার্থ সমাজদর্শন ই পারে শিক্ষার ধারণা শিক্ষা পরিকল্পনাকে সুশৃংখল করে তুলতে দার্শনিক রীতিনীতি এবং দার্শনিকদের মৌলিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ উচ্চশিক্ষা এই রীতি-নীতি গুলিকে আশ্রয় করে অতীতের সমস্ত সম্পদ ও ঐতিহ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যা দার্শনিক চিন্তা ভাবনা দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃংখল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে শিখন ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করা এবং তার উন্নতি সাধন করা শিক্ষা দর্শনের মৌলিক লক্ষ্য । কোন শিক্ষা ভাবনার বা শিক্ষা তত্ত্বের যে দ্বন্দ্ব ও ভ্রান্তি গুলি আছে সেগুলো দূর করা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষা দর্শন মানুষকে সক্ষম করে তোলে যার দ্বারা সে প্রচলিত ব্যবস্থা ও নীতিগুলির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে শেখে। শিক্ষাতত্ত্ব গুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধারণা উপলব্ধিগুলোকে বাস্তবতা দান করে শিক্ষাকে সময় উপযোগী করে তোলা শিক্ষা দর্শনের অন্যতম কাজ । শিক্ষাব্যবস্থার চারটি মৌলিক উপাদানকে শিক্ষাদর্শন নিম্নলিখিতভাবে পরিশীলিত ও যথার্থ করে তোলে: প্রথমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো একটি সামাজিক সংস্থা যা শিক্ষার মূলাধার । শিক্ষা দর্শন মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলির পুনস্থাপন করা যা পূর্বপুরুষ দ্বারা অর্জিত ।এগুলির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় যেমন ভাষা, বিজ্ঞান , ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে যা তাদের বোধকে প্রাথমিক স্তর থেকে অন্তিম স্তরের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । আর এই জ্ঞান অর্জন পর্বের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পাঠক্রম যা উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষাদর্শন দ্বারা গঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন । শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি শিশু তার সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্তব্যবোধ নীতিবোধ এবং তার চরিত্র ও মানসিক গঠন পাশাপাশি শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া আবশ্যক বলে বিবেচনা করবে । এ থেকেই তার মনে সাম্যের অধিকার ও সামাজিক ভাবনাগুলি বিকাশ পাবে যা তাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বিদ্যালয় এর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী নাহলে এই শিক্ষার লক্ষ্য গুলি কোন রূপেই যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো শিক্ষক । ই-লার্নিং ব্যবস্থায় শিক্ষকের গুণগতমানের ও তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন সাধিত হলেও শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক একাধারে প্রশিক্ষক, নির্দেশক বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শিক্ষাব্যবস্থায় তিনিই নেতা, তার নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপযুক্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ।একজন যথার্থ শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে তার উপযুক্ত নেতৃত্ব দান ও কর্ম প্রয়াসের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে এমন কার্যক্রম নির্ধারণ করে যে যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সানন্দে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধ্য হয়। শিক্ষকের সে কারণেই প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সমর্থ করে তোলে যার দ্বারা সে তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের পরিধি, সীমা ,লক্ষ্য ,যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই অবগতি লাভ করতে পারেন। শিক্ষার্থীর শিক্ষার লক্ষ্য ,শিখন পরামর্শ এবং শিখন কর্মকান্ড শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় ।কিন্তু তিনি কখনোই শিক্ষার্থীকে চাপ বা স্ট্রেস প্রদান করবেন না যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পর্কে ভ্রান্ত ভয়ের শিকার হয়ে সে ব্যবস্থা থেকে ফিরে আসে শিক্ষকের নিজের গুণেই জ্ঞান-বুদ্ধি বিকশিত হবে এবং তার শিক্ষার্থী দ্বারা প্রয়োগে রূপান্তরিত হবে সম্মত সুস্থির পরিকল্পনা শিক্ষককে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে উৎসাহিত করবে ।শিক্ষক নিজেকে সর্বজ্ঞ না ভেবে শিক্ষার্থীর সাথে একই আনন্দে শেখার লক্ষ্যে ব্রতী হবে ।পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে উপযোগী শিক্ষা শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হয় । শিক্ষক ,পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর সুস্থির সমন্বয় দ্বারাই শিক্ষার লক্ষ্য সাধিত হয়, তাই শিক্ষককে শিক্ষা ,শিখন দর্শন অবশ্যই জানা প্রয়োজন এবং তা অনুযায়ী তাকে শ্রেণিকক্ষ পরিচালিত করা একান্ত কর্তব্য বলে মেনে নিতে হবে । একজন শিক্ষক তিনি যদি মনে করেন যে তিনি পারবেন তবে তিনি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন কিন্তু তিনি যদি মনে করেন তিনি পারবেন না তবে শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।তাই শিক্ষাদর্শন শিক্ষককে সামগ্রিক পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্য করবে। তৃতীয়তঃ পাঠক্রম ,পাঠক্রম শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ।শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাদর্শন সম্মত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তা পাঠক্রমে সুপরিকল্পিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে ।এর ব্যাপ্তি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণীকক্ষের বাইরে উভয় জায়গাতেই সুবিন্যাস্ত থাকে। ক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী উভয়ই পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়বস্তু ও শিক্ষা পদ্ধতি , শিখন পদ্ধতি ও তার মূল্যায়ন পাঠক্রমের দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়। শিক্ষার লক্ষ্য বলতে পাঠক্রম দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী উভয় লক্ষ্যই কার্যকরী করা হয় ।তাই জ্ঞান ও বোধ অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে প্রয়োগ ও দক্ষতার দিকেও পাঠক্রমের যথেষ্ট নজর থাকে ।পাঠক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় পদ্ধতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি পরিলক্ষিত হয় বলা হয় ।পাঠক্রমের মধ্যদিয়েই শিক্ষা দর্শনের উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি শিক্ষাঙ্গনে পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার্থী এই পাঠক্রম দ্বারা শিক্ষকের সাহায্যে শিক্ষাঙ্গনে যেমন ভবিষ্যতে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে তেমনই উপযুক্ত মানুষ হয়ে ওঠে। চতুর্থত ছাত্রঃ শিক্ষার্থী হল শিক্ষাব্যবস্থার সর্বাধিক সজীব উপাদান ।শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকে ছাত্র তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও বিদ্যালয় এর যাবতীয় কার্যাবলী আবর্তিত হয় ।বৈদিক শিক্ষায় বা প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষার্থী ছিল কেবলমাত্র শ্রোতা , কিন্তু দিনে দিনে শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষম ও সক্রিয় করে তোলার যাবতীয় উপাদান শিক্ষাব্যবস্থায় আমদানি করা হয়েছে ।আর তাই প্রকৃতির মাঝে শিক্ষা, হাতে-কলমে শিক্ষা বা সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষা ক্রমে ক্রমে প্রসার লাভ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি প্রচ্ছদে শিক্ষার্থীর মনে ও চিন্তাই যদি সুস্থির শিক্ষা দর্শনের ছাপ পরিলক্ষিত না হয় তবে শিক্ষার্থীর যে সামাজিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে তা শিক্ষা এবং সমাজ উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর। জ্ঞানের প্রতি জিজ্ঞাসা বা জ্ঞানের পিপাসা সত্যানুসন্ধান এ গুলি দর্শনের মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মনে এই লক্ষ্য গুলি স্থাপিত করা একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষা দর্শন তাই একজন শিক্ষার্থীকে যেমন ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মের অনুসন্ধানে সাহায্য করে, তার পাশাপাশি জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে বাস্তব ধারণা তাকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী করে তোলে ।এখানেই শিক্ষা দর্শন এর উপযোগিতা। মূল্যবোধ ,নীতিশিক্ষা, জীবনবোধ ,কর্মক্ষমতার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, অঙ্ক ,ইতিহাস-ভূগোল, অঙ্কন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থী নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। শিক্ষার্থীর ভেতরকার যে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান জিজ্ঞাসা তা বাস্তবে পরিস্ফুটিত হয় তাই শিক্ষাঙ্গনে অসমর্থ শিক্ষার্থী ও একটু পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা ফুটে ওঠে তার পরিস্ফূরণ ঘটে শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হিসাবে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষাব্যবস্থার উপযুক্ত লক্ষ্য ও উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষার যথার্থ বাস্তব প্রয়োগের জন্য শিক্ষাদর্শন অনস্বীকার্য ।তাই দর্শনের অন্যান্য শাখার থেকেও দর্শনের শিক্ষাদর্শন শাখার উপযোগিতা ও ব্যবহার বর্তমানে সর্বাধিক। এই শিক্ষা দর্শনের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ যা শিক্ষার লক্ষ্য তাকেই বাস্তবে সুচিন্তিত মতামতের দ্বারা দিশা স্থাপন করান। ভারতীয় শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি অর্থাৎ বেদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেদ বৈদিক যুগে মূলত আর্যদের দ্বারা বিভিন্ন মনিষীদের অর্জিত জ্ঞান ,উপলব্ধি মূলত দার্শনিক চিন্তা ভাবনার ভিত্তিতে আকরগ্রন্থ বলা যায় । বেদের মূলত চারটি ভাগ ঋক্ ,সাম, যজু ও অথর্ব। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুটি অংশের সমন্বয়ে বেদ গঠিত। মন্ত্রের যে সমন্বয় বা সমষ্টি তাকে সংহিতা নাম দেওয়া হয়েছে ।আর বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনা বা যজ্ঞ, পূজা-পার্বণ প্রভৃতির জন্য যে নিয়ম লেখা আছে তাকে ব্রাহ্মণ নাম দেওয়া হয়েছে । জীবনের শেষ ভাগ শান্তিময় জীবন তার কথা বলা আছে আরন্যকে ।আর আরন্যক তথা বেদের সংশোধন পরিসমাপ্তি সমষ্টি একে উপনিষদ নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা মীমাংসা এবং বেদান্ত বলে দুটি গ্রন্থের কথা পাবো । মীমাংসা সাধারণত ritualistic ধারণাগুলি অর্থাৎ ধর্মীয় উপাচার সম্পর্কে বলা আছে। আর বেদান্ত সেখানে কিছু আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কথা বলা আছে। ভারতীয় দর্শন বা ভারতীয় শিক্ষা দর্শন এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি বুঝতে গেলে আমাদের প্রথম যে বিষয়গুলির কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে দর্শন যে শব্দটি এটি একটি সংস্কৃত শব্দ ।এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যক্ষভাবে দেখা। দর্শন শব্দের অর্থ থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের থেকে ভারতীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। পাশ্চাত্য দর্শনে বৌদ্ধিক উপলব্ধির কথা জোর দিয়ে বলা হলেও ভারতীয় দর্শনে আত্মার উপলব্ধির উপরে সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। যার মূলগত অর্থ হচ্ছে সত্য এবং বুদ্ধি এই দুটির প্রত্যক্ষ অবলোকন বা দর্শন ।ভারতীয় দর্শন কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি হচ্ছে আস্তিক দর্শন আরেকটি হচ্ছে নাস্তিক দর্শন। আস্তিক দর্শন দু'প্রকার একটি হচ্ছে বেদ নির্ভর দর্শন, আরেকটি হচ্ছে বেদ নিরপেক্ষ দর্শন ,এখানে বেদের পরোক্ষ প্রভাব বর্তমান। নাস্তিক দর্শনে বেদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রভাবই বর্তমান নেই ।বৈদিক দর্শনের মধ্যে মীমাংসা এবং বেদান্ত এই দু'প্রকার দর্শন পরে ।আর বেদ নিরপেক্ষ দর্শনের মধ্যে সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিকা এই দর্শন গুলি পরে ।নাস্তিক দর্শনের মধ্যে চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন পড়ে । পরবর্তীকালে যে সমস্ত দর্শন গুলি এসেছে সেগুলি এসমস্ত দর্শনের সমন্বয়েই গঠিত । ভারতীয় দর্শনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপঃ ১/প্রত্যক্ষ উপলব্ধিঃ বৈদিক যুগে বিভিন্ন ঋষি মনীষীরা তাদের প্রতিদিনকার বাস্তব উপলব্ধি থেকে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করতেন ।জীবনের প্রকৃতি, জন্ম , মৃত্যু এবং বিভিন্ন জাগতিক ও মহাজাগতিক কর্মকান্ডের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য ও তার সত্য অনুসন্ধান করার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোই ছিল একমাত্র পথ। প্রতিটি দর্শনেই গুরুর বাস্তব উপলব্ধি দ্বারা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২/চার্বাক দর্শন ছাড়া প্রতিটি দর্শনেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে ।ঈশ্বরের অস্তিত্ববাদ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বৈদিক দর্শনের পাশাপাশি জৈন ও বৌদ্ধ এই দর্শন গুলিতেও অস্তিত্ব সরাসরি স্বীকার করা হয়েছে । ৩/ভারতীয় দর্শনের প্রত্যেকটি ধারা একই সাথে এগিয়ে গেলেও এদের মধ্যে সুস্থির পার্থক্য এবং সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান । একে অপরের উত্তরণের পথে কখনো বাধা সৃষ্টি করেনি। আবার ভিন্ন ভিন্ন দর্শন বা মত অবলম্বনকারী মানুষদের মধ্য প্রত্যক্ষ কোন সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ৪/ প্রত্যেক দর্শন মতে যুক্তি নির্ভরতা একটা মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।যুক্তির দ্বারা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যা ও জীবনবোধকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যম হিসেবে দর্শনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ৫/ভারতীয় দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব বরাবরই বিদ্যমান । এখানে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য আত্মাকে একটি চরম পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে জীবনের লক্ষ্য অর্জিত হয় । ৬/ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দর্শন ছাড়া সব ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে মানুষের অজ্ঞতাই হলো মানুষের দুঃখের কারণ। এই দুঃখ তিন রকম হতে পারেঃ একটি আধ্যাত্মিক, একটি আধিভৌতিক, আরেকটি আধিদৈবিক ।মানুষের উপলব্ধি শ্রবণ ,মনন ও নিদ্বিধায়াসন দ্বারা। জাগতিক চাওয়া-পাওয়া বা বন্ধন থেকে মুক্তির ঘটনাকে মোক্ষলাভ বলা হয়েছে। ৭/ভারতীয় দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভারতীয় দর্শন উদার মানসিকতার ধারক ও বাহক । ৮/একটি দর্শনই self-realization আত্ম-উপলব্ধিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। ৯/ দর্শন মতে কার্যকারণ সম্পর্ক পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মুখ্য কারণ ।যদি কোন ঘটনা ঘটে জানতে হবে তার একটি কারণ আছে ।তবে ফলের আশা করে কর্ম করা ঠিক নয়। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি প্রধান উপাদান হলো নীতিবোধ ও মূল্যবোধের উপর এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ৯/ভারতীয় দর্শন মতে অজ্ঞতা বা কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি না থাকলে মানুষ দুঃখ কষ্টের শিকার হয় ।এবং এই দুঃখ-কষ্টের থেকে তাকে বের হতে গেলে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে তাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ১০/ ভারতীয় দর্শন পুনর্জন্ম মতে বিশ্বাসী অর্থাৎ মানুষ এজনমে যেমন কাজ করে যাবে পরজন্মে সেই কাজের ফলস্বরূপ তার জন্ম নিতে হবে । ১১/ভারতীয় দর্শনের গভীরতা সুনিবিড় ।মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ থেকে তার আত্মার চরম মুক্তি বা অজানা সমস্ত তথ্যের সত্য উদঘাটন এসবের মধ্যেই নিহিত আছে ভারতীয় দর্শনের মূল্যবোধ। ১২/ভারতীয় দর্শন মতে মানুষের যে গুনগুলি বা চাওয়া-পাওয়া গুলি থাকে সেগুলি হচ্ছে অর্থ ,কাম ,ধর্ম এবং মোক্ষ ।ধর্ম ও মোক্ষের আত্মিক মূল্য বর্তমান ,আর বাস্তবিক মূল্য অর্থ ও কামের বর্তমান । আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন যার নেতৃত্বে ছিলেন ডেলর 1996 সালে শিক্ষা সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি পেশ করেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে শিক্ষার মূলত চারটি স্তম্ভ আছে প্রথমত learning to know দ্বিতীয়তঃ learning টুডু তৃতীয়তঃ learning to লিভটুগেদার চতুর্থত learning to be ।ভারতীয় দর্শনে এই বিষয়গুলি কেই মূলত উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ,সহযোগ ও আত্মানমরিদ্ধি । ভারতীয় দর্শনের মুল বক্তব্যগুলিকে অান্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বসহ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দু'রকমের প্রমা ও অপ্রমা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলা হয় যা অনুভব ও স্মৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।আর অপ্রমা ~ সমস্যা ,ভ্রম ও যুক্তি দ্বারা গঠিত হয় । ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞানের ধারণা নির্মাণ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে ন্যায় তত্ত্বের কথা আলোচনা করব । ন্যায় তত্বের উদ্ভাবক ঋষি গৌতম ।বাস্তব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক চিন্তা এই দুটি এই তত্ত্বের ভিত্তি। বাস্তবতার নিরিখে ক্ষেত্রে বহুবস্তু বাদী বাস্তবতাকে স্বীকার করে ।বাস্তবতার আধার হিসেবে যে বস্তুগুলোকে এখানে ধরা হয়েছে তা হলো পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু ,আকাশ, কাল, দিক ,আত্মা, মন। এই তত্ত্ব মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল উপলব্ধি ,অনুমান ,তুলনা ও পরীক্ষণ ।আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি দ্বারা তাৎক্ষণিক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি বলে ।উপলব্ধি দুই প্রকার একটি লৌকিক অপরটি অলৌকিক ।বাক্য ও মানস বা মন দ্বারা যে উপলব্ধি অর্জিত হয় তাকে লৌকিক উপলব্ধি বলে ।নির্বিকল্প ,সবিকল্প এবং প্রত্যয় অভিজ্ঞতা দ্বারা লৌকিক উপলব্ধি অর্জিত হয়। প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া নির্বিকল্প এবং প্রত্যক্ষ সংযোগ দ্বারা সবিকল্প অর্জিত হয় ।কোন বিষয়ের ভাষাগত অর্থ উদ্ধারকে প্রত্যয়াভিজ্ঞা বলে ।আর সাধারণভাবে অপ্রচলিত মাধ্যম দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে অলৌকিক উপলব্ধি বলে। সামান্য লক্ষণ ,জন লক্ষণ ও যোগজা দ্বারা এটি অর্জিত হয় ।জ্ঞান অর্জনের পর যে বিশেষ বোধ অর্জিত হয় তাকে অনুমান বলে। কারণ অনু শব্দের অর্থ হচ্ছে আগে এবং মান শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। গৌতম এর মতে অনুমান তিন রকমের পুরাভাত, শেষাভাত, সময়তদ্রষ্টা । তুলনা বা সামান্যীকরণ পদ্ধতিতে পুরাভাত, বাতিলকরণ প্রক্রিয়ায় শেষাভাত, অন্তরের সমর্থনে সময়তদ্রষ্টা অর্জিত হয় ।এই দর্শন মতে নিজের উপলব্ধিকে স্বার্থ এবং অপরের উপলব্ধিকে পরার্থ বলা হয়। তুলনা পর্বের শেষে সাক্ষ্য বা শব্দ যেটা আসলে verbal knowledge তা অর্জিত হয়। এটি দু'রকমের দ্রষ্টা ও অদ্রষ্টা ।এই দর্শন মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো ~ অনুমান ,যুক্তি তর্ক প্রভৃতি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন, সৃজনশীল চিন্তন, সঠিক বোধের দ্বারা মূল্যবোধ অর্জন করা ,বাস্তব বস্তুর সঙ্গে জ্ঞানকে একত্রিত করা, যথার্থ জ্ঞান ও বাস্তবোচিত জ্ঞানকে একত্রিত করা। ন্যায় তত্ত্বমতে পাঠক্রম সব সময় জীবনের মূল্যবোধ এবং বাস্তব ধারণা নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বস্তু ও ইন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি দ্বারাই পৃথিবীকে জানা সম্ভব। এই দর্শন মতে শিক্ষক যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করবেন তা মূলত বক্তৃতা পদ্ধতি ,আলোচনামূলক পদ্ধতি এবং সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। ভারতীয় দর্শনের আরেকটি অনন্য ধারা হলো সাংখ্য দর্শন। এই দর্শনের উদ্ভাবক মহাঋষি কপিল। তার মতে ইহজগৎ পুরুষ ও প্রকৃতি এই দ্বৈত সত্ত্বা দ্বারা গঠিত। পুরুষ ও প্রকৃতির সমন্বয়ে মহৎ বা বুদ্ধি বা অহংকারের সৃষ্টি হয়। অহংকার তিন ধরনেরঃ সত্য, রজঃ এবং তমঃ। মন , বোধ ও শারীরবৃত্তীয় অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয় । ইহজগতের সচেতন সত্তাকে পুরুষ এবং অসচেতন সত্ত্বাকে প্রকৃতি বলা হয় ।তারা মহৎ বা বুদ্ধি দ্বারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। পঞ্চভূত কে তমঃ এবং গুণ গুলিকে রজঃ বলা হয়। ইহজাগতিক ঘটনাসমূহের কারণ হলো পুরুষ এবং তার বাস্তব বা প্রত্যক্ষ ফল হলো প্রকৃতি। এই প্রকৃতি দ্বারাই বহুবিধ ও গুণাবলী বাস্তবে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের উৎস হল উপলব্ধি ,অনুমান ও আক্ষরিক পরীক্ষণীয় বস্তু সামগ্রী ।যথার্থ জ্ঞান উদ্দেশ্য বা প্রমতা , বিধেয় বা প্রমেয়া ও জ্ঞানের উৎস অর্থাৎ প্রমাণ এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উপলব্ধি দু'রকমের আলোচনা এবং বিবেচনা। বিশ্লেষণ সংশ্লেষ বা কোন তথ্যকে মনে মনে অনুধাবন করে বিবেচনা বা বস্তুর প্রত্যক্ষ ধারণা করা হয় ।আর বস্তুর সরাসরি অনুধাবন কে আলোচনা বলা হয় ।অনুমান দু'রকমের বিতঃও অবিতঃ। চিরন্তন হ্যা বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা বিত কে সনাক্ত করা হয়। চিরন্তন না-বোধক প্রতিজ্ঞা দ্বারা অবিতঃ কে সনাক্ত করা হয়। পূর্ব পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে বিত লাভ হয় তাকে পুরাভাত বলে ।বর্তমান বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা যে বিত অর্জিত হয় তাকে সময়তদ্রষ্টা বলে ।অবিতা কে কখনো কখনো শেষাভাত বলা হয়। এই দর্শন মতে প্রমাণ বা শব্দ হিসাবে লৌকিক ও বৈদিক সমস্ত শ্রুতি ও বেদ নির্ভর লেখাগুলিকে ধরা হয়ে থাকে। আত্ম অনুভূতি এই দর্শন মতে জ্ঞান অর্জনের প্রধান উৎস। বৌধিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সংবেদন অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বৃদ্ধি এই দর্শন মতে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। পরিশেষে বলা যায় এই দর্শন মতে quality of life অর্থাৎ জীবনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার লক্ষ্য। পরবর্তী ভারতীয় দার্শনিক মতবাদটি হল যোগ। ঋষি পতঞ্জলি এর প্রবক্তা। সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে এর বহুবিধ মিল আছে। বলা ভাল সাংখ্যদর্শনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হল যোগ। এই দর্শন মতে উপলব্ধি দু'রকমের নির্বিকল্প ও সবিকল্প ।কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা কে নির্বিকল্প বলে ,এরপর যে মানসিক বিশ্লেষণ চলে তাকে সবিকল্প বলে। 25টি উপাদান দ্বারা মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয় এই দর্শন মতে তা ধরা হয়। এই 25 টি বিষয়ের মধ্যে প্রকৃতি, মহৎ ,অহংকার, মন ,ইন্দ্রিয়, পাঁচটি তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদান এবং পাঁচটি gross এলিমেন্ট বা মূল উপাদান এবং পুরুষ আছে। পুরুষ ,প্রকৃতি এবং ঈশ্বর মিলে মহৎ বা বুদ্ধি তৈরি হয় ।ইন্দ্রিয় ,অঙ্গ ও মন দ্বারা অহংকার বা জ্ঞান অর্জিত হয়। এই অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ তন্মন্ত্র বা বাহ্যিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটে। এই দর্শন মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল মন, ইন্দ্রিয় ,চালন অঙ্গ। মানসিক বিশ্লেষণ দ্বারা নিজেকে মডিফাই বা উৎকর্ষতা বিধান করাই হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য। এভাবেই অর্জিত হয় সঠিক জ্ঞান বা প্রমা ।তৎপরতা বা প্রয়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দর্শনের মূল নীতি। দৈহিক উন্নতি ও মানসিক প্রগতি যোগ দর্শন এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ।আত্ম-উপলব্ধি শিক্ষার শেষ লক্ষ্য। নীতি প্রশিক্ষণ মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হয় । activities বা সক্রিয়তা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠদান এক্ষেত্রে শিক্ষাদানের প্রধান পন্থা। ভারতীয় দর্শনের একটি ভিন্নতর ধারা হলো চার্বাক দর্শন। চার্বাক দর্শন বেদ নির্ভর দর্শন নয়। এই দর্শনের স্রষ্টা বৃহস্পতি। এই দর্শনে জ্ঞানতত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব বা প্রত্যক্ষ উপলব্ধি এই দর্শন মতে জ্ঞানের একমাত্র উৎস । জ্ঞান অর্জনে অনুমান, কথ্য প্রবচন, তুলনা প্রভৃতির কোনো ভূমিকা নেই। ইন্দ্রিয় দ্বারা বাস্তব উপলব্ধি একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানের উৎস । অন্য উৎসগুলি সুপরিকল্পিতভাবে যুক্তি দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া বাধ্যতামূলক। দর্শন মতে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যায় পার্থিব বস্তু, বাস্তব যুক্তির অবতারণা করা হয়। কোন কাল্পনিক বা অবাস্তব সত্তা যেমন ঈশ্বর ,কর্মফল, পুনর্জন্ম ইত্যাদির অস্তিত্ব এই দর্শন বিশ্বাস করে না। এই দর্শনের মূল বৈচিত্র হলো এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না কারণ ঈশ্বরকে বাস্তবে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। চার্বাকপন্থীদের যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ভগবানের উৎস যদি না থাকে তবে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কে ?বা এই মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা কে?
বল্লাল সেন রচিত গ্রন্থ অনুসারে সেন রাজবংশ এর গোরাপত্তন ৯০০ শতকেরও পূর্বে ,বাংলার পাল রাজাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে তারা একসময় পাল রাজাদেরকে পরাজিত করে পাল সাম্রাজ্য করায়ত্ত করেন ।সেন রাজাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তারা রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।বাংলা হতে পরিচালিত আসমুদ্রহিমাচল সেন সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকুল থেকে উত্তরভারত(কনৌজ) পর্যন্ত। সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের আদি বাকাটক(সেন)সাম্রাজ্যের কর্ণাটকে।সেনরা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু রাজধর্ম ক্ষত্রিয়বাচক পেশা বলে নিজেদেরকে ব্রহ্মক্ষত্রিয় বলে শিলালিপিতে উল্লেখ করে গেছেন।প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একাদশ শতাব্দীর অন্তিমলগ্নে পাল রাজবংশের বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে সেনদের উত্থান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ অধ্যায়। বাংলার পাল রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে বারেন্দ্র 'সামন্তচক্রের' বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেন পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেন এবং অবশেষে বাংলার পাল রাজবংশের রাজা মদনপালের রাজত্বকালে স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশ ঘটান। ভারতবর্ষের ইতিহাসে বাংলার সেন বংশীয় রাজাদের মধ্যে বীর সেন,সামন্ত সেন,হেমন্ত সেন, বিজয় সেন,সুখ সেন, বল্লাল সেন, ও লক্ষ্মণ সেন বিশিষ্ট স্থান অধিকার করছেন।বিশ্বরূপ সেন—তিনি বঙ্গের সেন বংশীয় নরপতি বল্লাল সেনের পৌত্র । লক্ষ্মণ সেনের অন্যতম পত্নী তাদাদেবী বা তাড়াদেবীর গর্ভে বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন নামে দুই পুত্র জন্মে। লক্ষ্মণ সেনের পরলোক গমনের পরে তার পুত্র মাধব সেন প্রথমে বাঙ্গালার রাজা হয়েছিলেন। তৎপরে তার ভ্রাতা কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন পর পর বাঙ্গালার রাজা হয়েছিলেন এবং এসময় রাজকুমারগণ রাজ্যসমূহের দায়িত্বভার বন্টন করেন। মাধব সেন ভ্রাতা কেশব সেনের হাতে বঙ্গ রাজ্য তুলে দিয়ে হিমালয় রাজ্যে গমন করেন এবং সেখানে রাজ্য বিস্তার করেন,উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কোটেশ্বর মন্দির গাত্রের শিলালিপিতে মাধব সেনের কীর্তি বর্ণিত আছে যে,ধর্মরক্ষার্থে দূর্গম হিমালয় রাজ্যের (অধুনা ভারতের উত্তরপ্রদেশ,হিমাচল প্রদেশ এবং নেপাল) শাসন ভার গ্রহণ করেন এবং অনেক কুলীন এবং শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যান। লক্ষণ সেনের পরেও যে গৌড়ে সেন রাজগণের আধিপত্য অক্ষুদ্র ছিল,বেঙ্গল গভর্ণমেণ্ট কর্তৃক সংগৃহীত একটি হস্ত লিখিত প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে উল্লেখ আছে,—পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ পরম সৌগত "মধুসেন” ১১৯৪ শকাব্দে (১২৭২ খ্ৰী: ) বিক্রমপুরে আধিপত্য করতেন। ‘’ কথিত আছে, ইনি তুরস্কদিগকে বারংবার পরাজিত করেছিলেন। এছাড়াও এই রাজবংশের রাজা হিসেবে সুর সেন/সূর্য সেন,নারায়ণ সেন,লক্ষণ সেনII, বল্লাল সেন II, দামোদর সেন। নাম পাওয়া গেছে।
মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০ - ৮ জুন ৬৩২; আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ), পূর্ণ নাম : মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم) হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী, (আরবি: النبي আন-নাবিয়্যু), তথা "বার্তাবাহক" (আরবি : الرسول আর-রাসুল), যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষ) মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন শিশু বয়সে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন। তিন বছর পর ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন, এবং ঘোষণা দেন "আল্লাহ্ এক" ও তার নিকট নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত, এবং ইসলামের অন্যান্য নবীদের মত তিনিও আল্লাহর প্রেরিত দূত।মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে "আল্লাহর বাণী" বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামী আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাওহিদ (আরবি: توحيد) ইসলাম ধর্মে এক আল্লাহর ধারণাকে বোঝায়। তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ৷ ইসলামি পরিভাষায় তাওহিদ হল সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সকল ইবাদাত-উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য করা, অন্য সবকিছুর উপাসনা ত্যাগ করা, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীকে তার জন্য সাব্যস্ত করা এবং দোষ ত্রুটি থেকে আল্লাহকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা।
দাভিদ এমিল দ্যুর্কেম (ফরাসি: Émile Durkheim; ১৫ এপ্রিল ১৮৫৮ – ১৫ নভেম্বর ১৯১৭) ছিলেন একজন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে একটি বিধিবদ্ধ আকাদেমিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি, মাক্স ভেবার ও কার্ল মার্ক্সকে একত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের মূল স্থপতি ও সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।আধুনিক যুগে যেখানে পূর্বতন সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনগুলো আর টিকে থাকতে পারছেনা এবং নতুন নতুন সামাজিক প্রতিষ্টান গড়ে উঠছে, সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিভাবে সামাজিক ঐক্য ও সঙ্গতি বজায় রাখা যায়, সেটাই ছিল দ্যুর্কেমের রচনার মূল লক্ষ্য। ১৮৯৫ সালে তিনি তার প্রথম উল্লেখযোগ্য সমাজবৈজ্ঞানিক গ্রন্থ সমাজের শ্রমবিভাগ রচনা করেন। দুই বছর পর তিনি সমাজবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিধিমালা পুস্তকটি প্রকাশ করেন এবং ইউরোপের প্রথম সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করে ফ্রান্সের প্রথম সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। ১৮৯৮ সালে তিনি L'Année Sociologique নামক একটি একাডেমিক জার্নাল প্রতিষ্টা করেন। দ্যুর্কেম ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টেন্ট খ্রিষ্টানদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নিয়ে সুইসাইড বা আত্মহত্যা (১৮৯৭) নামক একটি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন। এটি আধুনিক সামাজিক গবেষণার সূচনা করে এবং সামাজিক বিজ্ঞানকে মনোবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক দর্শন থেকে পৃথক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্টা করতে ভূমিকা রাখে। তার রচিত ধর্মীয় জীবনের মৌলিক গঠন (১৯১২)- এ তিনি আধুনিক ও আদিবাসী সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের তুলনা করে ধর্মের একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মূলত রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নবজাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়ে, যদিও এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। ঊনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার যা মধ্যযুগের অন্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক অঞ্চলের প্রধান অংশের সাথে দেশটির সীমানা মিলেছে, যেখানে চার হাজারেরও বেশি বছর ধরে সভ্যতা চলছে, ক্যালকোলিথিক যুগেও। এই বাংলার ইতিহাস অনেক গৌরবের এবং ত্যাগের ইতিহাস। এলাকাটির প্রারম্ভিক ইতিহাস হল ভারতীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং হিন্দু ও বৌদ্ধের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ইতিহাস। ত্রয়োদশ শতাব্দীর পরে যখন মুসলিম অভিযাত্রীরা, যেমন তুর্কী, ইরানীয়, মুঘল প্রভৃতি এদেশে এসেছিল তখন ইসলাম ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা মসজিদ এবং মাদ্রাসা নির্মাণের মাধ্যমে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করে ।।
পাকিস্তান (উর্দু: پاکِستان), সরকারিভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান (উর্দু: اِسلامی جمہوریہ پاکِستان), দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ২১,২৭,৪২,৬৩১ এর অধিক জনসংখ্যা নিয়ে এটি জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং আয়তনের দিক থেকে ৩৩তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের দক্ষিণে আরব সাগর এবং ওমান উপসাগরীয় উপকূলে ১০৪৬ কিলোমিটার (৬৫০ মাইল) উপকূল রয়েছে এবং এটি পূর্ব দিকে ভারতের দিকে, আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমে, ইরান দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীন সীমান্তে অবস্থিত। এটি উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোরের দ্বারা তাজিকিস্তান থেকে সংকীর্ণভাবে বিভক্ত এবং ওমানের সাথে সমুদ্রের সীমান্ত ভাগ করে।
সাহিত্যে বর্ণনামূলক গদ্যকে প্রবন্ধ বলা হয়।প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। এর সমার্থক শব্দগুলো হলো - সংগ্রহ, রচনা, সন্দর্ভ। প্রবন্ধের বিষয়বস্তু শৈল্পিক, কাল্পনিক, জীবনমুখী, ঐতিহাসিক কিংম্বা আত্মজীবনীমূলক হয়ে থাকে। যিনি প্রবন্ধ রচনা করেন তাকে প্রবন্ধকার বলা হয়। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়কে তুলে ধরে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়
স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম ঘটে। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হন। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তদবধি প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। এই দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে এবং অন্যান্য অফিস-আদালতে মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়। কিন্তু এটি একটি জাতীয় ছুটির দিন হওয়ার দরুন সর্বত্রই পঠনপাঠন ও কাজকর্ম বন্ধ থাকে।
সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক এবং লেখক। তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিতের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয়: Ladri di biciclette, বাইসাইকেল চোর) দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।